শীতকালে গরম পানিতে গোসল করবেন কেন?
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সুস্থ থাকার প্রয়াসে হোক অথবা ঠান্ডাভীতির কারণে হোক, শীতকালে অনেকেই প্রতিদিন গরম পানি দিয়ে গোসল করেন। এসময় আমরা শিশু ও বৃদ্ধকে ঠান্ডা পানিতে গোসল করানোর কথা ভাবতেই পারি না। কারণ আমাদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, শীতকালে শিশু ও বয়স্কদের জন্য ঠান্ডা পানি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু কেবল শিশু-বয়স্ক নয়, তরুণরাও গরম পানি দিয়ে গোসল করে উপকার পেতে পারেন। এখানে শীতকালে সকল বয়সের লোকেরা গরম পানিতে গোসল করে যেসব উপকারিতা পেতে পারেন তার একটি তালিকা দেয়া হলো।
* ক্যালরি পুড়ে: আপনি হয়তো কল্পনাও করেননি যে গরম পানিতে গোসল করলে ক্যালরি পুড়ে। কিন্তু লাফবোরাফ ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় এটা সত্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। গবেষণাটিতে দেখা গেছে, এক ঘণ্টা গরম পানিতে (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) শরীর ভেজানোতে আধঘণ্টা হাঁটলে যতটুকু ক্যালরি পুড়ে ততটুকু ক্যালরি পুড়েছে। কিন্তু তাই বলে আপনাকে এ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে না যে গরম পানি দিয়ে গোসলকে এক্সারসাইজের বিকল্প হিসেবে নিতে। শরীর ফিট রাখতে এক্সারসাইজের বিকল্প নেই। শীতকালে অলসতার প্রবণতা বাড়ে বলে শরীরের ক্যালরি পোড়ানোর হার কমে যায়। তাই এসময় গরম পানিতে গোসল সেরে কিছু ক্যালরি পোড়াতে পারলে মন্দ কি!
* রক্ত শর্করা কমে: লাফবোরাফ ইউনিভার্সিটির গবেষণাটি এটাও ধারণা দিয়েছে যে গরম পানিতে গোসল করলে রক্ত শর্করার মাত্রা কমতে পারে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের খাবার খাওয়ার পর গরম পানিতে গোসল করতে বলা হয়। দেখা গেছে, এক ঘণ্টা গরম পানিতে (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শরীর ডুবিয়ে রাখাতে রক্ত শর্করার মাত্রা সাইকেল চালানোর চেয়ে ১০ শতাংশ কমে গেছে। এই গবেষণার একজন গবেষক জানান, ‘খাবার খাওয়ার পর আমাদের শরীরে রক্ত শর্করার যে বৃদ্ধি হয় তা টাইপ ২ ডায়াবেটিস ডেভেলপ করতে পারে। তাই এর মাত্রা কমিয়ে শরীরকে নিরাপদে রাখতে পারেন। গরম পানিতে গোসলে রক্ত শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার একটি সম্ভাব্য কারণ হলো হিট শক প্রোটিনের নিঃসরণ।’ কিন্তু তাই বলে রক্ত শর্করা কমাতে এক্সারসাইজ বাদ দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হট বাথটাবে বা গরম পানিতে শরীর ডুবিয়ে রাখবেন না। তাছাড়া এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
* ত্বক পরিষ্কার হয়: ত্বক পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানির তুলনায় গরম পানির গোসল বেশি কার্যকর হতে পারে। যখন আমরা গরম পানিতে গোসল করি, আমাদের ত্বকের ছিদ্র খুলে যায়। এর ফলে ত্বকে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ ও টক্সিন দূর হয়ে যায়। গরম পানিতে গোসলে কেবল ত্বক পরিষ্কার হয় না, ত্বকে ভালো অনুভূতিও পাওয়া যায়। কিন্তু ত্বকের শুষ্কতা ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া এড়াতে বেশি গরম পানিতে দীর্ঘসময় গোসল করবেন না। সচেতন থাকুন যে কুসুম গরম পানিতে শরীর ভেজাচ্ছেন।
* সাইনাস খুলে: সাইনাস শুষ্ক হলে অথবা বন্ধ হয়ে গেলে গরম পানি দিয়ে গোসল করলে উপকার পেতে পারেন। গরম পানির বাষ্প শ্লেষ্মাকে পাতলা করে সাইনাস খুলে থাকে। শীতকালে সাইনাসের সমস্যা বাড়তে পারে বলে এসময় নিয়মিত গরম পানিতে গোসলের গুরুত্ব রয়েছে।
* হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে: হার্ট নামক জার্নালে ২০২০ সালের মার্চে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, গরম পানির গোসলে হার্টের স্বাস্থ্যের উপকার হয়। গবেষকরা জাপানের ৩০,০০০ এরও বেশি মধ্যবয়স্ক লোকের জীবনযাপন তথ্য ও স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত গরম পানিতে গোসল করতেন তাদের কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ বা হৃদরোগের ঝুঁকি ২৮ শতাংশ কমে গেছে। কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার মানে হলো হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যাওয়া।
* স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে: চলতি বছরে হার্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা এটাও ধারণা দিয়েছে যে গরম পানির গোসলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমতে পারে। গবেষকরা ৩০,০০০ জনের জীবনযাপন ও স্বাস্থ্য তথ্য বিশ্লেষণ করে জেনেছেন যে নিয়মিত গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে স্ট্রোকের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ কমেছে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে গরম পানির তাপ রক্তচাপ কমিয়ে ও হার্ট রেট বাড়িয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখতে পারে।
* রক্তচাপ কমে: আপনার উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা থাকলে শীতকালে গরম পানি দিয়ে গোসলের কথা বিবেচনা করতে পারেন, কারণ এর তাপমাত্রা রক্তচাপ কমাতে পারে। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এডলফ হুটার বলেন, ‘গরম বাথটাব অথবা সাউনারের তাপমাত্রা রক্তনালীকে প্রসারিত করে রক্তচাপ কমিয়ে থাকে।’ উচ্চ রক্তচাপে ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত ও অনমনীয় হয়, যার ফলে হার্টে রক্ত ও অক্সিজেনের প্রবাহ কমে গিয়ে হৃদরোগ সৃষ্টি হয়। উচ্চ রক্তচাপে কেবল হার্ট অ্যাটাক নয়, স্ট্রোকও হতে পারে।
* রক্ত চলাচল বাড়ে: গরম পানিতে গোসল করলে হার্ট পূর্বের তুলনায় দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। এর ফলে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে। চলতি মহামারি কোভিড-১৯ এর অন্যতম জটিলতা হলো রক্ত জমাটবদ্ধতা। ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত অনেক তরুণের মৃত্যু হয়েছে রক্ত জমাট বেধে। কিন্তু গরম পানিতে গোসল করে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে এই ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
6