ভুতুড়ে এই দুর্গে রাত হলেই বাজে কামানের শব্দ, ঘুরে বেড়ায় আত্মারা!
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : অতীতের অনেক স্থাপনায় বর্তমানে ভৌতিক হিসেবে বিবেচিত। পুরো পৃথিবী জুড়েই এমন অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। এসব নিদর্শন সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহের কমতি নেই। তেমনই এক বিষয় নিয়ে আজকের লেখা। পশ্চিম সাসেক্সের অরুন নদীর তীরে অবস্থিত অরুনডেল দুর্গ ইংল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় হেরিটেজ সাইট। অরুনডেল দুর্গ রহস্যময় এবং ভুতুড়ে দুর্গ হিসেবেও পরিচিত। যে কারণে এই দুর্গ পর্যটকদেরও কৌতূহলের স্থান।
রজার ডি মন্টগোমেরি ১০৬৮ সালে দুর্গটি নির্মাণ করেন। তিনি প্রথম আর্ল অব অরুনডেল হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। রাজা প্রথম হেনরি তার দ্বিতীয় স্ত্রী আদেলিজা বা লুভাইনের জন্য দুর্গটি নির্মাণ করেন। দুর্গটি কালক্রমে ৮৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডিউক নরফোকদের হাতে ছিল।
রানি ভিক্টোরিয়া ও তার স্বামী অ্যালবার্ট ১৮৪৬ সালে এই দুর্গটি পরিদর্শন করেছিলেন। সেখানে রানি তিন দিন ছিলেন। সে সময় লন্ডনের একজন শীর্ষ স্থানীয় ডিজাইনার রানির জন্য একটি শয়নকক্ষ এবং লাইব্রেরি নির্মাণ করেন। রানির জন্য আনা হয় বিশেষ সব আসবাবপত্র। নরফোকের ১৩ তম ডিউক উইলিয়াম ফওলার রানির প্রতিকৃতি স্থাপন করেন দুর্গটির লাইব্রেরিতে।
অরুনডেল দুর্গ ১৬৪২ থেকে ১৬৪৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের সময় এবং ১৭১৮ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নরফোকের অষ্টম ডিউক দুর্গটির সংস্কার করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০ শতকের প্রথম দশকে নরফোকের ১৫ তম ডিউক পুনরায় দুর্গটি সংস্কার করেন। ইংল্যান্ডে প্রথম দিকে যেসব ভবনে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা হয়েছিল তার মধ্যে অরুনডেল দুর্গ অন্যতম।
এছাড়াও এই দুর্গে দমকল সরঞ্জাম, নিজস্ব লিফটিং এবং সেন্ট্রাল হিটারের ব্যবস্থা ছিল। ১৯৮৮ সালে নরফোকের ১৭ তম ডিউক সম্পত্তিটি রক্ষাণা-বেক্ষণের জন্য একটি ট্রাস্টের অধীনে দিয়েছিলেন। এই ট্রাস্ট পর্যটকদের জন্য দুর্গটি উন্মুক্ত করে। স্থানীয় লোককাহিনী প্রচলিত আছে, অরুনডেল দুর্গ ও এর আশেপাশের অঞ্চলে কমপক্ষে সাতটি ভূত আছে। এর মধ্যে অরুনডেলের প্রথম আর্ল রজার ডি মন্টগোমেরির ভূতও রয়েছে। তিনিই দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন।
বলা হয়ে থাকে, তিনি কখনো স্থানটি ছাড়েননি। এই দুর্গ তার খুবই প্রিয় ছিল। তার প্রেতাত্মা এখনো দুর্গটিতে ঘুরে বেড়ায় বলে অনেকে বিশ্বাস করে। অন্য একটি কাহিনী প্রচলিত আছে, দুর্গের হায়র্নেস টাওয়ারের চারপাশে চাঁদনি রাতে সাদা পোশাক পরা এক যুবতী নারীর আত্মা দেখতে পাওয়া যায়। সেটি এমিলি নামের একজন নারীর বলে জানা যায়।
দুর্গের এক বিশপের সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এমিলি নিজের গর্ভাস্থার কথা এই বিশপকে জানিয়েছিল। তবে দুর্গের এই বিশপ এমিলিকে প্রত্যাখ্যান এবং শিশুটিকে অস্বীকার করে। এমিলি প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে হায়র্নেস টাওয়ার থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি দুর্গের রান্নাঘরে একজন শিশু চাকরের ভূত দেখা যায় বলে প্রচলিত আছে। ভয়াবহ অত্যাচার করে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। শিশুটির আত্মা দুর্গ ছেড়ে যায়নি বলে অনেকের বিশ্বাস।
দুর্গের লাইব্রেরিতে ১৬৩০ এর দশক থেকে ‘ব্লু ম্যান’ এর ভূত দেখা যায় বলে জানা যায়। কথিত আছে, রাজা দ্বিতীয় চার্লসের সময়ে তিনি দুর্গে বাস করতেন। মানুষের ভূত ছাড়াও অরুনডেল দুর্গের চারপাশে একটি সাদা পাখিও দেখা যায়! রেকর্ড অনুযায়ী, ডিউকরা আমেরিকান সাদা প্যাঁচা পালন করতেন। প্যাঁচার ভূত দেখা অশুভ হিসেবে মনে করা হয়। দুর্গের আশেপাশে সাদা প্যাঁচা দেখা গেলে প্রতিবারই দুর্গের কিংবা দুর্গ সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে বলে কাহিনী প্রচলিত আছে।
কিছু দর্শনার্থী দুর্গ থেকে ভুতুড়ে কামানের শব্দও শুনেছে। ১৬৪৩ সালে ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের সময় ১৮ দিন দুর্গটি অবরোধ করা হয়েছিল। সে সময়ের কামানের শব্দ এখনো রাতের বেলায় শোনা যায় বলে তাদের বিশ্বাস। ১৯৫৮ সালে এই দুর্গে রাত কাটায় এক ব্যক্তি। তিনি লম্বা চুলের এক ভূত দেখেছিলেন বলে দাবি করেন।
২০১৮ সালে একজন পর্যটক অরুনডেল দুর্গ ভ্রমণের সময় কিছু ছবি তোলেন। তার দাবি ছবিগুলোতে ভুতুড়ে দৃশ্য ধরা পড়ে। বর্তমানে দুর্গটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। অসংখ্য পর্যটক হয়তো এর ভুতুড়ে এবং রহস্য ঘটনার জন্যই স্থানটি কৌতূহলী হয়ে ভ্রমণ করেন।