বিশ্বে বায়ুদূষণে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের অকালমৃত্যু : গবেষণা

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৪; সময়: ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ |
বিশ্বে বায়ুদূষণে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের অকালমৃত্যু : গবেষণা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মানবসৃষ্ট নির্গমন ও দাবানলের মতো অন্যান্য উৎস থেকে ছড়িয়ে পড়া দূষণে বিশ্ব জুড়ে ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের অকালমৃত্যু ঘটেছে। সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির (এনটিইউ) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, এল-নিনো ও ভারত মহাসাগরের ডাইপোলের মতো আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বাতাসে দূষণের ঘনত্বকে তীব্র করে তুলছে। এর ফলে দূষণকারী অন্যান্য উপাদানের ওপর এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে।

গবেষকরা বলেছেন, বস্তুকণা পিএম-২.৫-এর ক্ষুদ্র কণাগুলো শ্বাসের সঙ্গে মানবদেহে প্রবেশ করছে। এই বস্তুকণা রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করার মতো যথেষ্ট ছোট হওয়ায় তা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বস্তুকণা পিএম-২.৫ হলো বাতাসে থাকা সব ধরনের কঠিন ও তরল কণার সমষ্টি, যার বেশির ভাগই বিপজ্জনক। মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন- প্রাণঘাতী ক্যানসার ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে পিএম-২.৫।

এছাড়া বায়ুদূষণকারী আরেক পদার্থ এনও২ প্রধানত পুরোনো যানবাহন, বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প স্থাপনা, আবাসিক এলাকায় রান্না, দাবদাহ ও জ্বালানি পোড়ানোর কারণে তৈরি হয়।

ডব্লিউএইচও বায়ুমান নির্দেশক গাইডলাইন বলছে, পিএম২.৫ নামে পরিচিত ছোট ও বিপজ্জনক বায়ুকণার গড় বার্ষিক ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে এর চেয়েও কম ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।

কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের অনেক শহরের বাতাসে এসব কণার মারাত্মক উপস্থিতি রয়েছে। এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল সাময়িকীতে প্রকাশিত সমীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়টি বলেছে, ১৯৮০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্ব জুড়ে প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যুর সঙ্গে ঐ সূক্ষ্ম কণার সম্পর্ক রয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট, ফুসফুসের সমস্যা, স্ট্রোক ও ক্যানসারসহ যেসব রোগের বা অবস্থার চিকিৎসা আছে কিংবা প্রতিরোধ করা যেতে পারে, সেসব রোগে আক্রান্ত মানুষ গড় আয়ুর চেয়ে কম বয়সে মারা যাচ্ছেন।

আবহাওয়ার এসব বৈরী ধরন ১৪ শতাংশ মৃত্যু বাড়িয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এনটিইউ বলেছে, দুষণসংশ্লিষ্ট ঘটনায় ঐ সময়ের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এশিয়ায়।

১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এশিয়ায় এসব ঘটনায় ৯ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষের অকালমৃত্যুতে ভূমিকা রেখেছে পিএম-২.৫ দূষণ; যাদের বেশির ভাগই মারা গেছেন চীন ও ভারতে।

এছাড়া বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, জাপানেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে। এই চার দেশে একই সময়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধু বায়ুদুষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টির বায়ুর গুণমান ও জলবায়ুর ওপর চালানো এই গবেষণাকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তৃত ও বৃহৎ পরিসরের বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কারণ এই গবেষণায় এনটিইউর গবেষকরা স্বাস্থ্যের ওপর বস্তুকণা২.৫ এর বিশাল প্রভাবের চিত্র হাজির করতে প্রায় ৪০ বছরের ডেটা ব্যবহার করেছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে