শিক্ষক দিবস ঘোষণাই হোক মুজিব বর্ষের সেরা উপহার

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০; সময়: ১:২৪ অপরাহ্ণ |
শিক্ষক দিবস ঘোষণাই হোক মুজিব বর্ষের সেরা উপহার

ওয়াসিফ রিয়াদ, রাবি : ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে বাংলার দামাল ছেলেরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সেই অগ্নিঝরা সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সে আন্দোলনে গুলি চালানোর প্রস্তুতি নেয়। এমন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. জোহা বলেছিলেন, ‘ছাত্রদের গায়ে গুলি লাগার আগে সেই গুলি আমার বুকে লাগবে।’ সেই শিক্ষকের কথা জানবে না আগামী প্রজন্ম-এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের ইতিহাস আর কী হতে পারে!

শহীদ ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুবাষিকীকে জাতীয় শিক্ষক দিবস করনের দীর্ঘদিনের দাবি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন থেকে দাবি করে আসলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। ‘জোহা দিবসকে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়াটাই হোক মুজিব বর্ষের সেরা উপহার।’ এমনটাই বলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। শিক্ষকদের সাথে কথা বলে লিখেছেন ওয়াসিফ রিয়াদ ।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শহীদ শামসুজ্জোহা। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহা। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহি যখন শামসুজ্জোহাকে হত্যা করলো তখন ছাত্র আন্দোনের পরিধি বৃদ্ধি পেলো আন্দোলন আরও সুসংবদ্ধ ও জোরালো হয়েছিলো। একই সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনির বর্বরতার চিত্র ফুটে উঠেছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করার ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। স্বাধীন রাষ্ট্রে জোহার অনেক অবদান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি বিষয়টি বিবেচনা করেন তাহলে অবশ্যই দিবসটি জাতীয়করণ সম্ভব।

রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ড. জোহা আমাদের আদর্শ। ‘ড. শামসুজ্জোহা’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দেশের প্রত্যেকটি মানুষের নিটক একটি অনুপ্রেরণার নাম। ১৯৬৯-এ জোহার আত্মত্যাগ গণ-আন্দোলনকে করেছে বেগবান। যা পরবর্তীতে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা আনতে সহযোগিতা করেছিলো। আজকের শিশুরা বেড়ে উঠছে স্বাধীন দেশের হাওয়া আর জলে, সেই শিশু কোনো দিন জানতেও পারবে না কেমন উত্তাল ছিল ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন।

জোহা ছিলেন আমাদের আদর্শ। জোহা দিবসকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে এই ইতিহাসটি বছরের পর বছর নতুন প্রজন্মরা জানতে পারবে। আমরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি করছি এই দিবসটিকে জাতীয়করণ করা হোক। হয়ত আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের বার্তা পৌঁছাতে পারি নি। প্রধানমন্ত্রী চাইলেই দিবসটি জাতীয়করণ সম্ভব।

রাবির ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু বলেন, জোহা শুধু আমাদের নয়, জোহা সকলের। জোহা শুধু আমাদের নয়, জোহা সকলের। কিন্তু দুর্ভগ্যজনক হলেও সত্য শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই আমরা জোহাকে স্বরণ করি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জোহার অবদান অনেক। ৬৯-এর গণ-আন্দোলনকে সফল করে পরবর্তীতে ৭১-এর মুক্তযুদ্ধকে বেগবান করতে জোহার অনুপ্রেরণা অনেক। আমরা চাই জোহা স্যারের মৃত্যুবাষিকীকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক। যাতে করে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে ড. জোহার অবদান এবং আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে।

রাবির মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষাক অধ্যাপক শাহ্ আজম বলেন, ড. জোহা আত্মদানের অন্যতম নিদর্শন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাককালে ড. জোহার যে আত্মদান সেটি বাঙ্গালির স্বাধীকার আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে। পরবর্তীতে ৬৯ এর গণ-আন্দোলনকে সংগবদ্ধ করতে জোহার আত্মদান অনেক অবদান রেখেছে। জোহা হলো আত্মদানের নিদর্শন, জোহা শিক্ষক-ছাত্রের আবেক ভালবাসার একটি বিমূর্ত চিত্র। জোহার এই আত্মদানে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ব হবে এবং দেশের সেবায় নিয়োজিত হবে।

এই দিবসটি যদি জাতীয় করণ হয় এবং প্রতিবছর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয় তাহলে জোহার এই আত্মদানের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের জোহারা জানতে পারবে। জোহার এই আত্মদানে অনুপ্রাণিত হয়ে তরুন সমাজ দেশের কাজে নিয়োজিত হবে। মুজিববর্ষেই জোহা দিবসকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ জানাই। সূত্র- ক্যারিয়ার টাইমস

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে