সুখী জীবনের ধর্মীয় সংজ্ঞা কী

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৪; সময়: ২:৩৪ অপরাহ্ণ |
খবর > ধর্ম
সুখী জীবনের ধর্মীয় সংজ্ঞা কী

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সুখ চক্রের জন্ম-মৃত্যু যখন লিখতে বসি, তখনো গভীর মনোযোগের সঙ্গে দার্শনিক ভঙ্গিতে ভাবছিলাম। সুখ বলে কি আসলেই কিছু আছে? কিসে মানুষের প্রকৃত সুখ? ক্যারিয়ার, সফলতা বা অর্থবৃত্ত, শরীরিক সুস্থ, নারী, বিনোদন। কিন্তু না, সুখের জন্য এগুলো যথেষ্ট নয়।

যদি তাই হতো, তবে প্রাচীনকালের রাজা-বাদশাহরা, বর্তমানে ব্যবসায় সফল বিল গেটস, ইলন মাস্ক, ফুটবল তারকা মেসি, সুপার হিরো শাহরুখ খান তাদের কাছে সুখ আরাধ্যই থাকত না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদের উত্তম প্রতিদান দেব।’ (সূরা নাহাল আয়াত : ৯৭)।

কিসে সুখ? হার্ভার্ডের ৮৫ বছরের গবেষণা বলছে, ‘সামাজিক সুস্থতা’। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সমাজ মিলিয়ে সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু পরশ্রীকাতরতা, পরনিন্দা, প্রতিশোধপরায়ণতায় সামাজিক সুস্থতা কল্পনা করা যায়? দেশে দেশে আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, চীনে উইঘুর, ইউক্রেনে মানবতা ভূলুণ্ঠিত। ঘরে ঘরে মা-বোনেরা শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার, অলিতে গলিতে অবাধে মাদকসেবন, অপরাজনীতি আর চারদিকে দুর্নীতির ছড়াছড়িতে সমাজের সুস্থতা নির্বাসনে।

জাহিলিয়াতের ঘোর অমানিশায় ইসলাম জ্বালিয়েছে আলো। মানুষকে দেখিয়েছে উন্নত ও সুস্থ সমাজের স্বপ্ন। কিন্তু অনেক দামে পাওয়া দ্বীন অল্প দামে বিক্রি করে দিয়েছি। ভোগেই সুখ সস্তা কথায় গা ভাসিয়ে; জীবনে চাহিদার তালিকা করেছে লাগাম ছাড়া। তবে ইসলামই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। রাসূল বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজনমাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সে-ই সফলকাম হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ : ৪১৩৮)।

কী দিয়ে পূর্ণ করা যায় হৃদয়ের গর্ত? পৃথিবীর রথী-মহারথীদের ইহকাল গত হয়েছে শূন্য গর্তেই। দার্শনিকরা মানুষকে নিয়ে চিন্তামগ্ন থাকতেন, তবুও সক্রেটিস থেকে শোপেনহায়ার কেউ সুখী ছিলেন না। মৃত্যুর পর মাদার তেরেসার ডায়রির পাতা থেকে জানা যায়, তিনিও পুরোপুরি সুখী হতে পারেননি। রানী ক্লিওপেট্রা সাপের ঝাঁপিতে হাত দিয়ে আত্মহত্যা করেন। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেন, জীবনে একটি দিনেও সুখের মুখ দেখেননি।

বীর হিসাবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি, ধনসম্পদের অভাব ছিল না। তবুও হৃদয়ে কেন এ অপূর্ণতা?’ একদিন রাসূল (সা.) আবু জর (রা.)কে বলেন, আবু জর, তুমি কি সম্পদের প্রাচুর্যকেই সচ্ছলতা মনে করো? আবু জর (রা.) বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। রাসূল (সা.) এরপর বলেন, তাহলে তুমি সম্পদের স্বল্পতাকে দারিদ্র্য মনে করো? তিনি বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। রাসূল (সা.) বলেন, আসলে সচ্ছলতা তো হৃদয়ের সচ্ছলতাই, আর হৃদয়ের দারিদ্র্যই আসল দারিদ্র্য। (ইবনে হিব্বান : ৬৮৫)।

আমাদের পার্থিব জীবনে সম্পদ ও সময় সীমিত, কিন্তু অসীম চাহিদা। আর আল্লাহর সব নেয়ামত ভোগ করার পরও অকৃতজ্ঞতাবোধ জীবনকে অশান্ত ও হতাশার আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তো তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং ওতে তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থাও করেছি। তোমরা খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।’ (সূরা আরাফ : ১০)। ইবাদতের মাধ্যমে আত্মা অহমিকামুক্ত ও নির্মল হয়। যার ফলে মানুষের জীবনে রহমতের বৃষ্টির মতো সুখ নেমে আসে। হে আল্লাহ! আমাদের সবার জীবন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে দিন।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে