রাজশাহীর গ্রামীণ জনপদের ভরসা কমিউনিটি ক্লিনিক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২০; সময়: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর গ্রামীণ জনপদের ভরসা কমিউনিটি ক্লিনিক

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় যখন শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তীব্র চিকিৎসক সঙ্কট, তখন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে নির্দ্বিধায় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। করোনা সচেতনতাসহ রাজশাহীতে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামের লোকেরা পাচ্ছেন ত্রিশ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা। জেলাজুড়ে লকডাউনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য জনগণের নিকট বাড়ির কাছের কমিউনিটি ক্লিনিকই ছিল ভরসাস্থল। লকডাউন শিথিল হওয়ার পরেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ও সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো বাদেও ২৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জেলায় প্রায় ১৪ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় এখনো সীমিত পরিসরে চলছে বেসরকারি হাসপাতালের কার্যক্রম। গ্রামীণ জনপদের গরীব মানুষেরা কমিউনিটি ক্লিনিকেই সাধারণ সেবা পেতে আগ্রহী। সম্প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে যান রাজশাহীর পবা উপজেলার মধুসুদনপুর গ্রামের ষাটোর্দ্ধ জুলেখা বানু। এসময় জুলেখা বানু বলেন, ‘কঠিন অসুখেও আমরা বড় ডাক্তারের কাছে যেতে পারছি না। তবে এখানেই (কমিউনিটি ক্লিনিক) পরামর্শের সাথে ওষুধও পাচ্ছি।’ এখনতো মুখোশ (মাস্ক) পরে আসতে হচ্ছে।

জুলেখা বানুর মতই এমন ভরসায়, স্বাস্থ্যসেবা পেতে জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকে যাচ্ছেন গ্রামের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। সেখানে জ্বর, সর্দি, কাশির পাশাপাশি মাতৃকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সকল প্রকার রোগের প্রাথমিক চিকিৎসাও পাচ্ছেন তারা। নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ থাকলেও দেশের সংকটময় মুহুর্তে মানুষের সেবা দিতে পেরে খুশি মধুসুদনপুর কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার মোহাম্মদ নূর আলমসহ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীরা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের অধীনে রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইননেশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ নামক প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতের নাগালে পোঁছে দেয়ার লক্ষে বর্তমান সরকার সারাদেশে স্থাপন করেছে কমিউনিটি ক্লিনিক। যার ধারাবাহিকতায় রাজশাহী জেলায় ২৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। এই কিøনিকগুলোর কার্যক্রমকে আরো বেগমান করতে সরকার ওষুধ সরবরাহ, জনবল নিয়োগ, ডাক্তার নিয়োগসহ লজিষ্টিক সার্পোট দিয়ে আসছে। বর্তমানে ক্লিনিকগুলোতে ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও মডেম পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।

পবার মধুসুদনপুর কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার মোহাম্মদ নূর আলম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিশু রোগের সমন্বিত চিকিৎসা সেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত শিক্ষা ও পরামর্শ, সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। তিনি কোভিড-১৯ এর প্রকোপ এড়াতে রুগি এবং আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে এই ক্লিনিকে প্রতিমাসে প্রায় ১১শ’ এর ওপরে রুগি চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে ১১৪৫ জন রুগি সেবা নিয়েছেন। প্রতিমাসে গড়ে ৫০ জন গর্ভবতী ও প্রসূতি মাতা চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। আমাদের এখতিয়ারের বাইরে হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রুগি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে অনলাইনে আমাদের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত মনিটরিং হচ্ছে।

পবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. রাবেয়া বশরি বলেন, পবা উপজেলার ৩৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সেবায় আশানুরুপ কাজ করছেন। করোনা সংকটকালেও এই উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর দায়িত্বরতরা জীবনের ঝুকি নিয়ে রুগিদের সেবা দিয়ে গেছেন। এমনকি অনেক রুগির বাড়িতে গিয়েও তারা সেবা দিয়েছেন। হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে সংশ্লিষ্ট রুগিরাও খুশি। যেসব রুগিকে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবা দেয়া যাচ্ছে না প্রোভাইডারগণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। বর্তমান সরকারের একটি বড় সফলতা কমিউনিটি ক্লিনিক।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি করোনা সচেতনতায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। তিনি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজিপুর থেকে যারা এসেছিলেন, তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও জাতীয় কার্যক্রমগুলোতেও এসব কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবায় ভাল অবদান রাখছে।

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যানুযায়ী, প্রায় ছয় হাজার জনগণের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। দেশের সকল এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। আর এ লক্ষ্যে জেলার নয়টি উপজেলায় স্থাপন করা হয় ২৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক। যারমধ্যে পবা উপজেলায় ৩৩টি, তানোরে ১৯টি, মোহনপুরে ১৯টি, গোদাগাড়িতে ৩৪টি, দূর্গাপুরে ১৯টি, পুঠিয়ায় ২৮টি, চারঘাটে ২৩টি, বাঘায় ২০টি, বাগমারায় ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।

জানা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। এ বছর প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ১০ হাজার ৭৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। পরে বিগত জোট সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের নবম একনেক সভায় ‘রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ (কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প) শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়। এ সকল ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডারকে (সিএইচসিপিকে) তিন মাসব্যাপী চিকিৎসা সেবার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এরই ভিত্তিতে তারা রুগিদের প্রাথমিক সেবা প্রদান করে থাকেন।

  • 367
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে