অতল জলে জলাঞ্জলী পর্ব-৩ শারদ সন্ধ্যায়

প্রকাশিত: ১০-১০-২০২৪, সময়: ১০:৫৩ |

এ কে সরকার শাওন : শরৎকালের আকাশ স্বচ্ছ ও নির্মল। বিশুদ্ধ বিমল বায়ু। হলের তিন তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে পরিষ্কার আকাশের হাতছানি দেখতে পাচ্ছে জগলু। সে “শারদ সন্ধ্যায়” কবিতা থেকে চার চরণ আওড়াইতে লাগলো…

শরৎ আকাশ রম্য ক্যানভাস
স্বচ্ছ রহস্যময় নির্মল;
মেঘের পরে মেঘ উড়ছে
জগলুর চিত্ত বিহ্ববল!

সে চোখ ও মুখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে ছেড়ে দিলো। তিন তলা থেকে নীচে নেমে সবুজ ঘাসে বসলো পায়ের উপর পা ছড়িয়ে। তার মন বলে উঠলো কী মিষ্টি বিকেল! সে ভাবলো বাবা এখন কী করছে! বাড়ীতে না বাজারে। গাঁয়ের বন্ধুরা নিশ্চয়ই মাঠে হৈচৈ করছে। এমন সময় তার পাশের কক্ষের বন্ধু পরিমল এসে পাশে বসলো। পরিমলের বাড়ী ঝালকাঠির বাসন্ডায়। সে পদার্থ বিদ্যায় পড়ে। ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে ওর সাথে পরিচয়। বলতে গেলে পরিমল তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বন্ধু।

পরিমলঃ কী ভাবছিস?
জগলুঃ বাড়ীর কথা, বাবার কথা।
পরিমলঃ ভাব ভাব, এখনই বাড়ীর কথা ভেবে নে। ক’দিন পরে বন্ধু-বান্ধবী বেড়ে গেলে আর ভাবার সময় পাবি না।
জগলুঃ তাই?

পরিমলঃ কথাটা আমার কথা নয় আমাদের বড় ভাই নিতাইদা’র কথা। খুব রসিক মানুষ। তার মনটা সব সময় রসে টুইটুম্বর থাকে। বন্ধু, আমি তিনতলা থেকে চারতলা পদোন্নতি নিবো।
জগলুঃ কেন?

পরিমলঃ ওখানেই তো মানিকগঞ্জের নিতাই দা আছে। উনারও বিষয় পদার্থ বিজ্ঞান। তাই আমার পড়াশোনার একটু সুবিধা হবে। উঠি বন্ধু, টুকিটাকি চত্বরে যেতে হবে। কিছু কেনাকাটা আছে।
ওহ, তোর একটা চিঠি এসেছে। এই মাত্র পত্রবাহক দিয়ে গেলো। এই নে,
চিঠিটা জগলুর হাতে দিয়ে পরিমল চলে গেলো।

জগলু বুঝতে পারলো এটা বাবার চিঠি। খুলে পড়তে যাবে এমন সময় দু’টি ছেলে কাছে এসে ধপাস করে হাত পিছনে ঠেস দিয়ে ঘাসে বসে হেসে বললো
-দুঃখিত, বিরক্ত করলাম। আমাকে চিনতে পেরেছো?
জগলুঃ না তো!
জিল্লুরঃ তা চিনবে কোন দুঃখে? আমি তো রোনাল্ড রেগনও না আবার তোমার মতো অত ভালো ছাত্রও না!
জগলুঃ কে তুমি ভাই?
জিল্লুরঃ আমি জিল্লুর, ওর নাম কবীর, আইনের ছাত্র। আমি তোমার নিখাঁদ সতীর্থ?
জগলুঃ কবীরকে তো চিনি। তার মানে তুমিও গণিতে পড়?
জিল্লুরঃ হুম, ও তোমার ছাত্রাবাসের নীচতলায় থাকে আর আমি ঐ লতিফ ছাত্রাবাসে থাকি। আমার ইচ্ছে ছিলো কলা অনুষদে পড়বো। বাবার চাপে গণিতে পড়তে হলো। বাবা বলেন গণিতের চাহিদা থাকে সকল জায়গায় সবসময়। কিন্তু গণিতের সমাধান তো বাবা করেন না! আমাকেই করতে হয়।

জগলুঃ হুম, বাবা আর কতো সমস্যার সমাধান করবেন বলো? তিনি তো সমস্যার সমাধান করতে করতে তোমাকে এই পর্যন্ত এনেছেন। তা তোমার বাড়ী কোথায়?
জিল্লুরঃ আমার বাড়ি নাটোর, ওর টাঙ্গাইল। তোমার?
জগলুঃ কুমিল্লা
জিল্লুরঃ এখন উঠি বন্ধু। কাল শ্রেণিতে দেখা হবে।
জগলু ও কবীরের সাথে করমর্দন করে জিল্লুর চলে গেলো। একটু এগিয়ে হাসি দিয়ে হাত তুলে বিদায় জানালো। কবীর বললো
-দারুণ মিশুক ছেলে। সহজেই কাউকে আপন করে নেয়। যেদিন ভর্তি হতে টাঙ্গাইল থেকে আসি। সে নাটোর থেকে আমার বাসে এবং আমার সাথে বসেই এসেছিলো।

জগলুঃ এক বছর হতে চললো আমি ওকে চিনি না! এটা কোন কথা হলো!
কবীরঃ ও হলে খুব কম থাকে। বালিয়াপুকুরে ওর ফুফু আছে সেখানে ও থাকে। আবার বাড়ী কাছে হওয়াতে দুই-তিন দিন পর বাড়ী যায়। শ্রেণিতে অনুপস্থিত থাকার জন্য তোমাদের জাফর মহাশয় না-কি ওকে কড়াভাবে সতর্ক করেছে। এখন যদি ঠিক হয়। তাছাড়া তুমি তো ডানে বামে তাকাও না। নীজের পড়া ও ছাত্র-ছাত্রী পড়ানোর মাঝেই সীমিত থাকো। কদাচিৎ কক্ষ থেকে বের হও। তাই ওর সম্পর্কে একটু ফাঁক হয়েছে।
জগলুঃ তুমি ঠিকই বলেছো।

কবীরঃ তোমার এক কক্ষ সংগী না-কি আজ ছাত্রাবাস ছেড়েছেন।
জগলুঃ হুম একজন আজ সকালেই চলে গেছেন। তিনিও নাটোরের।

কবীরঃ সেইজন্যই তো জিল্লুর বিষয়টি জানতো। আমরা তোমার কক্ষে গিয়ে দেখি তুমি নাই, তাই এখানে এসেছি। তাহলে আমি চলে আসবো? নীচ তলায় সমন্বয় করতে পারছি না বন্ধু।
জগলুঃ তুমি এক্ষুনি আমার কক্ষে চলে আসবে।
কবীরঃ অন্যরা?
জগলুঃ অন্যদের বিষয়টি আমি দেখবো।
চলো যাওয়া যাক।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো বলে ওরা কক্ষের দিকে চলে গেল।

উপরে