কোন পথে জাতীয় পার্টি?

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৪; সময়: ১২:২৫ অপরাহ্ণ |
কোন পথে জাতীয় পার্টি?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে জাতীয় পার্টি৷ দলটি শেষপর্যন্ত রাজনীতি করতে পারবে কি-না, তা নিয়ে দলের নেতারা চিন্তিত। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে, দেশে এখনও কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি৷

কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ও শ্রমিক আন্দোলন ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের’ সহযোগী হিসাবে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে৷ আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমরা মনে করি নিষিদ্ধ হবে বিচারের মাধ্যমে৷ তবে তার আগে আমরা জাতীয় পার্টির কার্যক্রম স্থগিত করার দাবি জানিয়েছি সরকারের কাছে৷

ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা চালানো হয়৷ এসময় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়৷ প্রথম দফায় জাতীয় পার্টির লোকজন ওই হামলা প্রতিরোধ করতে পারলেও রাত সাড়ে ৮টার দিকে দুই জন সমন্বয়ক ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদের নিয়ে সেখানে যান৷

দ্বিতীয় দফায় হামলা ও আগুনের সময় ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকেও সেখানে আগুন নেভাতে দেয়া হয়নি৷ আর পুলিশ ছিল পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়৷ আর শনিবার জাতীয় পার্টি কাকরাইল এলাকায় সমাবেশ ডেকেও তা প্রত্যাহার করে পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে৷ পুলিশ শনিবার ওই এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে৷ কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ও শ্রমিক আন্দোলন নগরীর অন্য এলাকায় জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ করেছে৷

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, হামলাকে আমরা সমর্থন করি না৷ তবে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে যে সমন্বয়কেরা গেছেন, সেটা আমাদের আন্দোলনেরই অংশ৷ তারা স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল৷ তাই ঘেরাও করা আন্দোলনেরই অংশ৷ আমরা আগুন বা হামলা সমর্থন করি না৷ তবে ওই হামলা ও আগুনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই৷ কারণ তারা গেছে রাত সাড়ে ৮টার পরে৷ তার আগেই হামলা ও আগুনের ঘটনা ঘটেছে৷

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে কি-না, তা দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে৷ তাদের বিচার হবে৷ তবে বিচার শেষ হওয়ার আগে আমরা তাদের দলের কার্যক্রম স্থগিত করার আবেদন জানিয়েছি সরকারের কাছে৷

আর প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার জানান, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেই৷ কোনো দলকে নিষিদ্ধও করা হয়নি৷ একটি ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷

রাজনৈতিক দলগুলো কী বলছে?

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-এর সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জাতীয় পার্টি একটি স্বৈরাচারী দল৷ তাদের জন্ম স্বৈরাচারী কায়দায়৷ আর তারা স্বৈরাচারকে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে৷ এই দলটি সম্পর্কে দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা রাজনীতি করতে পারবে কী পারবে না৷

তিনি আরও বলেন, আর আমাদের সংবিধানে সভা-সমাবেশ করার অধিকার দেওয়া আছে৷ জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে৷ তার মানে এই নয় যে, কোনো একটি দলকে নিষিদ্ধ করা হবে বা তার রাজনীতি করার অধিকার নেই৷

আর জাতীয় পার্টি অফিসে হামলা ও আগুন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা তো একটা ফ্যাসিবাদী আক্রমণ৷ যে ঘোষণা করে, ঘটা করে একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে আক্রমণ এবং আগুন দেয়া হয়েছে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ আমরা মনে করি, আমরা যে ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি এর মাধ্যমে সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷

গণ অধিকার পরিষদের প্রধান নুরুল হক নুর বলেন, আমরা কোনো ধরনের হামলা, সহিংসতা ও মব জাস্টিসকে সমর্থন করি না৷ আমরা মনে করি, এখন একটা সরকার আছে৷ সেই অবস্থায় যদি এরকম করা হয় তাহলে দেশে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা হবে৷ আর জাতীয় পার্টি অফিসে কারা হামলা করেছে, নিজেরাই করেছে কি-না তার তদন্ত হওয়া দরকার৷ তবে যারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর এবং সহযোগী ছিলো তাদের নিষিদ্ধের দাবি জানাই আমরা৷

এদিকে, ঢাকায় এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বিএনপি৷ দেশে অযথা ইস্যু তৈরি করে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে৷ বাংলাদেশকে ঘিরে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে৷ এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশের জনগণকে সজাগ থাকতে হবে৷

আর কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ভাঙচুর থেকে বিরত থাকতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সব দলকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷

কী ভাবছে জাতীয় পার্টি?

জাতীয় পার্টি ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে দাওয়াত পেলেও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কোনো সংলাপেই তাদের ডাকা হয়নি৷ আওয়ামী লীগের সহযোগী ১৩ দলও ডাক পায়নি৷ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল৷

কয়েকদিন আগে রংপুরে দুই সমন্বয়কের সফরের সময় প্রতিরোধের ডাক দেয় জাতীয় পার্টি৷ এরপর তারা ঢাকায় শনিবারের সমাবেশের কর্মসূচি দিলে বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় পার্টি অফিসে হামলা ও আগুনের ঘটনা ঘটে৷ তারপরও তারা শনিবার সমাবেশের ব্যাপারে অনড় ছিল৷ কিন্তু পুলিশের নিষেধাজ্ঞার পর তারা সমাবেশ বাতিল করে৷

এ প্রসঙ্গে আইনের প্রতি শ্রদ্ধার কথা বললেও আসলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা৷ তারা বলেন, হামলার প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখে তারা পরের অবস্থান নেবেন৷

জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পটোয়ারী বলেন, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি, এই কারণে আমাদের নিষিদ্ধ করা হবে ছাত্রদের দাবির মুখে তা হতে পারে না৷ সংবিধান এবং আইনে কারা সংগঠন করতে পারবে এবং দল করতে পারবে তা স্পষ্ট বলা আছে৷ সন্ত্রাসী কাজের জন্য, জঙ্গি তৎপরতার জন্য নিষিদ্ধ করা যায়৷ জাতীয় পার্টি কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয়৷

তিনি বলেন, আমাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলার সময় পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিরোধে যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, তা রাখতে তারা ব্যর্থ হয়েছে৷ সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল৷ মামলা করার জন্য আমাদের লোক গেছে। কিন্তু এখনও পুলিশ মামলা নেয়নি৷

তিনি আরাও বলেন, এখানে ঘোষণা দিয়ে হামলা করা হয়েছে৷ সুতরাং কারা হামলা করেছে তা স্পষ্ট৷ সরকার চাইলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে৷

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জাতীয় পার্টি তার গণতান্ত্রিক রাজনীতি অব্যাহত রাখবে৷ঘোষণা দিয়ে হামলা, রাজনীতি নিষিদ্ধ করা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে৷ কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না৷

সূত্র- ডয়েচে ভেলে

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে