উচ্চ মাধ্যমিকে থাকতেই পৌর কাউন্সিলর হন কামরান

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২০; সময়: ১:৪০ অপরাহ্ণ |
উচ্চ মাধ্যমিকে থাকতেই পৌর কাউন্সিলর হন কামরান

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দুবারের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ছিলের ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সহজাত সারল্যে তিনি সবাইকে কাছে টানতে পারতেন। এ কারণে সিলেটবাসীর ভালোবাসা পেতে সক্ষম হয়েছিলেন কামরান। নগরবাসী ভালোবেসে তাকে বহুবার নির্বাচিত করেছে। সিলেটবাসী ওয়ার্ড কমিশনার থেকে বারবার মেয়রের চেয়ারে বসান কামরানকে।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। সিলেট পাইলট স্কুলে ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি কামরানের। ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। এর পর ‘৭৩-এ সিলেট পৌরসভা নির্বাচনে কমিশনার পদে বিপুল ভোটে জয়ী হন কামরান। তখন তিনি মাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। সিসিকে আজ পর্যন্ত এত অল্প বয়সে জনপ্রতিনিধি হতে পারেননি কেউ।

সিলেটের জিন্দাবাজার দুর্গাকুমার পাঠশালা ছিল তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরপর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন কামরান। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময়ই ৬৪২ ভোট পেয়ে তৎকালীন সিলেট পৌরসভার ৩নং তোপখানা ওয়ার্ড থেকে দেশের সর্বকনিষ্ঠ পৌর কমিশনার নির্বাচিত হন তিনি। কমিশনারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই কামরান এমসি কলেজে বিএ-তে ভর্তি হন। মদন মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে স্নাতক শেষ করেন তিনি।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর পৌরসভার চেয়ারম্যান থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র, এর পর নির্বাচিত মেয়র হিসেবে তার নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।

সদা হাস্যোজ্জ্বল কামরান মাথায় সাদা টুপি পরতেন, মুখে কালো গোঁফ। চোখে সাদা চশমা পরা লোকটি ছিলেন সিলেটের মানুষের নয়নমণি। ধীরস্থির প্রকৃতির কামরান সর্বদা মানুষের পাশে ছিলেন। তিনি ছিলেন নগরবাসীর বিপদের আশ্রয়স্থল। এ কারণে ১/১১-এর সময় জেলে থেকেও মেয়র নির্বাচিত হন।

রাজনীতিবিদ কামরান জনপ্রতিনিধি হিসেবেও ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। ১৯৭৩ সালে সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান জনতার কামরান।

আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। টানা ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। মাঝপথে খানিকটা বিরতি ছিল প্রবাসে যাওয়ায়। সেবার নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। প্রবাস থেকে ফিরেই ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০০২ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়। তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। ২০০৩ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসে নাম লেখান তিনি।

১/১১-এর সময়ে দুবার কারাবরণ করেন কামরান। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তখন ১৮ মাস তিনি কারাবন্দী ছিলেন। কারাগারে থেকেই ২০০৮ সালের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেন কামরান। নির্বাচনের দিনও তিনি কুমিল্লা কারাগারে বন্দী ছিলেন। এ নির্বাচনে ৮০ ভাগ ভোটই কামরানের বাক্সে জমা পড়েছিল। সিটি করপোরেশনের সকল ভোটকেন্দ্রে বিজয়ী হয়ে তিনি নজির সৃষ্টি করেন।

তবে সিলেটের জনপ্রিয় এ নেতা ২০১৩ সালে সিলেট সিটি করপোরেশেনের তৃতীয় নির্বাচনে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে যান। ২০০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও তিনি আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হারেন।

আর করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়ে রোববার দিবাগত রাত ৩টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান কামরান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে