প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’ এর রয়েছে ৪৫ বছরের তিক্ত-মধুর অভিজ্ঞতা। ৮টি অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ৩৬টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের রয়েছে পৃথক-পৃথক প্রত্যাশা। বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বিশ্বকে জানতে শেখায়, শেখায় অসংখ্য মানবীয় গুণাবলি। পড়াশোনার বাইরেও আমরা যে জ্ঞানগুলো আহরণ করি সেগুলো আমাদের চলার পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও তিক্ত অভিজ্ঞতার ঝুড়িও কিন্তু শূন্য হয়। রয়েছে অনেক অনেক শিক্ষার্থীর চড়াই-উতরাই এর গল্প, রয়েছে হতাশার গল্প। সেশনজটের অভিযোগে সাতটা বছর কাটিয়ে দেয়ার পরও শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষদিনে এই ১৭৫ একরের মায়া কাটাতে পারেনা। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মায়ায় জড়িয়ে আছে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। মায়ায় জড়ানো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিনে জেনে নিই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা, তাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মেলবন্ধন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি বিশেষ অধ্যায়, যা প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মাঝে একধরনের ভারসাম্য তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয় একটা শিক্ষার্থীকে শিক্ষিত করার পাশাপাশি তার আত্মউন্নয়নে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে।
বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের শুধু একাডেমিক সনদ দেয় না, সাথে যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেশের সর্বপ্রান্তের মানুষ এবং তাদের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারা যেন এক বড় প্রাপ্তি। এখানে পড়ার সুবাদে তৈরি হয় মানুষের জন্য কাজ করার অসংখ্য উপায়।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রত্যাশা হিসেবে থাকবে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা।সর্বক্ষেত্রে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। বিজ্ঞান ও সাহিত্য গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক সাহায্য নিশ্চিত করা। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বাদ দিয়ে ছাত্র সংসদ গঠন ও সামাজিক সংগঠন গুলোর কাজে প্রশাসনের এগিয়ে আসা।
মিন্টু হাসান
ফোকলোর স্টাডিজ
শিক্ষাবর্ষ: ২০১৯-২০
সুস্থ সংস্কৃতির চর্চার সাথে স্মার্ট, যুগোপযোগী গবেষণা নির্ভর প্রতিষ্ঠান হোক ইবি
প্রতিবছর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ হতে তৈরী হচ্ছে যোগ্য গ্রাজুয়েট। দেশের প্রতিটি অঙ্গনেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা। এই ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে আমি চাই আগামী বছরগুলোতে ইবিকে একটি স্মার্ট, যুগোপযোগী,গবেষণা নির্ভর ও দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংস্করণ অতীব জরুরি। আক্ষেপের জায়গাটি এই যে গত ৪৫ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যাবলী আধুনিকীকরণ করা হয় নি। সময় অপচয় করে, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েই ফি প্রদান,ভর্তি সংক্রান্ত কার্যক্রমসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে রয়েছে নানা জটিলতা। সনদ উত্তোলন সংক্রান্ত জটিলতার অভিযোগ বহুদিনের,পর্যাপ্ত ক্লাসরুম সংকট,কিছু বিভাগের অযৌক্তিক সেশন জট দারুণ হতাশার জন্ম দিচ্ছে অত্র বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর নিজস্ব চাওয়া হলো একটি আইডি কার্ড। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজস্ব আইডি কার্ড নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ইবিকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। বিশেষত ইবির যাবতীয় কার্যক্রম ডিজিটালাইজ করা এবং উদ্ভুদ্ধ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা এবং সৎ, দক্ষ, গবেষণামুখী, শিক্ষামূখর পরিবেশ সৃষ্টি এখন সময়ের দাবী। সামনের বছরগুলোতে এমন কোনো দাবীই যেন শিক্ষার্থীদের মাঝে না থাকে যা তার জন্য প্রয়োজন। ৪৫ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এটিই আমার প্রত্যাশা।
আজমেরী রহমান
ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট
শিক্ষাবর্ষ: ২০২১-২২
বিদ্যমান সংকটগুলোর আশু সমাধান জরুরী
সবুজে ঘেরা ১৭৫ একরের আমাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ৷ নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪৬ বছরে পদার্পণ করলো। এখানে ৮ টি অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ৩৬ টি বিভাগ রয়েছে। আধুনিক শিক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে কয়েকটি নতুন বিভাগ চালু করা হলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক ৷ নতুন বিভাগগুলো চালু হওয়ার অনেকদিন হয়ে গেলেও নতুন কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না ৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটা বড় দানবীর অভিশাপ হলো সেশন জট ৷
প্রতি বছর এখানে ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয় ৷ প্রতিটি শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে থাকে ৷ কিন্তু এখানে ভর্তি হওয়ার পরই তাদের হতাশার মধ্যে পরতে হয় ৷ সেশন জটের কারণে ডিগ্রি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেড়িয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে করতে অনেক দেরী হয়ে যায় এবং জীবন নিয়ে হতাশায় পরতে হয় ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ফিরিয়ে আনতে এর পিছনের অন্তরায় হিসেবে যেসব সমস্যা আছে তার দ্রুত সমাধান হোক, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা ৷
উম্মে মাহিমা হিমা
কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম।
শিক্ষাবর্ষ: ২০২২-২৩
গণতান্ত্রিক দেশের অগণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন প্রয়োজন :
১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ আইনের মাধ্যমে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি নিয়োগ দেয়া হয় সিনেটে নির্বাচিত তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্যানেল থেকে। সিনেটে শিক্ষক, ছাত্র, রেজিস্টার গ্রাজুয়েট এর প্রতিনিধি থাকায় নির্বাচনে ছাত্র শিক্ষকদের মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকে।
১৯৮০ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়। এই আইনের ১০ এর (১)ধারায় বলা হয়েছে, “চ্যান্সেলর যে শর্তাবলী নির্ধারণ করিয়া দিবেন, সেইমতো তিনি চার বৎসরের জন্য ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগ করিবেন।” এবং ১১ এর (১) ধারায় বলা হয়, “ভাইস-চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন নির্বাহী ও একাডেমিক অফিসার থাকিবেন।”
সেই আইনে ৭৩ এর অধ্যাদেশের বিপরীতে ভাইস চ্যান্সেলর প্যানেল নির্বাচন বিধান বাদ দেয়া হয়, সিনেট বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকে না, ডিন্স নির্বাচনের বিধান থাকেনা এবং ভাইস চ্যান্সেলের ক্ষমতা কে নিরঙ্কুশ করা হয়।
গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম অগণতান্ত্রিক আইন সংশোধন করা হোক এবং ৭৩ অধ্যাদেশের আদলে নতুন আইন করা হোক। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা আমাদের গণতন্ত্র কে ফিরে পেয়েছি, তাই গণতান্ত্রিক দেশে অগণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন অতীব জরুরি।
মো: মিশুক শাহরিয়ার
আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ
শিক্ষাবর্ষ: ২০২১-২২