গোমূত্র দিয়ে গোসল করাই এই জাতির রীতি
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : পৃথিবীর অনেক জায়গায় এখনো সভ্যতার আলো পৌঁছায়নি। এর প্রমাণ মেলে নানান দেশের আদিবাসীদের। এদের আচার আচরণ দেখলে রীতিমতো তাজ্জব বনে যাবেন আপনিও। ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী রয়েছে। যাদের ভাষা, সংস্কৃতি কোনো কিছুর সঙ্গেই মিল নেই ভারতের। এ যেন আলোর নিচে আঁধার।
আধুনিকতার প্রতিযোগিতায় বিশ্বের সবদেশই মোটামুটি তাল মিলিয়ে চলছে। তবে এই পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীগুলোকে স্রোতের অনুকূলে আনা সত্যিই কষ্টকর বটে! তাদের প্রত্যেকেরই বিভিন্ন ধরনের আদব কায়দা আছে। অনেকেরই জীবন-যাপনের পদ্ধতি দেখে আমরা তথাকথিত সভ্য মানুষেরা বিস্মিত হয়ে যাই। আমাদের কাছে যা অস্বাভাবিক সেগুলোই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘটা করে পালন হয়। তেমনি দক্ষিণ সুদান দেশটির এক বৃহৎ আদিবাসী সম্প্রদায়। এই দেশের বেশিরভাগ মানুষই এই উপজাতি।
যারা তাদের নিজস্ব রীতি বজায় রাখার জন্য পশুচারণ ছাড়া আর কোনো কিছুই করে না। কেবলমাত্র শস্য হিসেবে পুরনো পদ্ধতির মাধ্যমে ভুট্টা চাষ করে থাকে এরা। এই আদিবাসী গোষ্ঠীর নাম হল ‘ডিংকা’। যদিও বহির্বিশ্ব এদের ডিংকা নামে ডাকলেও এরা নিজেদেরকে অন্য নামে ডেকে থাকে। একজন ডিংকাকে বলা হয় মুয়োজ্যাং এবং একের অধিক ডিংকা-কে তারা নিজেরাই জিয়েং নামে ডাকে।
নাইলটিক অর্থাৎ নীল নদের তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী ডিংকারা আজীবন পশুচারণ করে বেড়ায়। মূলত গো পালন তাদের সমাজের নারী-পুরুষ উভয়েই মূল পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। এখানে কোনো উন্নত অর্থব্যবস্থা সে ভাবে প্রচলিত নেই। এরা শুষ্ক মরসুমে অর্থাৎ শীতকালের সময় ডিসেম্বর থেকে মোটামুটি এপ্রিল মাস পর্যন্ত স্থায়ী বাসগৃহ ছেড়ে পশুদের পর্যাপ্ত খাদ্যের সন্ধানে প্রতিবছর নীলনদের তীরবর্তী অংশে গিয়ে হাজির হয়। আবার বর্ষাকালে পার্বত্য জায়গায় অবস্থিত তাদের স্থায়ী বাসগৃহে ফিরে আসে।
বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই তাদের মূল খাদ্য ভুট্টা ক্ষেত থেকে ঘরে তুলে ফেলে ডিংকারা। তার ফলে বর্ষাকালে আলাদা করে খাদ্য সংকটও খুব একটা হয় না। ঋতুভেদে বাসগৃহ ছেড়ে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়ার এই বিষয়টিকে বলে প্যাস্টোলর। অলৌকিক একেশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী ডিংকাদের কাছে নিহাল একমাত্র দেবতা। এরা সব কিছুকেই ঈশ্বরের ইচ্ছে বলে মনে করে। জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ এমনকি যে কোনো অপরাধ নিহালের ইচ্ছাতেই সংগঠিত হয় বলে ডিংকাদের ধারণা। যেকোনো আনন্দ-উৎসব বা দুঃখের সময় গান গাওয়া দক্ষিণ সুদানের আদিবাসী গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য।
অদ্ভুতভাবে ডিংকা শিশু থেকে শুরু করে পূর্ণবয়স্করা পর্যন্ত গরুর বাঁট থেকে সরাসরি দুধ খায়। এই অঞ্চলে গরুর গোবর পোড়ানো একটি অতি প্রচলিত ঘটনা। এমনকি এখানকার মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে চিরাচরিত পদ্ধতিতে ডিংকারা গোবর পোড়া ছাই সারা গায়ে মেখে থাকে। তাদের ধারণা এর ফলে মশা কামড়াবে না। এমনকি গরুর মূত্র দিয়ে মাথা ধোয়াকে তারা অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করে।
ডিংকা শিশুদের ছোটবেলায় যে নামকরণ করা হয় বয়ঃসন্ধির পর সেই নাম পাল্টে যায়। তখন কোনো গবাদি পশু বা সেই পুরুষ ও নারীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে নতুন নামকরণ করা হয়। এছাড়াও ডিংকারা মনে করে তারা আফ্রিকার সবচেয়ে বেশি উচ্চতার মানুষ। বিশেষ করে নারীদের সৌন্দর্য প্রকাশ পায় তাদের উচ্চতায়। তবে বর্তমানে অপুষ্টিসহ নানা কারণে তাদের উচ্চতার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
১৯৯৯ সালে ডিংকা সম্প্রদায় ব্যাপক গণহত্যা সম্মুখীন হয়। সেই সময় অসংখ্য ডিংকা চারিদিকে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। এমনকি সুদান যখন একটি দেশ ছিল সেই সময় খার্তুমের কেন্দ্রীয় প্রশাসন ডিংকাদের ধর্মান্তরিত করার জন্য প্রবল অত্যাচার শুরু করে। তবে স্বাধীন দক্ষিণ সুদান গড়ে ওঠার পর বর্তমান সময়ে এই আদিবাসী গোষ্ঠীটি অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।