জয়পুরহাটে বেশী মজুরীতেও মিলছেনা শ্রমিক, বিপাকে চাষীরা
এস এম শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে আলুর পর একটু দেরীতেই রোপণ করা হয় বোরো ধান। অন্যান্য এলাকায় যখন পাকা ধান কাটাঁ শেষ পর্যায়ে, তখন এ জেলায় শুরু হয় বোরো ধান কাঁটা। বর্তমানে জয়পুরহাটে মাঠের পর মাঠ জুড়ে পড়ে আছে পাঁকা ধান। কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের পাকা ধান।
এর সাথে দেখা দিয়েছে কৃষি শ্রমিকের সংকট। ঝড়-বৃষ্টির পর বেশী দামেও মিলছেনা কৃষি শ্রমিক। পাঁকা ধান নিয়ে বিপাকে পরেছে চাষীরা। অল্প সময়ের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে না পারলে পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাবে, আবার ঝড়-বৃষ্টির সাথে শীলা বৃষ্টির কারনে পাকা ধান ঝড়ে গিয়ে ফলন কম হবে এমন শঙ্কায় দিন যাপন করছেন চাষীরা।
চাষীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে কম-বেশী ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছেই। জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের পাঁকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ জমির ধান মাটিতে নুয়ে গেছে। ধান গাছ পানির নিচে ডুবে পঁচে যাচ্ছে। অনেকেই শ্রমিক না পেয়ে ধানের আশা ছেড়ে দিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৬৯ হাজার ৭শ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জমিতে উচ্চফলনশীল (উফশী) এবং হাইব্রিড জাতের ধান হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনের জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ১২০ হেক্টর জমিতে কম চাষ হয়েছে। সে হিসেবে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ মে.টন। এ পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ জমির ধান কাঁটা-মাড়াই হয়েছে। এখনও ৫৫ শতাংশ ধান মাঠেই আছে।
কৃষকরা জানান, এ এলাকায় আলু পর ধান রোপণ করা হয়। সে কারণে ধান পাকতে একটু দেরি হয়। এবারও ধান পাকতে দেরি হয়েছে। যে সময় মাঠের পর মাঠ জুড়ে ধান পাঁকে, ঠিক সেই সময়ই শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষি শ্রমিকের সংকটের কারণে ধান কাঁটা যাচ্ছে না। বেশী টাকাতেও শ্রমিক মিলছেনা। গত কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টির কারণে অনেকের ধান বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। জমানো পানি অন্যত্র সরানোর কোনো উপায়ও নেই। আজ (৯জুন) রোববার সকালে জেলার কালাই পৌরশহরের নয়াপাড়া মাঠে গিয়ে কথা কৃষক সোহেল মিয়ার সাথে। তিনি জানান, মাঠের পর মাঠ জুড়ে ক্ষেতের ধান পেকে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। কয়েকদিন ধরে ঝড়-বৃষ্টিও হচ্ছে।
এ কারণে প্রায় সব জমিতেই পানি জুমে গেছে। সরানোর কোনো উপায় নেই। সবাই ধান কাটতে শ্রমিক খুঁজছে। এ কারনে শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। গত বছর একবিঘা (৩৩ শতক) জমির ধান কাটতে শ্রমিকের মজুরি দিতে হয়েছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা। এবার সেই একবিঘার ধান কাটতে মজুরি দিতে হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেকেই জমির ধান ছেড়ে যাচ্ছে। কারন পানিতে ডুবে অনেকের ধান পঁচে গেছে।
কালাই পৌরশহরের দোকানদারপাড়া মহল্লার কৃষক জয়েন উদ্দিন, পাঁচগ্রামের কৃষক রেজাউল করিম, ক্ষেতলাল উপজেলার মুন্দাইল গ্রামের কৃষক জেলহাজসহ বেশকয়েকজন কৃষক জানান, এবার ধানকাঁটা শ্রমিকের খুবই সংকট। এর আগে কখনও শ্রমিকের সংকট হয়নি। যদিও বাহির থেকে শ্রমিকের দল আসছে, তাদের নিয়ে গৃহস্থদের মধ্যে টানাহেচঁড়া শুরু হয়েছে। জমানো একহাটু পানি সাথে বজ্রপাতের আতঙ্কে শ্রমিক ও কৃষক উভয়ই মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে মাঠের ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাগইল গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, পাকা ধান ঘরে তুলতে কৃষকরা পাগল হয়ে গেছে। বেশী দামেও মিলছেনা শ্রমিক। যাও মিলছে গত বছরের চাইতে এবার দ্বিগুন দাম দিতে হচ্ছে তাদের। এমনিতেই ধানের দাম কম। তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবার চার বিঘা ধান কেটেছি ২০ হাজার টাকায় অথচ গত বছর এই চার বিঘার ধান কেটেছিলাম ১০ হাজার টাকায়। আবার ধানের দামও কম। এই যদি হয় তাহলে আমরা কৃষকরা যাবো কোথায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, বৈরী আবাওহায়ার কারণে পুরোদমে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। আবওহায়া ভাল থাকলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, আগামীতে শ্রমিকের সংকট আরও দেখা দিবে। কারণ এ পেশায় নতুন করে আর কোন লোক আসবে না। আমরা কৃষকদের ধান কাটার যন্ত্রপাতী ভূর্তকিতে নিতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি কৃষক এসব যন্ত্রপাতী সহজেই ক্রয় করবেন। তাহলেই এ সংকট থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে। অল্প সময়েই ফসল ঘরে ওঠবে।