তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ, বেলকুচি মহিলা কলেজের এডহক কমিটি বাতিল

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৪; সময়: ৬:১৯ অপরাহ্ণ |
তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ, বেলকুচি মহিলা কলেজের এডহক কমিটি বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ :সিরাজগঞ্জের বেলকুচি বহুমুখী মহিলা কলেজের অর্থ আত্মসাৎ এর ঘটনায় সভাপতি করা ডা. মাহমুদুল হাসান শুভর কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। কলেজ অধ্যক্ষ মো. শামসুল আলমের প্ররোচনায় তার ভাতিজা শুভকে সভাপতি বানানোর ১ মাস ২৫ দিনের মধ্যেই কলেজের চারটি একাউন্ট থেকে বিনা ভাউচারে ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছিল বলে অভিযোগের ভিত্তিতে এ এডহক কমিটি অনুমোদনের ২ দুই মাস না যেতেই তা স্থগিত করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

কলেজের শিক্ষক-কর্মচারি ও স্থানীয়রা জানান, অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষ শামছুল আলম দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বরখাস্ত ছিলেন। আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর তিনি তিনি স্ব-পদে বহাল হন এবং আপন ভাতিজা ডা. মাহমুদুল হাসান শুভকে সভাপতি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিটির অনুমোদন করিয়ে আনেন। কমিটি অনুমোদনের দুই মাসের মধ্যেই কলেজের অনুকুলে চারটি একাউন্ট থেকে ৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৮৯ টাকা উত্তোলন করা হয়। এদিকে ৬ মাস মেয়াদী এডহক কমিটি ১ মাস ২৫ দিন যেতেই অজ্ঞাত কারণে গত ১২ নভেম্বর স্থগিত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক বলেন, কলেজের চারটি ব্যাংক একাউন্টের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকে ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা, জনতা ব্যাংকে অনার্স শিক্ষার্থীর বেতন, ভর্তি ফি, ফরম ফিলাপ ফি আদায়ের টাকা, সোনালী ব্যাংকের একটি একাউন্টে একাদশ শ্রেণীর অনলাইনে আদায় হওয়া ভর্তি, পরীক্ষা, ও ফরম ফিলাপ ফি এবং অপর একাউন্টে স্নাতক শিক্ষার্থীদের যাবতীয় আদায়ের টাকা জমা হয়। গত ৪ নভেম্বর অগ্রণী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দুটি একাউন্টের টাকা উত্তেলন করা হয়েছে। আর ১৭ নভেম্বর জনতা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির স্বাক্ষরিত চেক থেকে টাকাগুলো উত্তোলন করা হয়েছে। হিসাব সহকারি মাস শেষে ব্যাংকের স্টেটমেন্ট আনতে গিয়ে দেখেন টাকাগুলো উত্তোলন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অধ্যক্ষ শামসুল আলম সাসপেনশনে ছিল। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালু ছিল। ইতিমধ্যে দুটি তদন্ত হয়েছে। একটি অর্থনৈতিক তদন্ত, অপরটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তদন্ত। তৃতীয় দফায় তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেই তদন্তও চলছিল। এরই মধ্যে নিজে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে ভাতিজাকে সভাপতি করে নিয়ে আসেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনা চলছিল। সম্প্রতি কমিটি স্থগিতও করা হয়েছে। তবে কি কারণে কমিটি স্থগিত হয়েছে সে বিষয়ে জানা যায়নি।

হিসাব রক্ষক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, কলেজের চার একাউন্টে প্রায় ১০ লাখ টাকা ছিল। সেখান থেকে ৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৮৯ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. শামসুল আলম বলেন, আমাকে ২৫ মাস বেতন দেয়নি সাবেক কমিটি। তাই ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৯ টাকা আমি আমার বেতন হিসেবে তুলে নিয়েছি। আর অনার্সের শিক্ষকরা ২ মাস ধরে বেতন পায় না। সে জন্য একটি রাউন্ড ফিগ্যার উত্তোলন করা হয়েছে। ইউএনও কিছুদিন সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তখন তিনি কোন বিলে স্বাক্ষর করেন নাই। কারণ নিয়োগে জটিলতা আছে। সার্টিফিকট ছাড়াই চাকরী দেওয়ার অভিযোগ আছে। তাছাড়া বেতন বৈষম্যের অভিযোগও রয়েছে। তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর এমপিও বিলটা স্বাক্ষর করলেও নন এমপিও একটি বিলও স্বাক্ষর করেননি। আমি দায়িত্ব পূণরায় ফিরে পেয়ে এবং ভাতিজা সভাপতি হওয়ার পর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বনি আমিনকে প্রধান করে ও চারজন শিক্ষক সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। এরা তদন্ত রিপোর্ট দেবে তারপর বিলগুলো ছাড় হবে।

এ বিষয়ে জানতে কলেজের সাবেক সভাপতি ডা. মাহমুদুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া সুলতানা কেয়া বলেন, ওই কলেজের কিছুকাল আমি সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। অনেক রেজুলেশনের স্বাক্ষর করতে হয়, তাই এই মুহুর্তে এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে