স্ট্রোকের লক্ষণ চেনাবে যে টেস্ট, কমবে মৃত্যু ঝুঁকিও

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৪; সময়: ২:৫৬ অপরাহ্ণ |
স্ট্রোকের লক্ষণ চেনাবে যে টেস্ট, কমবে মৃত্যু ঝুঁকিও

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ব্রেন স্ট্রোক! আজকের দিনে অল্পবয়সীদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেড়েছে। যার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। তবে আধুনিক চিকিৎসা এবং উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় এখন স্ট্রোকের ঝুঁকি এবং প্রাণহানির আশঙ্কা অনেকটাই কমানো সম্ভব বলে জানান ভারতের মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স বিভাগের প্রধান ও ডিরেক্টর ডা. লক্ষ্মীনারায়ণ ত্রিপাঠী।

স্ট্রোক এমন একটা সমস্যা যা প্রায় সবক্ষেত্রেই প্রাণসংশয় ডেকে আনে। ব্রেন স্ট্রোকের পর হাতে সময় প্রায় থাকে না। যেটুকু সময় পাওয়া যায় তার মধ্যেই উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে পরিস্থিতি খুবই জটিল হয়। সমীক্ষার তথ্য, দেশে ১০-১৫ শতাংশ স্ট্রোক হয় ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে। যত দিন যাচ্ছে সংখ্যাটা বাড়ছে।

ব্রেন অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের হয়। খুব বেশি ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্রেনের রক্তনালী বন্ধ হয়ে স্ট্রোক হয় যাকে বলা হয় অক্লুসিভ স্ট্রোক (Occlusive strokes)। আর কারও কারও ক্ষেত্রে ব্রেনের রক্তনালী ফেটে ক্লট হয়ে যায়। এটা হেমারেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic stroke)। এই দুধরনের স্ট্রোকই এখন বয়স্কদের পাশাপাশি অল্পবয়সীদের মধ্যে বেড়েছে। কিছু বছর আগেও স্ট্রোক সাধারণত ৫০-৬০ বছর বয়েসীদের মাঝে দেখা যেত, এখন কমবয়সীদের মধ্যেও শোনা যাচ্ছে স্ট্রোকের ঘটনা। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। তবে এ অসুখের প্রথম ঔষধ হচ্ছে শুরুতেই সঠিক চিকিৎসা করা।

কেন বাড়ছে স্ট্রোক?
সাধারণত স্ট্রোকের কারণগুলি হল ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া, ধূমপান, ওবেসিটি বা অতিরিক্ত মোটা, এক্সারসাইজ না করা, ব্যাল্যান্স ডায়েট না করা। বর্তমানে কমবয়সীদের মধ্যে স্ট্রোক বেড়েছে তার অন্যতম কারণ হল লাইফস্টাইল পরিবর্তন। এখন সবাই খুব অল্পবয়স থেকেই নানা রকম চিন্তায় থাকে, সেটা মাথার উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। সেই স্ট্রেস থেকেই বর্তমানে চাপ বাড়তে থাকে। এছাড়া বাইরের খাবার খেয়ে শরীরে মেদ জমে যায় যা থেকেও সমস্যা শুরু হয়। ডায়াবেটিস, ধূমপান এগুলো সবই ব্রেন স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়াচ্ছে অল্পবয়সীদের মধ্যে।

প্রথমেই করণীয়: স্ট্রোকের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার জন্য FAST টেস্ট একটি সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যা স্ট্রোকের লক্ষণ দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য করে। FAST শব্দটি চারটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ:
F– Face Drooping (মুখ বেঁকে যাওয়া) স্ট্রোকের সময় একজন ব্যক্তির মুখের একটি অংশ ঝুলে যেতে পারে। হাসার সময় মুখের এক দিক যদি ঝুলে যায় বা মুখের কোনো এক দিক স্থির থাকে, তাহলে সেটি স্ট্রোকের একটি সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে।

A– Arm Weakness (হাতের দুর্বলতা) স্ট্রোকের কারণে হাত বা বাহুর এক দিক দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি ব্যক্তিকে উভয় হাত ওঠাতে বলা হয় এবং দেখা যায় একটি হাত নেমে যাচ্ছে বা শক্তি ধরে রাখতে পারছে না, তাহলে এটি স্ট্রোকের ইঙ্গিত হতে পারে।

S– Speech Difficulty (কথা বলার সমস্যা) স্ট্রোকের সময় ব্যক্তির কথা অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি কথা বলা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। যদি কথা বলায় সমস্যার সম্মুখীন হন বা বাক্য গঠন করতে না পারেন, তাহলে এটি স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।

T– Time to Call Emergency (জরুরি সাহায্য নেয়া) স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাড়াতাড়ি চিকিৎসা পেলে মস্তিষ্কের ক্ষতি কম হয় এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। স্ট্রোকের FAST টেস্ট করা সহজ, এবং দ্রুততার সঙ্গে লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে পারলে জীবন বাঁচানো সম্ভব।

উন্নত চিকিৎসা: বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতাল স্ট্রোকের তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। কারণ, ব্রেন স্ট্রোক এমন একটা অসুখ সে ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা খুব জরুরি। স্ট্রোকের পর প্রথম তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

এছাড়া স্ট্রোকের রোগীকে চিকিৎসা করার জন্য নিউরোলজিস্টের পাশাপাশি বিশেষ চিকিৎসকের টিম প্রয়োজন। এখন হাসপাতালে স্ট্রোক টিম তৈরি করা হয়েছে। যেখানে নিউরোলজিস্ট ছাড়াও নিউরোসার্জন, ইন্টারভেনশনিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট সকলেই থাকেন। এই টিম প্রথমেই একজন স্ট্রোকের রোগীকে সর্বোপরি পর্যবেক্ষণ করেন। FAST টেস্ট করে প্রথমেই বোঝেন স্ট্রোকের মাত্রা। তার পর সেই মতো চিকিৎসা এগোতে থাকে।

প্রথমেই সিটি স্ক্যান করে দেখা দরকার রোগীর কী ধরনের স্ট্রোক হয়েছে। সেই মতো ওষুধ বা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে ওষুধ দ্বারাও মস্তিষ্কের ক্লট খুলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। যেখানে মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে অপারেশন করে রোগীকে সুস্থ করা হয়। বর্তমানে ক্যাথেটার ব্যবহার করে উন্নত পদ্ধতিতে অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে। রোগী সুস্থ হয়ে উঠলে তার পর ফিজিওথেরাপি, নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন করে রোগীর হাত-পায়ের মুভমেন্ট স্বাভাবিক অবস্থায় আনা হয়। কখনো কখনো স্পিচ থেরাপি করারও প্রয়োজন পড়ে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে