রাজশাহীতে হিসাবের বাইরে করোনার ৭৪৬ মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে সবচেয়ে বেশী মৃত্যু হয়েছে গত ২৯ জুন। এ দিন মারা যান ২৫ জন; যাদের ১২ জনই রাজশাহী জেলার। এই ১২ জনের মধ্যে তিনজনের করোনা পজেটিভ ছিল। অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষার পর মারা যান। বাকি নয়জন মারা যান উপসর্গ নিয়ে নমুনা পরীক্ষার আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
ওই দিন রাজশাহী জেলার ১২ জন মারা গেলেও করোনায় মৃত্যুর সরকারি হিসেবে এসেছে তিনজন। অর্থাৎ যে তিনজনের করোনা পজেটিভ ছিল শুধু সেই তিনজনের হিসাব বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠায় রাজশাহী সিভিল সার্জনের কার্যালয়।
ফলে মৃত্যু হিসেবের বাইরে থেকে যায় নয়জন। এভাবে প্রতিদিন করোনা ইউনিটে মারা যাওয়া অনেকেই থেকে যাচ্ছে সরকারি হিসেবের বাইরে। যাদের ৯৯ ভাগই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলছেন, হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।
তিনি জানান, চলতি বচরের জুন মাসের ৩০ দিনে কোভিড ইউনিটে মারা যান ৪০৫ জন। এর মধ্যে করোন পজেটিভ ছিল; অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষার পর মারা যান ১৮৯ জন। বাকি ২১৬ জন মারা যান করোনা উপসর্গ নিয়ে। নমুনা পরীক্ষার আগেই তারা মারা যান।
বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে শামীম ইয়াজদানী বলেন, উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৯৯ ভাগই করোনাবাইরাসে আক্রান্ত। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর করোনায় আক্রান্ত নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের কোভিড ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এর পর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠায়। নমুনা পরীক্ষার আগে যারা মারা যায় তাদের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার তালিকায় রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া দুই-একটার নমুনা নেগেটিভ আসে। তারা আক্রান্ত হওয়ার ১০ থেকে ১২ দিন পর হাসপাতালে এসেছে। এরই মধ্যে তারা করোনামুক্ত হয়েছে। তবে করোনায় যে ক্ষত হয়েছে এতে তারা মারা গেছে। কিন্তু আদতে তারা করোনা আক্রান্তই।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার বলেন, হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন আমাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। সে প্রতিবেদন অনুযায়ী যারা করোনা শনাক্ত হওয়ার পর যারা মারা গেছে তাদের তালিকা বিভাগীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার বিষয়ে কোন তথ্য পাঠানো হয় না।
তবে মারা যাওয়ার পর কারও নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসে এবং সেটি যদি আমাদের নজরে আসে তার নাম করোনায় মুতের তালিকায় যুক্ত করা হবে। কিন্তু এধরণের কোন নাম তারা এখনো পায়নি বলে জানান এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
এদিকে, হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তরের কর্মকর্তা সাখাওয়াত সুমানের পাঠানো প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত বছরের মার্চ মাসে এ হাসপাতালে করোনা ইউনিট খোলা হয়। তবে রোগী ভর্তি শুরু হয় এপ্রিল থেকে। প্রথম মারা যায় মে মাসে।
সাখাওয়াত জানান, রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এ পর্যন্ত (মে-২০২০ থেকে জুন-২০২১ পর্যন্ত) মারা গেছেন এক হাজার ৭৮ জন। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ ছিল ৩৪৬ জন। বাকি ৭৪৬ জন মারা গেছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
এদিকে, এই করোনা ইউনিটে সবচেয়ে বেশী মারা গেছে চলতি বছরের জুন মাসে ৪০৫ জন। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৭, মার্চে ৩১, এপ্রিলে ৭৯ ও মে মাসে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল জুলাই মাসে ১১১ জনের।
এ পর্যন্ত রাজশাহীর কোভিড ইউনিটে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন সাত হাজার ১৬১ জন। আর সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন পাঁচ হাজার ৯২৭ জন। সবচেয়ে বেশী রোগী ভর্তি হয়েছে চলতি বছরের জুন মাসে এক হাজার ৩৯৭ জন। এর আগে জুনুয়ারিতে ২৩১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২০১, মার্চে ৩৩৪, এপিলে ৬৫৪ ও মে মাসে ৮০৮ জন রোগী ভর্তি হন। আর গত বছর সবচেয়ে বেশী কোভিড রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় জুলাই ৭৭৫ ও আগস্ট মাসে ৭৭৪ জন।
911