অদ্ভুত ভয়ঙ্কর জন্তু আতঙ্কে গ্রামবাসী
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : অদ্ভুত এক ভয়ঙ্কর প্রাণীর আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন গ্রামের মানুষ। জন্তুটির আক্রমণে ইতোমধ্যে মারা গেছেন গ্রামের এক ব্যক্তি, আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
গ্রামবাসীদের দাবি, মানুষ দেখলেই হামলে পড়ছে জন্তুটি। কামড়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে শরীরের মাংস। থাবায় ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে চোখ-মুখ। জন্তুটির আক্রমণ থেকে বাদ পড়েনি গবাদিপশুও। এমন ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের তালুকজামিরা গ্রামজুড়ে।
সবশেষ ঘটনা গত রোববার (২৪ অক্টোবর) সকালে দাদার বাড়ি থেকে পাশেই নিজ বাড়িতে ফেরার পথে হঠাৎ দশ বছরের শিশু রাব্বীর উপর আক্রমণ করে জন্তুটি। থাবা বসায় তার বুক, মুখমন্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে। শিশুটির চিৎকার শুনে তার মা এগিয়ে আসলে তার উপরও হামলে পড়ে প্রাণীটি। শেষ পর্যন্ত আরেক প্রতিবেশীর লাঠির তাড়া খেয়ে পালিয়ে যায় অদ্ভুদ আকৃতির পশুটি।
এর মাস দেড়েক আগের ঘটনা। মাঠে ঘাস কাটতে যান তালুকজামিরা গ্রামের কৃষক স্থানীয় মসজিদের ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকু (৫৬)। হঠাৎ করে তার উপর লাফিয়ে পড়ে অদ্ভুদ প্রাণীটি। হাতের কাস্তে দিয়ে উপর্যুপরী আঘাত করেও রক্ষা পাননি তিনি। তার নাক-মুখ রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায় ভয়ংকর প্রাণীটি।
পরে তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় জেলা সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিছুটা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৮ দিন পর মারা যান রুকু।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, জন্তুটি দেখতে কুকুর কিংবা শিয়ালের মতো। সামনের পা দুটি ছোট। মাথা ও লেজ আকারে বড়। মানুষ কিংবা গবাদি পশু পেলেই পেছন থেকে আক্রমণ করছে প্রাণীটি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখে মুখে থাবা দিয়ে, কামড়ে আহত করছে তাকে।
তবে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি প্রাণীটির পরিচয়। ইতোমধ্যে মুখে মুখে রূপকথার গল্পের মতো এলাকাজুড়ে ছড়িয়েছে গুজব আর কল্পকাহিনী।
স্থানীয়রা জানান, অজ্ঞাত ওই প্রাণীর ভয়ে রাতেও ঘুমাতে পারছেন না তারা। ফসলের মাঠ বা আশেপাশে বেড়াতে গেলেও লাঠি হাতে দলবদ্ধ হয়ে চলাচল করছেন গ্রামবাসী। কেউ কেউ রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকু হামলার শিকার হন, সেদিন তার ভাইকেও আক্রমণ করেছিল অজ্ঞাত ওই জন্তুটি। একই দিনে আরও ৩ জনের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই ওই এলাকায় চলতে থাকে একের পর আক্রমণ।
স্থানীয়দের দাবি, এ পর্যন্ত অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ জন্তুটির আক্রমণের শিকার হয়েছেন। সবশেষ রোববার সকালে শিশু রাব্বি ও তার মায়ের হামলে পড়ে প্রাণীটি। এক মাসে আগে জন্তুটির আক্রমণের শিকার হন ওই গ্রামের বৃদ্ধ আফসার আলি। তিনি এখনও গুরুতর অসুস্থ।
স্থানীয়দের বক্তব্য, গ্রামে ঝোঁপঝাড়, জঙ্গল কিংবা বাঁশ ঝাড়ে লুকিয়ে থাকছে সেটি। কাউকে একা পেলেই করছে আক্রমণ, কিন্তু দলবদ্ধ মানুষ দেখলেই পালিয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একটি নয়, এমন অন্তত আট থেকে দশটি প্রাণী গ্রামটিতে বাস করছে। এতকিছুর এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়ায়নি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের কেউ।
পলাশবাড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুত বলেন, এলাকাবাসীর আতঙ্ক কাটাতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যারা এই প্রাণীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা এবং প্রাণীটির পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান সরকার, হিংস্র বন্যপ্রাণী, এটি র্যাবিশ নামে একটি ভাইরাস বহন করতে পারে। যারা আক্রমণের শিকার হয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া প্রয়োজন। প্রাণীটিকে চিহ্নিত এবং এর আক্রমণ থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষার জন্য বন বিভাগের উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে, অদ্ভুত এই প্রাণীটির বর্ণনা শুনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, গাইবান্ধায় মানুষকে আক্রমণ করার মতো কোনো হিংস্র প্রাণীর আবাস নেই। এটি শিয়াল হবার সম্ভাবনাই বেশি। যেটি হয়তো কোনো কারণে পাগল হয়ে গেছে এবং মানুষকে আক্রমণ করছে।