পত্নীতলায় গ্রামীণ সড়কে ২০ বছরেও লাগেনি  ইটপাথরের ছোঁয়া, জনদুর্ভোগ চরমে 

প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৪; সময়: ১০:০৪ অপরাহ্ণ |
পত্নীতলায় গ্রামীণ সড়কে ২০ বছরেও লাগেনি  ইটপাথরের ছোঁয়া, জনদুর্ভোগ চরমে 

মাসুদ রানা,পত্নীতলা (নওগাঁ) : নওগাঁর পত্নীতলা ও মহাদেবপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাটাবাড়ি মোড় হতে বিলছাড়া স্কুল মাঠ পর্যন্ত ৩ কিঃমিঃ গ্রামীণ মেঠো রাস্তার বেহাল দশা,মাটির রাস্তা তৈরীর ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনোও ইট পাথরের ছোঁয়া লাগেনি এই সড়কে। আশপাশের সকল গ্রামীণ সড়কগুলো পাকা হলেও অজানা কারণে এই রাস্তার উন্নয়ন হয়নি। খড়া মওসুমে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষা মওসুমে ভোগান্তি চরমে।

দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী  দুটি ইউনিয়নের ৮/১০ টি গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিনিয়তই দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। এ ছাড়াও ১টি উচ্চ বিদ্যালয় ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাগ্রহীতারা এই রাস্তায় চলাচল করে বর্ষা মওসুমে রাস্তার কাঁদায় অনেকে স্কুলে যেতে পারেনা ফলে শিক্ষা ব্যহত হয়, এমন জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ মেঠো পথে দ্রুত ইট পাথরের ছোঁয়া চান স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে জানা যায় প্রতিনিয়ত শত শত পথচারীরা এই গ্রামীণ সড়ক দিয়ে  পত্নীতলা ও মহাদেবপুর উপজেলা শহরে যাতায়াত করে থাকেন।  রাস্তার  কারণে যাতায়াতের জন্য কোন যানবাহন চলাচল করতে চান না আর যানবাহন তো দুরের কথা পায়ে হেটে চলাই মুশকিল হয়ে পরে।  হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে রাতে কেউ এই অঞ্চলে আসতে পারে না। অপরদিকে ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বিখ্যাত এই অঞ্চলের কৃষকরা চলাচলের জন্য কোন আধুনিক সড়ক না থাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে  নিয়ে যেতে খরচ অনেক বেশি হওয়ার কারণে নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর। দেশের অনেক গ্রাম এখন শহরের সুবিধা পাচ্ছে, এমন দুর্ভোগ থেকে দ্রুত মুক্তি চায় এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।

বিলছাড়া গ্রামের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসা ডা. হারুন অর রশিদ আক্ষেপ করে বলেন এই অঞ্চলে আমরা যারা বসবাস করি তারা মনে হয় ছিটমহলের বাসিন্দা। যার কারণে আমরা স্বাধীন ভূমিতে থেকেও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। বর্ষা মৌসুমে এই মেঠোপথ দিয়ে চলাচল করতে কি পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হয় তা আমরা ছাড়া কেউ বুঝবে না।  পদ্মপুকুর গ্রামের বাসিন্দা ইসরাফিল ইসলাম বলেন আমাদের মহাদেবপুরর এমপি মহোদয়  অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে হয়নি এখন মন্ত্রী মহোদয় কি করবেন , মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমাদের আকুল আবেদন, অতি শীঘ্রই যেন এই রাস্তাটি সংস্কার করে এই জনদুর্ভোগ থেকে উদ্ধার করে  আমরা যেন  চলাচলের উপযোগী একটা রাস্তা পাই, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এই রাস্তাটা আমাদের আশু প্রয়োজন।

রাস্তায় চলাচলকারী একাধিক ব্যক্তি বলেন, আধুনিক চলাচল ব্যবস্থার অভাবে আমরা এই অঞ্চলের মানুষরা এখনো আদিম যুগে বসবাস করছি। বাংলাদেশের মানুষ এখন ডিজিটাল পেরিয়ে স্মার্ট নাগরিক সেবা ভোগ করছে আর আমরা এই এলাকার মানুষ যেন সেই ৮০, ৯০ দশকের এনালগ যুগেই পড়ে আছে। এই মেঠোপথে কোন দিন কোন কর্মকর্তারা এসে খোঁজ নেননি। ভোটের সময় এলেই জনপ্রতিনিধি আর নেতারা এসে  মাপযোগ করে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন ভোট পার হলে ভুলে যান, ভালো রাস্তা না থাকার কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভালো জায়গায়  বিয়ে হয় না। বর -কনে দেখতে এসে রাস্তা দেখে সমন্ধ ভেঙে যায়, মনে হয় আমরা সৃষ্টিকর্তার অভিশপ্ত মানুষ হয়ে এই অঞ্চলে জন্ম নিয়েছি। জানিনা শেখ হাসিনার ডিজিটাল আমলে আমাদের এই মেঠোপথে ইট পাথরের ছোঁয়া স্পর্শ করবে কিনা।

বিলছাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র পদ্মপুকুর গ্রামের জাহেদ, ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী  রাহিমাপুর  গ্রামের রাবেয়া  ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সীমা সহ অনেক শিক্ষার্থী জানান বর্ষার সময় এই রাস্তায় যেতে খুব কষ্ট হয় কাদায় হেটে যেতে পারিনা পা আটকে যায়  কাঁদার মধ্যে বইয়ের ব্যাগ পড়ে যায় এ জন্য অনেক সময় স্কুল মিস হয়ে যায় রাস্তাটি পাকা হলে আমরা কোনদিনও  স্কুল গাবি করবো না।

মহাদেবপুর  উপজেলা প্রকৌশলী সৈকত দাস বলেন মহাদেবপুরের অংশের দেড় কিলোমিটার রাস্তার জন্য কাগজপত্র নওগাঁ পাঠানো হয়েছে অনুমোদন হলে টেন্ডার হবে।

পত্নীতলা উপজেলা প্রকৌশলী  ইমতিয়াজ জাহিরুল বলেন, ওই রাস্তাটা সামনে টেন্ডারে যাবে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, প্রকল্প অনুমোদন হলে আমাদের সাইটটা কাজ শুরু হবে।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে