ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪; সময়: ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ |
খবর > মতামত
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : পৃথিবীর সবকিছুই মহান আল্লাহর সৃষ্টি ও অকৃপণ দান। ভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তাঁর মহিমার নিদর্শন হচ্ছে মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে অবশ্যই জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষণীয় নিদর্শন রয়েছে’ (সুরা রুম, আয়াত ২২)।

ইসলাম মায়ের প্রতি যেমন অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দিয়েছে, তেমনি মাতৃভাষার প্রতিও অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে। মায়ের ভাষায় কথা বলা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মহান আল্লাহ সব নবী-রাসুলকে স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছেন, যাতে তাঁরা স্বীয় জাতিকে দ্বীনের দাওয়াত স্পষ্টভাবে পৌঁছাতে পারেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন, ‘আমি রাসুলগণকে তাঁদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তাদের (দ্বীন) স্পষ্টভাবে বোঝাতে পারেন’ (সুরা ইব্রাহিম, আয়াত ০৪)।

পবিত্র কোরআনের এ আয়াত থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রতিভাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বীনের পথে দাওয়াত দানকারীদের জন্য মাতৃভাষায় পারদর্শিতা অর্জনের নির্দেশনাও পাওয়া যায়। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি আপনার রবের পথে দাওয়াত দিন কৌশল ও উত্তম ভাষণের মাধ্যমে’ (সুরা নাহল, আয়াত ১২৫)।

পবিত্র কোরআনের এসব বর্ণনা দ্বারা এ কথাই স্পষ্ট হয়, স্বজাতিকে উত্তম ভাষণের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়ার জন্য বিশুদ্ধ মাতৃভাষার ওপর পারদর্শিতা অর্জন অনিবার্য। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি আরবদের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জলভাষী।’ রাসুলের এ বাণী থেকে প্রমাণিত, বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল মাতৃভাষায় কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন কারণে তোমরা আরবি ভাষাকে ভালোবাস; যেহেতু আমি আরবি ভাষায় কথা বলি, কোরআন আরবি ভাষায় লেখা এবং জান্নাতের ভাষাও হবে আরবি’ (বুখারি শরিফ)।

সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার কারণ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে– ‘ইহা আমি নাজিল করেছি আরবি ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পার’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত ২)। অর্থাৎ আরবদের কাছে আরবি ভাষাভাষীর নবী ও আরবি কিতাব আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে। কারণ তাদের মাতৃভাষা আরবি; অনারবি ভাষায় নাজিল করলে তাদের বুঝতে ও অনুসরণ করতে সহজ হবে না।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য বাক-স্বাধীনতা ও নিজ ভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয় নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা। পৃথিবীর ইতিহাসে তা অনন্য। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি বর্তমানে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে সারাবিশ্বে।

সুতরাং আসুন, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এ মাসে শপথ নিই মায়ের ভাষাকে ভিনদেশি আগ্রাসনমুক্ত করার। পরিহার করি ভিনদেশি ভাষাকে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা। মাতৃভাষার বিশুদ্ধ চর্চা ও প্রয়োগে সচেষ্ট হই এবং বিশাল এ নিয়ামতের জন্য মহান আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করি। সেই সঙ্গে যারা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে শাহাদাতবরণ করেছেন, তাদের রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করি।

অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ শাহ জালাল: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; আহ্বায়ক, সুফিবাদি নাগরিক মজলিস-সুনাম

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে