পুঠিয়ার সাবেক ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২০; সময়: ৯:২৫ অপরাহ্ণ |
পুঠিয়ার সাবেক ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নিজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও দুদকের তদন্ত ঠেকাতে সর্বোচ্চ আদালতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন রাজশাহীর পুঠিয়া থানার সাবেক ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ। একটি হত্যা মামলার এজাহার বদলে দেওয়াসহ সব অভিযোগ তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়ে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে সাকিল উদ্দিন আহমেদের লিভ টু আপিল খারিজ হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়। ফলে সাকিলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আইন, বিধি অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশনকে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে যে নির্দেশনা এসেছিল হাই কোর্ট থেকে, তাই বহাল থাকল বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। সাকিল উদ্দিন আহমেদের আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও আব্দুল মতিন খসরু। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া পরে সাংবাদিকদের বলেন, সাতনম্বর বিবাদী হিসেবে সাকিল উদ্দিন আহমেকে মূল রিট মামলায় পক্ষ করা হয়েছিল। রিট মামলাটি চলমান থাকা অবস্থায় তিনি মামলাটি কোনো রকম মোকাবেলা করেননি। পরবর্তীতে গত বছর ১ ডিসেম্বর দেওয়া রায়ে ৫ দফা নির্দেশনা ছিল আইজিপি, দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে। বিশেষ করে পিবিআইএর কাছে মামলাটি স্থানান্তরের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছিল। আমরা জেনেছি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পিবিআইর কাছে মামলার ফাইল ট্রান্সফার করা হয়েছে যথারীতি। একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন বলেও আমরা জেনেছি। তদন্ত কার্যক্রম তারা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই আইনজীবী বলেন, “তদন্ত চলমান থাকা অবস্থায় সাকিল উদ্দিন আহমেদ হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে একটি আপিল দায়ের করেছিলেন। যেহেতু তদন্ত চলছে, তাই আপিল বিভাগ তার আপিলটি খারিজ করে দিয়েছে। তার মানে হাই কোর্ট দুদককে তদন্ত করতে যে নির্দেশনা দিয়েছিল, সে তদন্ত চলবে। এবং তার বিরুদ্ধে এতদিন বিভিন্ন রকম যে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শকের প্রতি যে নির্দেশনা ছিল, সেটিও চলবে।

পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহার বদলে দেওয়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তির মেয়ের করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে গত বছর ১ ডিসেম্বর পর্যবেক্ষণসহ রায় দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

রায়ে বলা হয়, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতো একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নিঃসন্দেহে গুরুতর, যা দণ্ডবিধির ১৬৬ ও ১৬৭ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দণ্ডবিধির ওই ধারা দুটি দুদক আইনেও তফসিলভুক্ত হওয়ায় রাজশাহীর মুখ্য বিচারিক হাকিমকে তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং এ সংক্রান্ত নথি দুদকে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দুদককে আইন ও বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

রায়ে আরও বলা হয়, সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নুরুল ইসলামের মেয়ে, তার অধীনস্ত পুলিশসদস্যসহ একাধিক ব্যক্তি, এমনকি তার শাশুড়িও বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন। তারা এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছেও লিখিত আবেদন করেছেন। সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগের দ্রুত তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হল।

গত বছর ২২ জুলাই দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত ‘এজাহার বদলে দিলেন ওসি’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১১ জুন পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার একটি ইটভাটা থেকে পুঠিয়া উপজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরে ১৮ জুন পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নুরুল ইসলামের সমকামিতার বদ অভ্যাস ছিল। এলাকার এক কিশোরকে তিনি এ কাজে বাধ্য করতেন। ১০ জুন রাতেও নুরুল ইসলাম ওই কিশোরের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে পড়ে গেলে ওই কিশোর তাকে ইটের আঘাতে হত্যা করে। ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

পরে ঘটনায় করা মামলার এজাহার বদলে দেওয়া ও এই বিষয়ে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানা রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট রুল দিয়ে ওই অভিযোগ অনুসন্ধান করে রাজশাহীর মুখ্য বিচারকি হাকিমকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়।

ওই আদেশের পর রাজশাহীর মূখ্য বিচারকি হাকিম ঘটনা তদন্ত করে হাই কোর্টে প্রতিবেদন দেয়। গত বছর ২৭ নভেম্বর ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয়। প্রতিবেদনে এজাহার বদলে দেওয়ার ঘটনায় ওসি সাকিল উদ্দিন আহমদসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা উঠে আসে। এরপর হাই কোর্ট ১ ডিসেম্বর রায় দেয়। সে রায়ের বিরুদ্ধেই আপিল করেছিলেন সাকিল উদ্দিন আহমদ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে