রাবিতে চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত: মে ৯, ২০২১; সময়: ৫:১৬ অপরাহ্ণ |
রাবিতে চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা

খুর্শিদ রাজীব, রাবি : সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিদায়কালে নিয়োগ দিয়ে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য সাবেক উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। এরই মধ্যে নিয়োগকে অবৈধ উল্লেখ করে ঘটনা তদন্তে শিক্ষামন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি বিশ^বিদ্যালয়ে তদন্ত করে গেছেন। কমিটির সুপারিশে রেজিস্ট্রার দফতর নিয়োগপ্রাপ্তদের কর্মস্থলে যোগদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তরা চাকরি টিকবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও হতাশায় পড়েছেন।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে দুজন জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠনে চাকরি টিকবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা বিরাজ করছে। যারা চাকরি পেয়েছেন কমবেশি সবাই এই দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। নিয়োগের আদেশে স্বাক্ষর করলেও এখন যোগদান স্থগিত হয়ে আছে। তাদের চোখ এখন মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর।

সদ্য বিদায়ী উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত বছর ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রণালয় বিশ^বিদ্যালয়টিতে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তুু গত ৬ মে মেয়াদের শেষ দিনে এম আব্দুস সোবহান ১৩৭ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেন। সেদিনই বিকেলে শিক্ষামন্ত্রণালয় নিয়োগটিকে অবৈধ উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে। শনিবার তদন্ত করতে ক্যাম্পাসে আসে কমিটির সদস্যরা। এসময় তারা বলেন, আমরা আশা করছি যথাসময়ে নিরপেক্ষ একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।

তদন্ত কমিটির তলবে এদিন ক্যাম্পাসে হাজির হন এম আব্দুস সোবহান। গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, আমি ৭৩’র অধ্যাদেশ মেনেই নিয়োগ দিয়েছি। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মানবিকভাবে চাকরি দিতেই নিয়োগ দিয়েছেন তিনি বলে জানান।

কিন্তুু নিয়োগে এম আব্দুস সোবহানের পারিবারিক মালি, নাপিত, মিস্ত্রি ও রাধুঁনিসহ অনুগত শিক্ষকদের স্বজন, সাংবাদিক ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মিলিয়ে ১৩৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগে ছাত্রলীগের দোহাই দিলেও তালিকা ঘেঁটে রাবিসহ বিভিন্ন ইউনিটের ৪০ জনের মত নেতাকর্মীর নাম পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে অনেকের শিক্ষক হবার যোগ্যতা থাকলেও বেশিরভাগকেই তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রাবির বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, অবৈধ নিয়োগ নির্বিঘ্নে করার উদ্দেশ্যেই ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়েছেন উপাচার্য।
এই নিয়োগকে নিয়ে রাবি ছাত্রলীগ সহসভাপতি মাহফুজুর রহমান এহসান ফেইসবুকে লিখেছেন, আদর্শবিচ্যুত নেতৃত্ব ও শিক্ষক যে যার প্রয়োজন অনুযায়ী আদর্শকে ৩/৪ ভাগে ভাগ করে নিয়ে ছাত্রলীগের মান-মর্যাদাকে আজ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণিতে নামিয়ে এনেছে। আর শিবির-ছাত্রদল/জামাত-বিএনপিকে শিক্ষক ও ১ম শ্রেণীতে উন্নীত করেছে!

এরই মধ্যে নিয়োগকে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অবৈধ ঘোষণা ও তদন্ত কমিটির সুপারিশে যোগদান ¯’গিত করায় হতাশা বিরাজ করছে চাকরিপ্রাপ্তদের মধ্যে। নিয়োগ পাওয়া একজন বলেছেন, অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করে আছি চাকরির জন্য। এখন যখন চাকরি হলো কিন্তুু সেটা টিকবে কি না সেটা নিয়ে মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছি।

৬ মে নিয়োগকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত হন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কামরুজ্জামান চঞ্চল। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের প্রতি যদি এম আব্দুস সোবহানের এতই দরদ থাকে তবে যখন নিষেধাজ্ঞা ছিল না তখন নেতাকর্মীদের নিয়োগ দিলেন না কেন? অবৈধ নিয়োগকে জায়েজ করার জন্য কিছু ত্যাগী নেতাকে চাকরি দিয়েছেন। অথচ আরও অনেক মেধাবী ও যোগ্য ছাত্রলীগ নেতা ছিল, যাদের চাকরি হয় নি।
তিনি বলেন, টাকা নিয়ে নিয়োগ ব্যবসা করে নিরাপদে ক্যাম্পাস ছাড়ার জন্যই সেদিন ক্যাম্পাসে কৌশলে সংঘর্ষ বাধিয়েছেন উপাচার্য। পরবর্তী প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে যেন ছাত্রলীগের যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীদেরসহ মেধাবীদের মূল্যায়ন করে।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে