তাড়াশে সেই বাড়ির দেয়াল অপসারণের না করে টাঙ্গানো হয়েছে সাইনবোর্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক, তাড়াশ : সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মন্দিরের দোহাই দিয়ে যাতায়াতের পথে তৈরি করা বিশাল প্রাচির এখনো ভাঙা হয়নি। উপরন্তু সেখানে স্বরস্বতী যুবসংঘের নামে লাগানো হয়েছে আরও একটি সাইনবোর্ড। এতে আরও বিপাকে পড়েছে চার বছর ধরে অবরুদ্ধ থাকা বেশ কয়েকটি পরিবার। প্রাচীর নির্মাণের কারণে সোজা পথ ছেড়ে বিকল্প পথে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে।
তাড়াশ পৌর শহরের ঘোষপাড়া কালিমাতা মন্দিরের সামনে তুলে রাখা হয়েছে ওই দেয়ালটি। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। অপরদিকে দেয়ালের সামনে নতুন করে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বরস্বতী যুবসংঘের নির্ধারিত স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ওই সাইনবোর্ডে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, ঘোষপাড়া এলাকার দিলীপ সিংহের সাথে উপজেলা পূজা উদযাপর পরিষদের সভাপতি ও তাড়াশ শহর বিএনপির সভাপতি তপন কুমার গোস্বামীর ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে চার বছর আগে স্থানীয় হিন্দু সমাজপতিদের দিয়ে এই প্রাচীরটি নির্মাণ করানো হয়। এ নিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু মিডিয়ায় সংবাদও প্রকাশ হয়। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের কয়েক যুবক সেখানে স্বরস্বতী যুব সংঘ নামে আরও একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘোষপাড়া এলাকার দিলীপ সিংহ নিজে উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় হিন্দুদের সহযোগীতায় কালিমাতা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। ওই মন্দিরে পুজা-অর্চনা চলতে থাকে। এ অবস্থায় দিলীপ সিংহের বাড়ির সামনের তার নিজের ১ শতাংশ জমি আরএস রেকর্ডে এসে ভ্রমাত্বকভাবে খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। বিষয়টি নিয়ে দিলীপ সিংহ আরএস রেকর্ড কর্তন মামলা দায়ের করেন। মামলায় মিথ্যা স্বাক্ষীদের কারণে বিচারক ওই ১ শতক জায়গা আশ্রমের জায়গা উল্লেখ করে রায় দেন। রায় হওয়ার সাথে সাথে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২০১৭ আগষ্ট মাসে তপন গোস্বামীর নেতৃত্বে স্থানীয় মন্দির কমিটির সভাপতি হীরক লাল ঘোষসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দিলীপ সিংহের বাড়ির সামনে বিশাল প্রাচীর তুলে দেয়া হয়। বিষয়টি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদকে অবগত করা হয়। এরপর চার বছরেও ওই প্রাচীর অপসারণ করা হয়নি। উপরন্তু সম্প্রতি সেখানে স্বরস্বতী যুব সংঘের নির্ধারিত স্থান উল্লেখ করে কটি সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী দিলীপ সিংহ বলেন, আমি শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দিরের কেশিয়ার ছিলাম। তখন থেকেই আর্থিক অনিয়মের সুযোগ না দেয়া তপন গোস্বামীর সাথে আমার দ্বন্দ শুরু হয়। শত্রুতাবশতই আমার বাড়ির সামনে প্রাচির তুলে দেয়া হয়েছে। প্রাচীরের কারণে আমার বাড়িতে কোন ভাড়া আসছে না।
ভুক্তভোগীরা পরিবারের সদস্যরা বলেন, দেয়াল তোলার কারণে বাড়িতে ভারী কোন মালামাল আনা নেওয়াতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। বাড়িতে মোটর সাইকেল প্রবেশ করানোও বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। তারা অবিলম্বে ওই দেয়াল তুলে দিতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ বিষয়ে ঘোষপাড়া কালিমাতা মন্দির কমিটির সভাপতি হীরক লাল ঘোষ বলেন, দিলীপ সিংহের বাড়ির সামনে যে প্রাচির তোলা হয়েছে, সেটা অপসারণ আমরা করতে পারবো না। তাড়াশের নেতৃস্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারাই সেটা অপসারণ করতে পারেন। নতুন সাইনবোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, হিন্দু ছেলেপেলেরা একটি সমিতি করেছে। তারাই সাইনবোর্ডটি লাগিয়েছে। এটা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়নি।
তাড়াশ উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি তপন কুমার গোস্বামী বলেন, মন্দির কমিটি মামলার রায় পেয়েছে। এ কারণে এসিল্যান্ডের উপস্থিতিতে সেখানে দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া দিলীপ সিংহের পরিবারের সাথে কারও সামাজিক সম্পর্ক নেই। তারা সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নেয় না। দেয়াল তুলে দেয়ার বিষয়ে মন্দির কমিটি বা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা না বলে নেতাদের দিয়ে তদবির করায়।
স্বরস্বতী যুবসংঘের সাইনবোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই পাড়ায় কিছু স্কুল-কলেজের ছাত্ররা স্বরস্বতী পূজা করার উদ্দেশ্যে একটি ক্লাব করেছে। সেটিরই সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।
তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলে আশিক বলেন, কারও বাড়ির সামনে দেয়াল বা মন্দিরের সাইনবোর্ডের বিষয়ে আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।