রাজশাহীতে শৈবাল চাষে রাকিবুলের মাসে আয় ৮০ হাজার টাকা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২১; সময়: ৪:২৩ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে শৈবাল চাষে রাকিবুলের মাসে আয় ৮০ হাজার টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্পিরুলিনা ৮০ ভাগ প্রোটিন দ্বারা গঠিত বলে অনেক দেশেই এটা সাপ্লিমেন্টারী ফুড হিসেবে খাওয়া হয়। এটা ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে। রাজশাহীতে কৃত্রিম জলাধার তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে এই সামুদ্রিক শৈবাল স্পিরুলিনা চাষ করছেন রাকিবুল সরকার নামে এক উদ্যোক্তা।

বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত স্পিরুলিনা তিনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন। ইতিমধ্যে তিনি স্পিুরুলিনা বিক্রি করে মাসে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করছেন।

স্পিুরুলিনা চাষের জন্য রাজশাহীর তানোর উপজেলার আমশো গ্রামে ১৭ হাজার লিটারের একটি কৃত্রিম জলাধার তৈরি করেছেন রাকিবুল সরকার। এইজন্য জলাধারে রাসায়নিক প্রয়োগ করে সামুদ্রিক পরিবেশ তৈরি করতে হয়েছে তাকে। কৃত্রিম জলাধারে সামুদ্রিক পরিবেশ তৈরির জন্য তাকে পানির সাথে ৯ ধরনের রাসায়নিক উপাদান মেশাতে হয়েছে।

এছাড়া কৃত্রিম জলাধারটি স্বচ্ছ প্লাস্টিকের তৈরি টিন দিয়ে ছেয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে সরাসরি সূর্যালোক পড়ে জলাধারটিতে। পোকামাকড় ও জীবাণুর সংস্পর্শে যাতে না আসে সেজন্য জলাধারটি প্রথমে স্বচ্ছ মোটা পলিথিন ও তার ওপরে আবার প্লাস্টিকের নেট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। আর পানিতে যাতে সবসময় অক্সিজেনের প্রবাহ ঠিক থাকে সেজন্য অক্সিমিটার জেনারেটর পানিতে বসানো হয়েছে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে পানিতে অক্সিজেনের প্রবাহ তৈরি হয়।

রাকিবুল সরকার বলেন, ‘‘কৃত্রিম জলাধারটি তৈরি করতে আমার দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কারণ প্লাস্টিকের টিন ঢাকা থেকে অর্ডার করে তৈরি করে আনতে হয়েছে যা ব্যয়বহুল। এছাড়া জলাধারটিতে সামুদ্রিক পরিবেশ তৈরি করতে ৯ ধরনের রাসায়নিক উপাদান পানির সাথে মেশাতে হয়েছে এইজন্য খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

‘‘আর ১৭ হাজার লিটার জলাধারের জন্য ১৫ লিটার স্পিরুলিনার বীজ দিতে হয়েছে। সবমিলিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ পড়েছে। এরপর আর তেমন খরচ নেই। তবে পানির গুণাগুণ কমে গেলে সেক্ষেত্রে রাসায়নিক দিতে হয়। সেটাও ছয় মাসে একবার।’’

তিনি বলেন, ‘‘এই জলাধার থেকে প্রতি মাসে শুকানোর পর ১৫ থেকে ২০ কেজি স্পিরুলিনা উৎপাদন হয়। প্রতিকেজি স্পিরুলিনা বিক্রি হয় চার হাজার টাকা কেজি হিসেবে। সে হিসেবে প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা স্পিরুলিনা বিক্রি হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও পুষ্টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্পিরুলিনা ক্রয় করেন।’’

রাকিবুল সরকার বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজয়ের পর প্রায়ই ব্লু ইকোনমির কথা বলতেন। প্রধানমন্ত্রী বলতেন আমাদের দেশে ব্লু ইকোনমির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন ব্লু ইকোনমি কি বিষয়টি জানতে গিয়ে দেখি, ব্লু ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্রের ভেতর যে প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদ রয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে আহরণ করে তার ব্যবহার করা। তার মধ্যে একটি হচ্ছে সামুদ্রিক শৈবাল।

রাকিবুল বলেন, ‘‘সামুদ্রিক শৈবালের মধ্যে প্রয়োজনীয় খনিজ ও প্রাণিজসহ মানবদেহের সব পুষ্টিকর উপাদানই রয়েছে। সামুদ্রিক শৈবালের আবার দুইটি প্রকারভেদ আছে একটি হচ্ছে বৃহৎ আকারের সামুদ্রিক শৈবাল চাষ আর একটি হচ্ছে এককোষী সামুদ্রিক শৈবাল- স্পিরুলিনা। এককোষী প্রাণী পানিতে শ্যাওলার মতো ভেসে থাকে। তখন থেকে আসলে স্পিরুলিনা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠি।

‘‘খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ভারত, চীনসহ ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশেই এটি চাষ হচ্ছে। তখন ঝিনাইদহের দেলোয়ার এগ্রো ফুডের দেলোয়ারের কাছে একদিনের প্রশিক্ষণ নিয়েই সামুদ্রিক শৈবাল চাষ শুরু করি। এভাবেই প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়েই তিনি সামুদ্রিক শৈবাল স্পিরুলিনা চাষের সাথে যুক্ত হন’’ বলেন রাকিবুল।

তিনি বলেন, ‘‘এ বছরের মার্চের ১ তারিখে আমি কৃত্রিম জলাধারে চাষ শুরু করি। ২০ তারিখ থেকে স্পিরুলিনা উৎপাদন শুরু হয়। পানি থেকে স্পিরুলিনা সংগ্রহ করে তাকে লবণজাত করে ড্রায়ার মেশিনে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় শুকাতে হয়। শুকানোর পর তা এয়ারটাইট বোতলজাত করে বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ কেজি স্পিরুলিনা উৎপাদন হয়।’’

রাকিবুল সরকার বলেন, ‘‘যেহেতু স্পিরুলিনা ব্যাপক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। আবার আমাদের দেশসহ বিশ্বে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই ব্যাপক মাত্রায় স্পিরুলিনা চাষকে ছড়িয়ে দিতে হবে। সরকারের সদিচ্ছায় বাজার তৈরি করা গেলে আমাদের দেশে স্পিরুলিনা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। অল্প খরচে স্পিরুলিনা চাষ করা যায় বলে যারা বেকার রয়েছেন তারা স্পিরুলিনা চাষ করতে পারেন। এর ফলে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বেকার সমস্যার সমাধান করাও সম্ভব হবে।’’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ বলেন, ‘‘অনেক ধরনের এককোষী শৈবাল রয়েছে তার মধ্যে স্পিরুলিনা একটি। স্পিরুলিনা ৮০ ভাগ প্রোটিন দ্বারা গঠিত বলে অনেক দেশেই এটা সাপ্লিমেন্টারী ফুড হিসেবে খাওয়া হয়। এটা ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে।

‘‘রাকিবুল সরকারের ফার্মটি রাজশাহী অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় খামার। তার ওখান থেকে সংরক্ষিত স্পিরুলিনা ল্যাবের মাইক্রোস্কোপে দেখে জানা গেছে যে, সেটা খাবারযোগ্য। সেখানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি।’’ সূত্র- টিবিএস

  • 552
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে