ভাবমূর্তি সংকটে রাজশাহীর মেয়ররা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২০; সময়: ৯:৪৮ অপরাহ্ণ |
ভাবমূর্তি সংকটে রাজশাহীর মেয়ররা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর ১৪ পৌরসভার মধ্যে জানুয়ারিতে ভোট হবে ১৩টিতে। নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক এমন ঘোষণার পর মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে বর্তমান মেয়ররা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। মেয়ররা ব্যানার-ফেস্টুন ছড়িয়েছেন মোড়ে মোড়ে। ভোটারদের কাছে না গিয়ে তারা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতে ঘন ঘন ঢাকায় ছুটছেন।

কিন্তু বর্তমান পৌর মেয়রদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই গত ৫ বছরে নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় জমেছে। অসদাচরণ, কাক্সিক্ষত সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়া, অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতার অভাব, বরাদ্দ ও প্রকল্পের টাকার বেশির ভাগ লোপাট ও পৌরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে চরম উদাসীন থেকে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন তারা। উন্নয়ন না হওয়ায় রাজশাহীর অধিকাংশ পৌরসভার চেহারা প্রায় বিবর্ণ। উন্নয়ন বলতে কিছুই হয়নি। অধিকাংশ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনভাতা বাকি ১২ থেকে ১৮ মাস। রাজশাহীর ১৪টির মধ্যে বাঘা, তানোর, নওহাটা ও চারঘাটে রয়েছেন বিএনপির মেয়র। বাকি ১০টিতে আওয়ামী লীগের মেয়র।

গোদাগাড়ী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি। আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম বাবু ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মেয়র হন। গোদাগাড়ী প্রথম শ্রেণির পৌরসভা; কিন্তু কোথাও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যে বরাদ্দ এসেছে, এর বেশির ভাগই লোপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থ ব্যয়ে অস্বচ্ছতা ও টেন্ডার কারচুপির অভিযোগ।

তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বিএনপি নেতা। পৌরবাসীর অভিযোগ, গোটা পৌর এলাকা যেন একটা ভাগাড়। একটা বড় বরাদ্দ পেয়েই সম্প্রতি কোটি টাকা দামের গাড়ি কিনেছেন। রাতারাতি বানিয়েছেন নতুন বাড়ি। দুদক থেকে তার সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। অন্যদের মতো সরকারি বরাদ্দ লোপাট ও টেন্ডার দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধেও। তবে মিজানের দাবি, প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।

মুণ্ডুমালা পৌরসভার মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে জলবায়ু প্রকল্পের বিপুল টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, এলজিএসপিসহ বিভিন্ন খাতে আসা বরাদ্দের বেশির ভাগই পৌরসভার উন্নয়নে ব্যয় করেননি বলে পৌরবাসীর অভিযোগ।

দুর্গাপুর পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জল হোসেন দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। পৌরবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন তৈরির কারণে বারো মাসই পৌরবাসী কাদাপানিতে ডুবে থাকছেন। সড়কে বাতি নেই। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলো সংস্কারের কোনো চেষ্টা করেননি। সরকারি বরাদ্দ ও প্রকল্পের টাকা ব্যয়ে তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধেও চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে।

কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে পৌরবাসীর অভিযোগের যেন অন্ত নেই। পৌরবাসী সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে দখল ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিশাল ফিরিস্তি তুলে ধরেন। পৌরসেবার চেয়ে বালুঘাট দখল ও বালু ব্যবসার দিকে তার বেশি মনোযোগ।

কাকনহাট পৌরসভাটিও প্রতিষ্ঠা পায় প্রায় ২৫ বছর আগে। বর্তমান মেয়র আবদুল মজিদ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রথম প্রশাসক হন। এরপর আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সেই থেকে গত ২৫ বছর একাধারে মেয়র হয়ে আছেন আবদুল মজিদ। তার বিরুদ্ধে অধিকাংশ বরাদ্দ লোপাটের অভিযোগ পুরনো। সম্প্রতি একটি উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা তছরুপের অভিযোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।

মেয়র আবদুল মালেকের সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ভবানীগঞ্জ পৌরবাসী অতিষ্ঠ বলে জানিয়েছেন উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। নাম প্রকাশ না করে তারা বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলে মালেক এবার বিপুল ভোটে হারবেন।

আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীর বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ গুরুতর নানাবিধ আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পৌরবাসীর সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পুরনো। সেবাপ্রার্থীদের মারধরও করেন মাঝেমধ্যে। মুক্তার আলীর দাবি, তিনি পৌরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছেন। কোনো অনিয়ম করেন না।

রাজশাহীর কেশরহাট পৌর মেয়র শহীদুজ্জামানের বিরুদ্ধেও দখলসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ করেছেন খোদ দলেরই নেতাকর্মীরা। শহীদ দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র আছেন। শহীদের দাবি, দলের একাংশ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।

রাজশাহীর নির্বাচনমুখী ১৩ পৌরসভার বর্তমান মেয়রদের আবারও মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে দলের ভরাডুবির ব্যাপক আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি বলেন, দলের অধিকাংশ মেয়রের ভাবমূর্তি তলানিতে।

আসাদের মতে, জেলার যে ১০টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র রয়েছেন তাদের মধ্যে ১০টিতেই প্রার্থী বদল করা জরুরি। উন্নয়নমুখী সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। ভাবমূর্তি সংকটের কারণে দলের ভরাডুবি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র- যুগান্তর

  • 215
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে