পাবনা সদরের ৯৫ শতাংশ ইভিএম মেশিন বিকল, অভিযোগ প্রার্থীদের

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৪; সময়: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ |
পাবনা সদরের ৯৫ শতাংশ ইভিএম মেশিন বিকল, অভিযোগ প্রার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পাবনার সব কটি উপজেলায় ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ প্রথম ও দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের ত্রুটি থাকলেও অভিযোগ ছিল কম৷ বুধবার পাবনা সদর উপজেলায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে চললেও ৯৫ শতাংশ ভোটকেন্দ্রের ইভিএম মেশিন বিকল বলে অভিযোগ করেছেন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা। ভোটকেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এজন্য ভোটগ্রহণর ধীরগতি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার (২৯ মে) দুপুর দেড়টার দিকে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক আলহাজ্ব কামিল হোসেন এমন অভিযোগ করেন।

কামিল হোসেন বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় পাবনা পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোটকেন্দ্রের ইভিএম মেশিন বিকল হয়ে আছে। কেন্দ্রে শতশত নারী পুরুষ সকাল থেকে অবস্থান করে ভোট দিতে না পেরে বাড়িতে ফিরে গেছেন। আসলে বাড়িতে যাওয়া ভোটারদের ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন। অন্য প্রার্থী পশ্চিমাঞ্চলে ভোট ব্যাংক দেখে ষড়যন্ত্র করে আমার ভোটের এলাকায় ইভিএম মেশিন বিকল করে দেছে। আমি সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র বলে মনে করছি।অবশ্যই আমি কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গ্রহণের আবেদন জানাই।

এছাড়াও পাবনা সদরের আনারস প্রতিকের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রুমন বলেন, সকাল থেকে প্রায় ৩০ টি সেন্টার পরিদর্শন করেছি। সব কেন্দ্রের অধিকাংশ ইভিএম মেশিনেই ক্রুটি। ভোট গ্রহণে ধীরগতি দেখা গেছে। কেন্দ্রে প্রচুর ভোটার দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে ভোট না দিয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে।

হেলিকপ্টার প্রতিকের প্রার্থী আবু সাঈন খান বলেন, আমার অঞ্চলের ভোটাররা উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছে। জনগণ নাকি ভোট বিমুখ? আমার এলাকায় হাজার হাজার মানুষ সকাল থেকে ভোট দিতে আসছে। তারপরও ইভিএম জটিলতায় সকালে ভোটগ্রহণে ধীরগতি দেখা দিয়েছিল। এরপর ঠিক হয়ে গেছে।

মোটরসাইকেল প্রতিকের প্রার্থী সোহেল হাসান শাহীন বলেন, সকাল থেকে যতটি ভোটকেন্দ্রে গেছি সব জায়গায় ইভিএম মেশিন বিকল। কিছু কেন্দ্র থেকে আমার নির্বাচনী এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছ। প্রশাসনকে বিষয়টি বলেছি।

সকাল থেকে পাবনা সদরের সেন্ট্রাল গার্লস স্কুল, পিটিআই, আরিফপুর জেউএস ফাজিল মাদরাসা, দুবলিয়া, শ্রীকোল, ফারাদপুর, চরপাড়া, নলদহ, ঘোড়াদহ উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ শাত্তার, পাবনা সরকার টিচার্চ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ভাঁরাড়াসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রগুলোর সামনে ভোটারের দীর্ঘ সারি। ভোট দিতে না পেরে ভোটাররা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। অনেকে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তবে ইভিএম মেশিন সকাল ৯ টা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে ছিল। এরপর মেশিন ঠিক হলেও বারবার ক্রুটি দেখা দেওয়াতে ভোট গ্রহণে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে।

সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের নলদহ সেন্টারের প্রিজাইডিং অফিসার সুমন রানা বলেন, এই সেন্টারে ৬ হাজার ৪০০ ভোট আছে। সকালে এক ঘন্টা ইভিএম মেশিনে জটিলতা ছিল। এরপর সাড়ে নয়টার দিকে ঠিক করা হয়েছে। বর্তমানে মেশিন ঠিক থাকলেও বারবার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ ভোট সংগ্রহ হয়েছে।

পৌরসভার মেন্ট্রাল গার্লস স্কুলের প্রিসাইডিং অফিসার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার মাসুদুর রহমান বলেন, এই কেন্দ্রে নারী পুরুষ মিলে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫ হাজার হাজার ৮০০ জন। কেন্দ্রে ১৬টি বুথ বসানো হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত প্রায় ১২০ ভোট পড়েছে। নিরপেক্ষ ভোট হচ্ছে। কাউকে এখানে প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হচ্ছে না

নলদাহ সেন্টারে ভোট দিয়ে বাড়ি ফেলছে ফিরছিলেন মোহাম্মদ সোহেল রানা। তিনি বলেন, সকাল থেকে ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, বারবার সমস্যা দেখা দেওয়ায় ভোট দিতে পারছি না। এদিকে সকাল থেকে থেকে কেন্দ্রে প্রচুর ভোটার জড়ো হয়েছে।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, সকাল ৭ টার আগে ভোট দিতে আসছি। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য অনেক আগ্রহ ছিল। কেন্দ্র ভোট দিতে এসে দেখি অনেক ভোটারের লাইন। ১ ২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে পারিনি।

মোটরসাইকেল প্রতিকের সমর্থক পাবনা জেলা আওয়ামী যুব লীগের যুগ্ম আহবায়ক শিবলী সাদিক বলেন, সকাল থেকে বেশিরভাগ জায়গায় ইভিএম মেশিন চালুই করতে পারেনি।

সদরে সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের দুবলিয়া কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে ডাক্তার রুহুল আমিন বলেন, শখ করে সকাল আটটার আগেই কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিতে আসছি। সকাল সাড়ে নয়টায়ও ভোট দিতে পারিনি। আমাদের অনেক ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কখন ভোট দিতে পারব সেটাও বুঝতে পারছি না।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, পাবনার তিন উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্নের লক্ষ্যে বিজিবি, পুলিশ ফোর্স মাঠে রয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাব, আনসার সদস্য ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।

পাবনার অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে। সকালে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হলেও পরে ঠিক হয়ে গেছে। এখন স্বাভাবিক ভাবেই ভোট চলছে। এখন ইভিএম মেশিন স্বাভাবিক রয়েছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে