মেয়ের মুক্তির জন্য এবার যে চেষ্টা করবেন সেই মিন্নির বাবা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২০; সময়: ৫:৩০ অপরাহ্ণ |
মেয়ের মুক্তির জন্য এবার যে চেষ্টা করবেন সেই মিন্নির বাবা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : শুরু থেকেই আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তার মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেছেন, আমার মেয়েকে বাঁচাতে আমি কোনো প্রচেষ্টাই বাদ রাখব না। এজন্য ফের উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। ইতোমধ্যে মিন্নির আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি। বুধবার দুপুর ২টার দিকে মিন্নিসহ বহুল আলোচিত এ মামলার ১০ আসামির বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ (চার্জ) গঠনের পর মিন্নির বাবা এ কথা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার মোজাম্মেল হোসেন কিশোর স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, রিফাত হত্যা মামলার শুরু থেকেই মিন্নির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তাকে বিভিন্নভাবে রিফাত হত্যার সঙ্গে জড়িত করার চেষ্টা চলেছে। অথচ স্ত্রী হিসেবে স্বামীকে রক্ষায় সব দায়িত্বই পালন করেছিল মিন্নি। রক্তে জর্জরিত রিফাতকে সেই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ষড়যন্ত্রকারীদের সব চেষ্টা বিফল হতে চলছে মন্তব্য করে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, মিন্নি এ মামলায় প্রধান আসামি করে তাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এখন চার্জশিটে তাকে সাত নম্বর অভিযুক্ত করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে রয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, মিন্নি উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে আছে। উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে মিন্নিকে এ মামলার চার্জ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে বলে আশা করছি।

তিনি যোগ করেন, আমার মেয়েকে বাঁচানোর জন্য আমি কোনো প্রচেষ্টাই বাদ রাখব না। উচ্চ আদালত যেন এ মামলা থেকে তাকে মুক্তি দেয় সেই প্রার্থনা করব।

একই কথা বলে বরগুনার আদালতে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, যেহেতু মিন্নির আইনি সহযোগিতা পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই মামলা থেকে মিন্নিকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আমরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি।

বুধবার দুপুর ২টার দিকে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন করেন।

একই সঙ্গে এ মামলার প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তারা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), মো. মুসা (২২), আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল ইসলাম সাইমুন (২১)।

এদের মধ্যে এক থেকে সাত নম্বর অভিযুক্ত ৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ৮ এবং ১০ নম্বর ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে ২১২ এবং ১২০ বি ১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়ছে। এছাড়া এ মামলার প্রাপ্ত বয়স ৯ নম্বর আসামির বিরুদ্ধে আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছে।

অভিযোগ গঠন করা আসামিরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। তাদেরকে আজ অভিযোগ গঠন উপলক্ষে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

এছাড়া বাবার সঙ্গে আদালতে হাজির হন জামিনে থাকা নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। পরে আসামিদের উপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়।

অভিযোগ গঠন শেষে কারাগারে থাকা আট আসামিকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া সাইমুন নামে এক আসামির জামিনের আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবী। কিন্তু তা নামঞ্জুর করেন আদালত। অন্যদিকে প্রত্যেক আসামির আইনজীবী মামলা থেকে তাদের মক্কেলকে অব্যাহতির আবেদন করেন। আদালত তাও নামঞ্জুর করেন।

রিফাত হত্যা মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ মামলার ৩৭ আসামির সাক্ষ্যগ্রহণ করবেন আদালত।

এর আগে গত ২৮ নভেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ পিছিয়ে ১ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছিলেন আদালত।

প্রসঙ্গত গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে প্রথমে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তাক বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে নেয়ার পর সেখানেই মারা যান।

এ ঘটনায় ২৭ জুন রিফাতের বাবা বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। গ্রেফতার ১৫ আসামির সবাই এ হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা ১ সেপ্টেম্বর দুই খণ্ডে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। শিশু আদালতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিচারের জন্য এবং প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিচারের জন্য দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের অভিযোগ গঠনের তারিখ আগামী ৮ জানুয়ারি নির্ধারিত রয়েছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে