পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১; সময়: ১০:৪৪ অপরাহ্ণ |
পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ঢাকা বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগের মামলায় জামিনে থাকা ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দিন ও অমিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। সেই সঙ্গে পলাতক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামাল হোসেন ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট জমা দেন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।

এর আগে গত ১৪ আগস্ট নাসিরউদ্দিন ও অমির বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় করা মাদক মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তদন্তে তিন নারীর সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করা হয়।

গত ১৪ জুন ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে সাভার থানায় মামলা করেছিলেন পরীমনি। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছিল। ওই দিনই উত্তরার একটি বাসা থেকে নাসির-অমিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

সেদিন অমির বাসা থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা, বিদেশি মদ ও বিয়ার জব্দের দাবি করে পুলিশ। পরে ডিবি গুলশান জোনের উপপরিদর্শক মানিক কুমার সিকদার বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করেন।

মাদক মামলার রিমান্ড শেষে গত ২৩ জুন আদালতে হাজির করা হয় আসামিদের। তারপর পরীমনির মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে নাসির-অমির ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসান।

রিমান্ড শেষে ২৯ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের হাজির করে পুলিশ। এ সময় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নাসির-অমিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন।

অন্যদিকে, নাসির-অমির আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। দু’পক্ষের শুনানি শেষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহজাদী তাহমীদা।

মামলার এজাহারে পরীমনি বলেন, ‘গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িতে করে তারা উত্তরার উদ্দেশে রওনা হন। পথে অমি বলে বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো তারা সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করায়।

কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলে এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো।’

এজাহারে আরও বলা হয়, ‘তখন আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করে। টয়লেট থেকে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসিরউদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন ও কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন।

আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদপানের জন্য জোর করেন। আমি মদপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমি সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।

এক নম্বর আসামি (নাসিরউদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির উদ্দিন মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে জখম করেন।’

এজাহারে পরীমনি বলেন, ‘আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে গেলে আমার ফোনটি কেড়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় দুই নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন এক নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহযোগিতা করেন। আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারবো।’

এজাহারে তিনি আরও বলেন, ‘দুই নম্বর আসামি অমি পরিকল্পিতভাবে আমাকে বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যান। তিনি অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি ও নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে ও জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।

আমি আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। রাত আনুমানিক ৩টায় আমি আমার গাড়িতে প্রায় অচেতন অবস্থায় অপর সঙ্গীদের সহায়তায় বাসায় ফিরে আসি।’

  • 60
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে