ধান কাটতে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনেই ঝুঁকছে বরেন্দ্রের কৃষক

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২০; সময়: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
ধান কাটতে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনেই ঝুঁকছে বরেন্দ্রের কৃষক

আসাদুজ্জামান মিঠু, তানোর : রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো কাটা-মাড়াই প্রথম দফা শেষ হয়েছে। তবে রবিশস্য বা আলুর উঠানোর পরে রোপন করা বোরো ধান আবারোও দ্বিতীয় দফা কাটা মাড়াই চলছে পুরো দমে। তবে এবার কৃষি শ্রমিক দিয়ে নয়,বেশি ভাগ জমিতে ধান কাটতে ব্যবহার বেড়েছে কম্বাইন হারভেষ্টর মেশিনের।

কম্বাইন হারভেষ্টরের মাধ্যমে ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাভর্তি হচ্ছে খুব সহজেই। কৃষিশ্রমিক ও সময় দুইটোই কম লাগায় বেশ সুফল পাচ্ছেন কৃষকেরা। অল্প সময়ে ঘরে ধান তুলতে ধান কাটা অটোমেটিক মেশিনের দিকেই ঝুঁকেছেন কৃষকেরা।

তাই চলতি বোরো মৌসুম থেকে রাজশাহী অঞ্চলে কৃষকের কাছে এই মেশিন অল্প সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাড়ছে চাহিদাও।

চলতি বোরো মৌসুমে দেশে করোনা ভাইরাসের অঘোষিত লকডাউন চলছিল। তাই অল্প সময়ে যেন কৃষকেরা তাদের কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারে সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কৃষি মন্ত্রলয় ৫০ ভাগ ভুর্তিকির মাধ্যমে কৃষকেরা কাছেও কম্বাইন হারভেষ্টর মেশিন বিতরণ শুরু করেন।

এর ধারাবাহিগতায় শুধু রাজশাহী জেলায় চলতি রোবো মৌসুমে ৫০ ভাগ ভূর্তিকি দিয়ে কৃষকের কাছে ২৭ টি কম্বাইন হারভেষ্টর মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। এর আগের বছর দেয়া হয়েছে ২৫টি।

আর শুধু ধান কাটা যাবে এমন মেশিন কৃষকদের মধ্যে দেয়া হয়েছে আরো ৩৭টি। সর্বমোট জেলায় এখন ধান কাটা মেশিনের সংখ্যা ৮৯ টি। রাজশাহী জেলা কৃষিসম্প্রাসারণ অধিদপ্তর সূতে,এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি মৌসুমে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় সাতজন কৃষককে ১৪ লক্ষ টাকায় ৫০% ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে উপজেলার প্রেমতলি এলাকার হরিণ বিষকা গ্রামের কৃষক মেহেদি হাসান শিমুল খান ও একই গ্রামের ঈমান সাদি হাসান শিশির নামের কৃষক। এরা চলতি বছর প্রায় ২৯ লাখ টাকা মূল্যের কম্বাইন হারভেস্টার সরকারে দেয়া ৫০% ভর্তুকি সুবিধা পেয়ে মাত্র ১৪ লাখ টাকায় পেয়েছেন।

সম্প্রতি কথা হয়, কৃষক মেহেদি হাসান শিমুল খানের সঙ্গে। তিনি বলেন,সরকারের ভর্তুকি দেয়া কারণে অর্ধেক দামে মেশিন পেয়েছি। চলতি বোরো মৌসুম প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দিয়েছি একেবারে অল্প সময়ে। বর্তমানে গোদাগাড়ী উপজেলা ধান কাটা-মাড়াই শেষ করে তানোর উপজেলা কালিগঞ্জ এলাকায় আলু জমিতে পরে রোপন করা বোরো ধান কাটা মাড়াই চলছে। কৃষকের কাছে এ মেশিনের বেশ জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

কৃষক শিমুল খান আরো বলেন, এ মেশিন দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ধান কাটা যাবে এক একর এর জন্য ডিজেল খরচ হবে মাত্র ৮ লিটার। তাই অতি অল্প সময় ও কম খরচে কৃষক তার ধান ঘরে উঠাতে পারবে। যে কোন উপজেলার কৃষকেরা এ মেশিনের সুবিধা নিয়ে ধান কাটে নিতে পারবেন প্রয়োজনে-০১৯৬৯-১১৪৮৫৪ নম্বর কল দিয়ে পৌচ্ছে যাবে কৃষকের ক্ষেতে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম জানান,করোনা মহামারির এই সময়ে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। সে সময় শ্রমিক সংকট ও আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে কৃষক ধান কাটতে হিমসিম খাচ্ছিল। তাই সরকার (৫০% ভর্তুকিতে) কৃষকের মাঝে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করা হচ্ছে। যাতে অতি অল্পসময়ে কৃষক ধান ঘরে উঠাতে পারে। যার কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে এ মেশিনের জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কৃষকের কাছে।

তিনি আরো বলেন,২০১৯-২০ অর্থ বছরের উন্নয়ন সহায়তার আওতায় ১৪ লক্ষ টাকা মূল্য ধরে ৫০% ভর্তুকিতে উপজেলায় সাতজন কৃষককের মাঝে কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে। এর একটির দাম ৩০ লাখ অপরটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন,এ মেশিনের আরো অনেক সুবিধা রয়েছে। মেশিনের ধান কাটা মাড়াই ও বস্তা ভর্তি হওয়াই ধানের রংঙ ভাল থাকে। এছাড়া গম ও কাটা মাড়াই হবে একই ভাবে। কৃষিশ্রমিক নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা থাকবেনা। যেখানে কৃষি শ্রমিক দিয়ে এক বিঘা ধান কেটে ঘরে তুলতে তিন হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে থাকে। আর এ মেশিনের মাধ্যমে মাত্র এক হাজার ৫০০ টাকায় এক বিঘা ধান কাটা মাড়াই করা হয়।

ঠিক মত এ মেশিন চলছে এক বছরের মধ্যে কৃষকেরা মেশিনের আসল টাকা তুলে নিতে পারবেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে