রাজশাহী অঞ্চলে যে কারণে ডুবছে নৌকা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২১; সময়: ৪:৩২ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী অঞ্চলে যে কারণে ডুবছে নৌকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ পৌরসভাতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের বিপরীতে এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী ভোট করছেন। বিদ্রোহী হয়েও অনেকেই দলীয় প্রার্থী ও প্রতীককে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে দলের মূলশক্তি তৃণমূলে দ্বন্দ্ব-কলহ তীব্র হলেও এসব নিরসনে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতাদের রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে।

কেন্দ্রের কোনো কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিবৃতি-বক্তৃতায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার মৌখিক হুমকি ছাড়লেও কার্যত; কেন্দ্র থেকে কোনো জেলা-উপজেলা কমিটিকে ব্যবস্থা নিতে বা পরিস্থিতি সামাল দিতে সাংগঠনিক নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ফলে পৌর নির্বাচন কেন্দ্র করে তৃণমূলে দলীয় কোন্দল তীব্র আকার নিয়েছে।

বিদ্রোহী ও তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক নির্দেশনা এখনও কেন দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। দলের ভেতর থেকে বিদ্রোহীদের যারা মদদ দিচ্ছেন, প্রার্থী করছেন তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নেতাদের পৌর নির্বাচনে প্রার্থী না করে বাণিজ্যের মাধ্যমে গণবিচ্ছিন্নদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে– তৃণমূলের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে কেন্দ্রের এ নেতা আরও বলেন, এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

এদিকে, দলের রাজশাহী অঞ্চলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ পৌরসভাতে ত্যাগী ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের অনেকেই মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। কোথাও কোথাও এমন সব ব্যক্তিকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যাদের সঙ্গে নেতাকর্মী ও দলেরও কোনো যোগাযোগ আগে ছিল না।

ফলে মাঠের নেতাকর্মীরা দল মনোনীত এসব প্রার্থীকে সহজে গ্রহণ করতে পারেনি। তারা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিজয়ী করছেন। ফলে তৃণমৃলে চরম সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ ডিসেম্বর রাজশাহীর পুঠিয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রবিউল ইসলাম রবি বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। পুঠিয়াতে বিদ্রোহী হয়ে ভোট করেন যুবলীগ নেতা গোলাম আজম নয়ন। পরাজিতদলীয় প্রার্থী রবির দাবি বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে তার নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।

গত ১৬ জানুয়ারি রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভাতেও আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামান শহীদ বিপুল ভোটে বিদ্রোহী মুক্তার আলীর কাছে পরাজিত হন। আড়ানীতে মুক্তার আলীর সমর্থকরা নির্বাচনের দুদিন আগে নৌকার নির্বাচনী কার্যালয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। নৌকার নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচার হামলা করে তাদের এলাকা ছাড়া করা হয়।
এর পরও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মুক্তার ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

আড়ানীতে নৌকার একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিদ্রোহী মুক্তারের সন্ত্রাসী বাহিনীকে থামাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ চেয়েও সাড়া মেলেনি।

রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় দলের মেয়র প্রার্থী আবদুল মালেক মণ্ডল বিজয়ী হলেও বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ নেতা মামুনুর রশীদই ছিলেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। মামুন রশীদের অভিযোগ নেতাকর্মীরা তাকেই মেয়র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল তাকে মনোনয়ন বঞ্চিত করেন। জেলা কিংবা উপজেলার কোনো নেতা তাকে মনোনয়ন তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধটুকুও করেননি।

এদিকে শনিবার হওয়া ভোটে রাজশাহীর মুণ্ডুমালা পৌরসভায় নৌকার প্রার্থী আমিনকে হারিয়ে মেয়র হয়ে গেলেন বিদ্রোহী সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা তার মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র আমাকে মনোনয়ন বঞ্চিত করেন। দলের নেতাকর্মীদের চাপে আমাকে বাধ্য হয়ে প্রার্থী হতে হয়। কেন্দ্র প্রার্থী মনোনয়নে পক্ষপাত করায় নেতাকর্মীরা তাকেই প্রার্থী করেন এবং বিপুল ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী রাব্বানী বিশ্বাসকে হারিয়ে বিদ্রোহী মতিউর রহমান মতি মেয়র হয়েছেন শনিবার। পাবনা সদরে দলীয় প্রার্থী আলী মোর্তুজা বিশ্বাসকে হারিয়ে বিদ্রোহী শরীফ উদ্দিন সনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

উত্তরের বড় পৌরসভা নওগাঁতে বিএনপির প্রার্থী নজমুল হক সনির কাছে চার হাজার ৩২৫ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন আওয়ামী লীগের নির্মল কৃঞ্চ সাহা। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল পেয়েছেন ১২ হাজার ৪৩৫ ভোট। দলের নির্মল কৃঞ্চ সাহা বলেন, তার বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় তিনি পরাজিত হয়েছেন। সূত্র- যুগান্তর

  • 136
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে