জিয়ার শাসনামলে ‘নির্বিচারে হত্যার’ তদন্ত হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২১; সময়: ৯:০৬ অপরাহ্ণ |
জিয়ার শাসনামলে ‘নির্বিচারে হত্যার’ তদন্ত হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে অভ্যুত্থান- পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরকে ‘নির্বিচারে হত্যার’ ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে নিজের মনোভাব তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।

একজন ভুক্তভোগীর কথা তুলে ধরে একজন সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন রেখেছিলেন, সেসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো কমিশন গঠনের উদ্যোগ সরকার নেবে কি না। উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “৭৭ সালে তখন ক্যুর নামে, বিশেষ করে বিমানবাহিনীর ৫৬২ জন অফিসারসহ বহু লোক সে সময় মারা গেছে, হত্যা করা হয়েছে। এর মাঝে আরও কয়েকটি ক্যু হয়, সেটা নিয়ে প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি বিমান ও সামরিক বাহিনীর অফিসারকে মারা হয়।

‘‘তো আমরা দেখি, বিষয়টা নিয়ে যেহেতু দাবি উঠছে, আমাদের নিশ্চয় এটা নিয়ে একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এজন্য ভালো জনমতও সৃষ্টি হওয়া উচিত।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। এরপর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা জিয়া সেনাপ্রধান হওয়ার পর ১৯৭৬ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ক্ষমতা দখল করেন। তার পরের বছর তিনি রাষ্ট্রপতির পদও নেন।

জিয়া ক্ষমতা দখলের পর সামরিক বাহিনীতে অনেকগুলো বিদ্রোহ-অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়, যাতে জড়িতদের সামরিক আদালতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ডসহ নানা সাজা দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে এই রকম এক বিচারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কর্নেল আবু তাহেরের বিচার অবৈধ বলে রায় এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। জিয়ার আমলের ওইসব হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে স্বজনহারাদের পরিবার।

জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিশন নিয়ে প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, “সেই সময়ে, পঁচাত্তরের পর এই বাংলাদেশে বারবার ক্যু হয়েছে। এবং এই ক্যুর নামে শুধু এয়ারফোর্সের অফিসার বা সৈনিক-কর্মচারীই না, সেনাবাহিনীরও বহুজনকে হত্যা করা হয়েছে। এবং আপনারা যদি বিভিন্ন জেলখানাগুলিতে খোঁজ করেন যে, কোন জেলে কতজনকে এভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাহলে দেখবেন এই রকম হাজার হাজার মানুষকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যাদেরকে ওই সময়ে হত্যা করা হয়েছে, গুম করে ফেলায় তাদের পরিবারের সদস্যরা লাশও পায়নি। তারা যে এভাবে ‘হারিয়ে গেল’ তারও কোনো জবাবদিহি হয়নি। এটা একটা আশার কথা যে, আজকে এত বছর পর সবার এই চেতনাটা এসছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন এতকাল সবাই কেন এটা ধরে ছিল?”

জিয়াউর রহমান তার ক্ষমতাকে ’নিষ্কন্টক’ করার জন্য এসব ঘটিয়েছিলেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “এটাতো জানা কথা। এবং একের পর এক শুধু সেনাবাহিনীতেতো না, আমাদের আওয়ামী লীগসহ বহু নেতাকর্মীকেওতো হত্যা করেছে, গুম করে দিয়েছে। মনে হয় যেন তাকে এমন একটা ফেরেশতার মত বানিয়ে দেওয়া হল, শেষকালে স্বাধীনতার ঘোষকও বানিয়ে ফেলা হল। সেটা নিয়ে তেমন কেন কেউ কথা বলেনি, এটা আমার বড় প্রশ্ন।”

বিএনপিও যে ক্ষমতায় আসার পর জিয়াউর রহমান হত্যার বিচার করেনি, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মিউটিনির বিচার করে ১১ জন সামরিক অফিসারকে যে ফাঁসি দিল, সেটাও কিন্তু ‍খুব অন্যায়ভাবে; কারণ এখানে অনেকে জানতই না, কিন্তু রাতারাতি একটা ক্যামেরা ট্রায়াল করেই তাদের ফাঁসি দিয়ে দিল। আমরা কিন্তু তখন তার প্রতিবাদ করেছিলাম, যে না এটা তদন্ত হওয়া দরকার। এই মিউটিনিটা কেন হল, কারা করল, কারা জড়িত, তারপর কাদের ফাঁসি দিচ্ছি- তা কিন্তু করেনি।”

ঢাকা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্রিমলাইনার নিয়ে জাতিসংঘ অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার যে সমালোচনা বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল করছে, তার জবাবও এক প্রশ্নে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্য যে, করোনার কারণে অনেক জায়গায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বিমানগুলিকে প্রতিনিয়ত বসে থাকতে হয়, আর মেনটেইন্যান্সেরও একটা খরচা আছে। পড়ে থাকলেও কিন্তু ইঞ্জিন চালু রাখা, এটাকে ফ্লাই করানো এর পেছনে কিন্তু একটা খরচ হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যেহেতু যাবই, তখন অন্য এয়ারলাইন্সকে টাকা দিয়ে লাভ কি? নিজেদেরটাই নিয়ে যাই। সেটার সাথে সাথে এটা বোয়িং, অ্যামেরিকান বিমান, জেএফকেতে নামবে সেটাও আমাদের জন্য একটা আনন্দের বিষয়। এর মধ্যে ফুয়েল নেওয়ার জন্য আমরা ফিনল্যান্ডে অবতরণ করি।”

ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুটে বিমানের ফ্লাইট চালানোর যে স্লট ছিল, সেটা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “আমরা যখন নতুন বিমানগুলো কিনলাম, সেটার সাথে সাথে আমাদের একটা প্রচেষ্টা ছিল ওই স্লটটাকে ধরে রাখা। এয়ারক্রাফটগুলো চলতে গেলে অনেক নিয়মকানুন মানতে হয়। সেটাকে সামনে রেখে আমরা নতুন আইনও করেছি, তাছাড়া আমাদের আলোচনাও চলছে।”

টরন্টো, নিউ ইয়র্কসহ আরও কয়েকটি রুটে বিমানের ফ্লাইট চালানোর জন্য সরকার চেষ্টা করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই বিমানটা বাংলাদেশ থেকে, ঢাকা থেকে সরাসরি ১৪ ঘণ্টায় নিউ ইয়র্ক পৌঁছাতে পারে। এর পরিচালন ক্ষমতা প্রায় ১৭ ঘণ্টার মত। আমরা যখন নিয়ে আসি, সিয়াটল থেকে একটানে চলে আসে। সেজন্য আমাদের একটা চেষ্টা আছে, বিমানটা এভাবে চালু করব।”

সমালোচকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, “এখন অনেকে অনেক কথা বলে, বলতে পারে, যেটা বলবে, সেটা তার মুখেই থাকবে। তো যখন যেটা বলে, পরবর্তীতে জিজ্ঞেস করতে পারেন তাদেরকে, আমাদের জিজ্ঞেস করেতো লাভ নেই। আমার চেষ্টা আমার দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরা। দেশের মানুষের কল্যাণ করা, দেশটাকে উন্নত করা এবং একটা আন্তর্জাতিক মর্যাদায় যেন আমার দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে, সেই জায়গটায় নিয়ে আসা। সেটুকু করে যাচ্ছি।”

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে