বরেন্দ্রের মাঠে মাঠে সুবাস ছড়াচ্ছে চিনি আতব

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২০; সময়: ১২:৩৭ অপরাহ্ণ |
বরেন্দ্রের মাঠে মাঠে সুবাস ছড়াচ্ছে চিনি আতব

আসাদুজ্জামান মিঠু : বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠে এখন আমন কাটা-মাড়ায়ের ভরা মৌসুম চলছে। কৃষকের ঘরে উঠতে লেগেছে নতুন ধান। তবে, এখন মাঠে মাঠে সুবাস ছড়াচ্ছে চিনি আতব। সে সাথে রঙিন হয়ে উঠেছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। এবার বরেন্দ্রে কৃষকের হাসি ফোটাবে চিনি আতব। চলতি মোৗসুমে সুগন্ধী চিনি আতব ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আবহাওয়া অনুকুল ও পোকার আক্রমণ কম থাকায় চলতি মৌসুমে ক্ষেতে চিনি আতবের মাথা ভাল রয়েছে। ফলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। চিনি আতবের চাহিদা থাকায় বাজারে দামও ভাল। আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হলেও চিনি আতব কৃষকের ঘরে উঠতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। সময় লাগলেও আতবেই স্বর্প্ন গুণছে কৃষকেরা।

বরেন্দ্রে কৃষকেরা জানান, গত কযেক বছরে বরেন্দ্র অঞ্চলে আতব চাষ করে পথে বসেছিল কৃষকেরা। প্রাকৃতিক দুযোর্গ আর পোকার আক্রমনের কারণে ঘরে ধান তুলতে পারিনি কেউ। কিন্ত গত বছর থেকে আবার আতব চাষে ঝুকেছেন কৃষকেরা। কৃষকেরা জানান, অন্য মোটা ধান চাষ করে দাম পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে। আর আতবের চাহিদা থাকায় দাম ভাল। তাই অনেকে এবার মোটা ধানে পাশাপাশি আতব চাষ করেছেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসারণের তথ্য অনুযায়ী জেলায় ২০১৫ সাথে আতব চাষাবাদ হয়েছিল ৭২০ হেক্টর জমিতে। ২০১৬ সালে কমে ৬৫০ হেক্টর হয়। ২০১৭ সালে আরো কমে চাষাবাদ হয় ৫২০ হেক্টর। ২০১৮ সালে চাষাবাদ হয়েছে ৮৫০ হেক্টর।

২০১৯ সালে চাষাবাদ হয়েছে ৯১৭ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর আরো ২০০ হেক্টর বেড়ে চাষাবাদ হচ্ছে এক হাজার ১১৭ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাটোর ও নওগাঁ জেলায় চিনি আতব চাষাবাদ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টরে বেশি জমিতে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি আতব চাষ হয়েছে নওগাঁ জেলার মাঠে।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউপির বহরইল গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিব চলতি মৌসুমে ১৮ বিঘা জমিতে চিনি আতব চাষ করেছেন। তার ক্ষেতে ধানের মাথা ভাল আছে। বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।

তিনি জানান, অনুকুল আবহাওয়া থাকায় ক্ষেতে আতবের মাথা ভাল আছে। তাই অন্যসব বছরের চেয়ে ফলন ভাল হবে। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ (৪০ কেজি ) আতব ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায়।

মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক বুলবুল আতব চাষ করেছেন তিন বিঘা। কৃষক বুলবুল বলেন, গত বছর দুই বিঘা জমিতে আতব চাষ করে ফলন ও দাম দুইটো ভাল পাওয়া গেছে। তাই চলতি মৌসুমে জমির পরিধি বাড়াই এবার তিন বিঘা বিঘা জমিতে আতব আবাদ করা হয়েছে।

আতব চাষ শুরু তানোরের বুড়ান উদ্দিনই ও বুলবুল একাই নয়, বরেন্দ্র অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আবহাওয়্ াঅনুকুল থাকায় মোটা ধানের পাশাপাশি চিনি আতব চাষ করেছেন শত শত কৃষক। বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রতিটি মাঠে এবার মোটা ধানের পাশাপাশি চিনি আতব চাষা করেছেন কৃষকেরা। এখন সে চিনি আতবের সুগন্ধীতে ভরপুর হয়ে উঠেছে বরেন্দ্রে আকাশ-বাতাস।

রাজশাহীর তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম জানান, আতব চাষ প্রতিবছরেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর প্রাকৃতিক দুযোর্গ ও পোকার আক্রমণ কম। এর আগে কয়েক বছরে প্রাকৃতিক দুযোর্গের কারণে আতব চাষীরা লোকসান গুনেছিল। সেগুলো এখন কেটে উঠেছে কৃষকেরা। যার কারণে আবারো আতব চাষে ঝুকছেন।

তিনি আরো জানান, এক বিঘা আতব চাষ করে ১২ থেকে ১৫ মন পর্যন্ত পাওয়া যায়। বাজারে এর দাম প্রতি মণ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। তাই অন্য সব ধানের চেয়ে আতব চাষ করে বেশি লাভবান হন কৃষকেরা।

  • 25
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে