দর্পচূর্ণের প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ২১-১১-২০২৪, সময়: ১১:০৫ |

এ কে সরকার শাওন : জিল্লুর যখন বালিয়া পুকুরের তার ফুফুর বাড়ী বায়ব্যে বসতিতে পৌঁছে তখন সন্ধ্যাটা পেরিয়ে গেছে। মালী চাচা তখনো নিরাপত্তা কক্ষে জায়নামাজে বসা। জিল্লুর বাড়ীতে প্রবেশ করেছে এটা তার নজর এড়ায়নি। ডাক ঘন্টা বাজাতেই সদর দরজা খুললো মিহি।
মিহিঃ ভাইয়া, কেমন আছো?
জিল্লুরঃ ভালো, তোমার নতুন শিক্ষক কেমন পড়ায়?
মিহিঃ খুব ভালো পড়ায় । ভাইয়া, তোমাকে চা বানিয়ে দেই?
এমন সময় জুহি এসে
-না, তোমাকে চা বানাতে হবে না।
তুমি বরং পড়াশোনায় মন দাও। যাও।
জুহিঃ জিল্লু ভাই, চলো বসার কক্ষে বসি।
বসার কক্ষে যেতে যেতে জিল্লুর জানতে চাইলো
-ফুফু কোথায় গেছে জুহি?
জুহিঃ মা বাবা বিকেলে ভদ্রা গেছে। এখনই এসে পড়বে। মামীর শরীরটা এখন কেমন?
জিল্লুরঃ মা এখন সুস্থ। তবে দুর্বল।
জুহিঃ তাতো হবেই। মামীর শরীরের উপর যা একটা ধকল গেলো।
জিল্লুরঃ হুম। তা মিহির শিক্ষক কেমন পড়ায়?
জুহিঃ তা আমি কী জানি?
তুমি মিহির লেখাপড়ার অভিভাবক তুমি জানবে না?
জুহিঃ না জানাবো না। সবজান্তা শিক্ষক তো ভালোই পড়াবে।
জিল্লুরঃ তোমার সাথে জগলুর দেখা সাক্ষাৎ বা কথা হয় নি?
জুহিঃ না, হয় নি। কথা হতে হবে কেন?
জিল্লুরঃ সৌজন্যতাবোধ বজায় রাখার জন্য।
একজন লোক তোমাদের বাড়ী আসবে আর তার সাথে তুমি কথা বলবে না এটা কী স্বাভাবিক?
জুহিঃ মানে?
জিল্লুরঃ মানে তুমি বোঝ না এমন নয়। আগের দু’দিনের ঘটনার জের ধরে তুমি কথা বলছো না।
জুহিঃ তা তুমি ঠিকই বলেছো। সেই দু’দিনের ঘটনায় আমি অপমানিত বোধ করছি!
জিল্লুরঃ না পারার মধ্যে অপমান বোধ আসবে কেন?
তুমি ভুুল করেছো অন্য জায়গায়।
জুহিঃ কোন জায়গায়?
জিল্লুরঃ প্রথমত আমি সব পারি এরকম কথা বলা ঠিক না। দ্বিতীয়ত বান্ধবী নিয়ে শোধ নিতে যাওয়া। দু’টো কাজই অপরিপক্বতার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। সেদিন অবশ্য জগলুরও ভুল হয়েছে। সেজন্য আমি ওকে তিরস্কারও করেছি। অবশ্য তার জন্য সে দুঃখিত বলেছে।
জুহিঃ তিনি দুঃখিত বলতে যাবেন কেন?
জিল্লুরঃ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। যেটা তোমার করা উচিত ছিলো। সেটা সে করেছে। খারাপ বিষয় ছোট করে ফেলা উত্তম।
জুহিঃ তুমি ঠিক বলেছো। আমার শিক্ষা হয়েছে। কোন বিষয় নিয়ে অহঙ্কার করতে নেই। বাড়াবাড়ি ও করতে নেই।
জিল্লুরঃ এই তো লক্ষী বোন আমার। এখন বাড়াবাড়িটাকে একটু ছাঁটাছাটি করে দাও।
জুহিঃ কীভাবে?
জিল্লুরঃ সেটা তুমি জানো। কারো সাথে সৌজন্যতা কীভাবে বজায় রাখতে হয় সে শিক্ষা এবং জ্ঞান ফুফু তোমাকে নিশ্চয়ই দিয়েছেন।
জুহিঃ বুঝতে পারছি। একটু অপেক্ষা করো। তোমার জন্য চা করে আনছি।
জিল্লুরঃ ৩ পেয়ালা এনো।
জুহিঃ কেন?
জিল্লুরঃ মিহিকে সাথে নিয়ে চা পান করবো।

তিন জনে চা পান করার সময় ডাক ঘন্টা বাজলো।
মিহি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে পড়তে বসলো। মেহেরুন্নেছা খানম জিল্লুরকে দেখে
-আরে জিল্লুর কখন এলে? ভাবীর শরীরটা এখন কেমন?
জিল্লুরঃ মা এখন ভালো ফুফু। তবে শরীরটা দুর্বল।
মেহেরুন্নেছাঃ সেই জন্য ভাবীর জন্য আমি হরলিক্স ও ওভালটিন কিনে এনেছি। আবার যখন বাড়ি যাবে তখন নিয়ে যাবে।
জুহি বললো
-জিল্লুু ভাই তো আরো আগেই চলে যেতো।তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
মেহেরুন্নেছাঃ তাহলে ভালোই হয়েছে। হরলিক্স ও ওভালটিনের কৌটা দু’টি একটি থলিতে ঢুকিয়ে ওকে দিয়ে দাও।
জিল্লুরঃ ফুফু চলি।
মেহেরুন্নেছাঃ সাবধানে যেও।
জুহিঃ এই নাও থলে। এখানে হরলিক্স ও ওভালটিনের চারটি কৌটা আছে।
জিল্লুর দাও বলে থলেটি হাতে নিয়ে বললো বেশ ওজন তো! জুহি মিহি আসি।
জুহিঃ আবার এসো।
ফুফু প্রধান ফটক পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে রিক্সা না চলা পর্যন্ত চেয়ে রইলো জিল্লুর পথের দিকে। জিল্লুরের মনে হলো মায়ের পরেই খালা ও ফুফুরা অতি আপনজন।

 

৯ম পর্বঃ ৯. দর্পচূর্ণের প্রতিক্রিয়া
উপন্যাসঃ অতল জলে জলাঞ্জলী
এ কে সরকার শাওন
শাওনাজ ভিলা, উত্তরখান, ঢাকা।

উপরে