বৃষ্টি ভেজার গল্প

প্রকাশিত: ০৬-০৫-২০২০, সময়: ১৯:৪০ |
Share This

টানা তিন রাত ঘুম নেই চোখে। সানজিদা করোনায় আক্রান্ত। বংশীয় সূত্রে আরো একটি রোগ অনেক ছোট থেকেই উপহার পেয়েছিল সে। সেটা হলো এ্যাজমা। অসুখটার কারণে প্রায় সময়ে শ্বাসকষ্টে ভোগে সানজিদা। তার উপরে কনোনার হানা। অবস্থা যে ভয়াবহ হবে তা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলো আসাদুজ্জামান নুর। গত রাতটা আরো বেশি ভয়ঙ্কর কেটেছে। নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারছে না বলে সানজিদাকে রাখা হয়েছে ভেন্টিলেটারে।

হাসপাতালে যাওয়ার কোন উপায় নেই। কারো প্রবেশের অনুমতি নেই। সানজিদার পরিবারের লোকজনও যেতে পারেনি। খোঁজ নিতে হচ্ছে ফোনেই। আর এ কাজটি করছে সানজিদার ছোট বোন সোমা। যতোবারই সে হাসপাতালে ফোন করে ততোবারই নুরকে সানজিদার অবস্থা জানায়। সোমা জানে, তার মতোই নুর সানজিদাকে ভালোবাসে। হয় তো বেশিই।

উৎকণ্ঠা নিয়ে নুরও তাকিয়ে থাকে মোবাইলের দিকে। গেল তিনটা দিন একটু সময়ের জন্যও নুর হাতছাড়া করেনি মোবাইলটা। এমন কি বাথরুমেও সঙ্গে নিয়ে গেছে।
দুপুর বিছানায় শুয়ে মোবাইলটা হাতে তুলে নেয়। সানজিদা কেমন আছে জানতে ভিষণ ইচ্ছে করছে। সেই যে রাতে খবর পেয়েছে সানজিদাকে ভেন্টিলেটারে রাখা হয়েছে। রাত পেরিয়ে সকাল হয়েছে। এখন তো দুপুর। কিন্তু সোমার নিষেধ আছে। ফোন দেয়া যাবে না। পরিবারের অন্যসব সদস্যদের সামনে কথা বললে সমস্যা।

ফোনের বাটন চাপতে চাপতে সানজিদার নাম্বারটা আসে। এস ডট এম ডট এল। এখনকার ছেলেমেয়েরা গোপন নাম্বার এভাবেই সেভ করে। এস তে সানজিদা, এম তে মাই আর এল তে লাভ। সানজিদা মাই লাভ।
এস ডট এম ডট এল। ওইটুকু জায়গায় যেনো নুরের চোখ আটকে যায়। এভাবে কিছুক্ষণ। হঠাৎ বুকের ধুকপুক বাড়িয়ে দিয়ে মোবাইল ফোনটা উঠে বেজে। মোবাইলের পর্দায় ভেসে উঠে সোমা। বিছানা থেকে এক রকম লাফ দিয়ে উঠে সে। দ্রুত বাটন চেপে কানে ধরে। হ্যাঁলো, হ্যাঁলো, হ্যাঁলো।

ওপার থেকে কোন কথা আসে না।
হ্যাঁলো, কে সোমা?
না, কেউ কথা বলছে না।
নুরের শরীর যেনো ঠাণ্ডা হয়ে এলো।
হ্যাঁলো সোমা। কি ব্যাপার কথা বলছো না যে?
কোন সাড়া নেই।
হ্যাঁলো, সোমা শুনতে পাচ্ছো?

ওপার থেকে কান্নার শব্দ। মাথাটা কেমন যেনো ঘুরে উঠে নুরের। হ্যাঁলো, এই যে সোমা, শুনতে পাচ্ছো? সানজিদা কেমন আছে? ওর কিছু হয়নি তো?
না, কেউ কথা বলছে না। শুধু কান্নার শব্দ।
নুরের বুকের কাঁপন যেন বেড়ে যায়। সেই কাঁপন ছড়িয়ে পড়েছে শরীরেও। ওপার থেকে শব্দ ভেসে আসে। হ্যাঁলো। নুর ভাইয়া।
কে সোমা?
হুম।
সানজিদা কেমন আছে?
একটা ভালো সংবাদ আছে। আপুকে ভেন্টিলেটার থেকে বের করা হয়েছে। ডাক্তাররা বলেছে আপুর অবস্থা উন্নতির দিকে। ভয়ের কিছু নেই।
বুকের কোথায় যেন একটা শীতলতা অনুভব করে নুর। তাহলে কাঁদছে কে?
সোমা হাসে। মা। মায়ের একটা আজব স্বভাব আছে। কষ্ট পেলেও কাঁদে, খুশির সংবাদ পেলেও কাঁদে। মা এখন খুশির সংবাদে কাঁদছে। ঠিক আছে ভাইয়া, এখন ফোন রাখছি। বাড়ি ভর্তি মানুষ। পরে কথা হবে।
সোমা ফোন রেখে দেয়। শরীরের কাঁপুনি থেমে গেছে। বাইরে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। নুর দরজা খুলে ছুটে যায় রাস্তায়। সানজিদার মায়ের মতো আকাশও কাঁদছে। সেই কান্নায় নুর ভিজছে। এমন কান্না গায়ে মাখাতে বেশ ভালোলাগে।

লেখক ও সাংবাদিক ইলিয়াস আরাফাত

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
উপরে