বাঘার চরের বানভাসিদের ভরাসা একমাত্র পল্লী চিকিৎসক

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২১; সময়: ৯:৩৫ অপরাহ্ণ |
বাঘার চরের বানভাসিদের ভরাসা একমাত্র পল্লী চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : অসুখ হলে ঔষুধ খেতে হয় এ কথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু সঠিক নিয়মে ঔষুধ খাবার প্রয়োজনীয়তা অনেকেই অনুভব করিনা । ঔষুধ খেতে আমরা যতটা তৎপর, ঔষুধ খাবার নিয়ম মানতে ততটায় উদাসীন । বিশেষ করে প্রত্যান্ত এলাকা হলে তো-কোন কথায় নেই !

তাদের অসুখ হলে কোন পরিক্ষা (ট্রেস্ট) এর প্রয়োজন হয়না। তাদের একমাত্র ভরসা পল্লী চিকিৎসক। গ্রাম বাংলায় এরকম হাজারও পল্লী চিকিৎসক রয়েছে। অনেকেই তাঁদেরকে মানবিক ডাক্তার বলে থাকেন। শুক্রবার বন্যাত্রদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে এমনই এক ডাক্তারের স্বাক্ষাত মেলে উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে।

বাঘার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত ঐ ইউনিয়নটির নাম চকরাজাপুর । বর্তমানে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে সেখানে এই মুহুর্তে বন্যা চলমান । আর বন্যায় ডুবে যাওয়া বাড়ি-বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন পল্লী চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন। শুক্রবার (২০ আগষ্ট) টিনের তৈরী করা ডুঙ্গা নৌকা নিয়ে তিনি অসুস্থ্ এক শিশুকে চিকিৎসা দিয়ে ফিরতে এ প্রতিবেদকের সাথে দেখা মেলে তার ।

চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন জানান, তিনি মোবাইলে খবর পেয়ে তাঁর বাড়ি থেকে হাফ কিলোমিটার দুরে দিয়াড়কাদিরপুর চরের নজরুল ইসলামের তিন বছরের ছেলে তাসমিন ইসলাম নামের এক শিশুকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ছিলেন। আকষ্মিক ভাবে শিশুটি জ্বর ও সর্দি কাঁশিতে আক্রান্ত হওয়ায় তার পরিবার চরম আবেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন ।

তবে আমার কাছে যেটি মনে হয়েছে, বাড়ির চারপাশে বন্যার পানি উঠায় তার মাকে প্রতিনিয়ত পানিতে নেমে কাজ করতে হচ্ছে। এ কারনে তার শিশুর সর্দি কাশি হয়েছে। এ জন্য তিনি সাময়িক ভাবে চার দিনের চিকিৎসা দিয়েছেন। আর এতে যদি না কমে তাহলে ঐ শিশুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে বড় ডাক্তার দেখাতে বলেছেন।

শুধু নজরুল ইসলাম নয়, বন্যার কারনে এমনটি বিপাকে পড়ছেন চরাঞ্চলের অনেক পরিবার। অথচ সাধ্য থাকলেও তারা চরাঞ্চল থেকে উপজেলা সদরে আসতে পারছেন না।এ কারনে তাদের একমাত্র অবলম্বন এবং ভরসা হয়ে পড়েছে হাতুড়ি তথ্যা পল্লী চিকিৎসক।ইসমাইল হোসেন পদ্মার চরাঞ্চলের দিয়াড়কাদিরপুর চরের আবদুস সামাদের ছেলে। তিনি পল্লী চিকিৎকের কোর্স শেষ করে এই এই অঞ্চলে বারো বছর থেকে পল্লী চিকিৎসক হিসেবে সেবা দিয়ে আসছেন বলে জানান।

চকরাজাপুর চরের ৩৫ বছর বয়সের তাহামিনা বেগম জানান, ইসমাইল ডাক্তারের রাত-দিন সমান। তাকে যখন যে ডাকেন, তখন তার বাড়িতে চলে যান বাই সাইকেল নিয়ে। কিন্তু বর্তমানে চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দেওয়ায় তাকে টিনের তৈরী ডুঙ্গা নিয়ে যেতে হচ্ছে। আমার জানা মতে তিনি একজন ভালো মানুষ।

এ বিষয়ে পল্লী চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি শুধু টাকার জন্য চিকিৎসা করিনা। আমার দ্বারা মানুষ উপকার পেয়ে আমাকে দোয়া করে এ জন্য মানুষের খেদমত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, মানিকের চর বাজারে আমার একটি ছোট্ট ঔষুদের দোকান রয়েছে।আল্লার রহমতে সেই দোকান থেকে আমার সংসার চলে।

ইসমাইল প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, আমি শুক্রবার (২০ আগষ্ট) চরাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ দিয়াড়কাদিপুর, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া চরে ৫ শতাধিক পরিবারকে ত্রাণ দিতে গিয়ে অনেকটা অসুস্থ হয়ে গিয়ে ছিলাম। এ সময় ইসমাইল হোসেন নামের এক পল্লী চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়ে আমি অনেকটা সুস্থ্যতা বোদ করি। আমার মতে, গ্রামের প্রত্যান্ত অঞ্চলে এ ধরনের চিকিৎসকের প্রয়োজন রয়েছে।

  • 2
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে