সরকারি চাকরির শূন্য পদ পূরণ হবে কীভাবে?

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৪; সময়: ৩:৩৯ অপরাহ্ণ |
খবর > চাকরি
সরকারি চাকরির শূন্য পদ পূরণ হবে কীভাবে?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশে কর্মক্ষম বেকার ২৬ লাখের বেশি। অথচ সরকারি চাকরিতে ফাঁকা পড়ে আছে পৌনে ৫ লাখ পদ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে এ শূন্যতা। চলতি মাসেই হতে যাচ্ছে ৪৭তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও সময়ক্ষেপণ কাটানো, আর জনপ্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে অনেকটাই সম্ভব হবে সরকারি পদ পূরণ করা।

দেশে হন্যে হয়ে চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে ছোটা বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখের বেশি। কিন্তু সরকার একটু উদ্যোগী হলে নতুন কোন পদ সৃষ্টি না করেই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে প্রায় ৫ লাখ তরুণ-তরুণীকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, সরকারি চাকরির ১ম ও ২য় গ্রেডে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কর্মকর্তা থাকলেও বাকি ১৮টি গ্রেডে ৪ লাখ ৭৩ হাজার শূন্য পদ রয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রথম শ্রেণি বা ৯ম গ্রেড পর্যন্ত ফাঁকা পদ প্রায় ৬৬ হাজার। ১০ থেকে ১২ নম্বর গ্রেডে ফাঁকা পদের সংখ্যা এর দ্বিগুণের বেশি। প্রায় দেড় লাখ পদ ফাঁকা পড়ে আছে ১৩ থেকে ১৬ নম্বর গ্রেডে। আর অন্যান্য গ্রেডে পদ ফাঁকা সোয়া লাখের বেশি।

চাকরি প্রত্যাশীরা বলেন, দেশে এতো বেকার থাকার পরও পদ খালি পড়ে আছে। এটি হতাশাজনক। দ্রুত নিয়োগ দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করা উচিত। এতে কমবে বেকারত্বের হার।

শূন্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচে পিছিয়ে আছে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও অধিদফতর। সংখ্যাটি প্রায় ৩ লাখ। দেড় লাখের বেশি ফাঁকা পদ নিয়ে তারপরেই অবস্থান স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের। বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ১৩ হাজার ৯৩৫ পদ শূন্য থাকলেও নেয়া হচ্ছে না জনবল। আর মন্ত্রণালয় পর্যায়ে ফাঁকা পদের যোগফল ৬ হাজার ৬২৪টি।

চরম বেকারত্ব থাকার পরও কেনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে এতো এতো পদ ফাঁকা? বিশ্লেষকরা মনে করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, সার্কুলার দিতে বিলম্ব করাএবং প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ কার্যক্রমে বাইরের হস্তক্ষেপ এর কারণ।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, নিয়োগ কার্যক্রমগুলো হালনাগাদ না করায় নতুন নিয়োগে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রে তদবির বন্ধ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা বাড়াচ্ছে বেকারত্বের পরিমাণ। অনেক পদ খালি পড়ে আছে। তবে অনুমতির অভাবে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, ধাপে ধাপে সব শূন্য পদ পূরণে আন্তরিক অন্তর্বর্তী সরকার। আর চলতি মাসেই হতে যাচ্ছে ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. বাবুল মিঞা বলেন,৩০ নভেম্বরের মধ্যে ৯ম গ্রেডের ৩ হাজার ৪৮৭ পদের বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পদেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। শূন্য পদগুলো পূরণে কাজ করছে সরকার।

সবশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সি জনসংখ্যা ৪ কোটি ৭৪ লাখ। এটি মোট জনগোষ্ঠীর ২৮ শতাংশ। প্রতি বছর অসংখ্য তরুণ তরুণী উচ্চশিক্ষার গণ্ডি পার হলেও নিশ্চিত হচ্ছে না পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান। অন্যদিকে, ফাঁকা পড়ে আছে লাখ লাখ সরকারি পদ। পরস্পরবিরোধী এ অবস্থা ফুটিয়ে তুলছে রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার চিত্র। আর এখানেই বড় ধরনের সংস্কার চান নাগরিকরা।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে