খাল খনন ও সংস্কারে অব্যবস্থাপনায় পানির নীচে তলিয়ে গেল ৪০ গ্রামের কৃষকের স্বপ্ন!

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২; সময়: ৩:৪২ অপরাহ্ণ |
খাল খনন ও সংস্কারে অব্যবস্থাপনায় পানির নীচে তলিয়ে গেল ৪০ গ্রামের কৃষকের স্বপ্ন!

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ : কৃষকের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। গেলও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়ন এর প্রতাপদহ মাঠ, বিল মুনসুর ও হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়ন এর বারোমাসীয়া মাঠের প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ইরি-বোরো রোপনকৃত ধান তলিয়ে গেছে।

অসময়ে বৃষ্টির কারনে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কৃর্তপক্ষের (বিএমডিএ) কৃর্তক খননকৃত খাল দিয়ে পানি নিস্কাসনের সু-ব্যবস্থা না থাকায় এমন ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।

খাল খননে অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে খালের পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যাবস্থা নেই। যার কারনে সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় ধান। এতে করে ব্যাপক ভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ৪০ গ্রামের প্রায় ৫ হাজার কৃষক। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বার বার অভিযাগে করেও কোন সমাধান হচ্ছে না।

কৃষকদের সেচ সুবিধার জন্য ২০১৭ সালের শেষের বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জলবায়ু ট্রান্সপ্লান্ট প্রকল্পের আওতায় মহাদেবপুর উপজেলার চকগৌরি থেকে শুরু করে সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়ন এর প্রদাপদহ থেকে হাসাইগাড়ি ইউনিয়ন হয়ে নলমাড়া খাল পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়।

স্থানীয় কৃষকরা জানান- সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়ন এর প্রদাপদহ থেকে হাসাইগাড়ি ইউনিয়ন শিমুলা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার খাল খননে অব্যাবস্থাপনা রয়েছে। কোথাও কোথাও খাল খনন করা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও খননের নামে মাটি শুধু মাত্র উচুঁ করে রাখা হয়েছে। আবার খালের মুখগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে কচুরি পানায় ভরে গেছে খাল। যার কারনে পানি নিস্কাশনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ফলে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে দুই ইউনিয়ন এর ভীমপুর, পাটাকাটা, প্রণইল,চকাদেব, বুদগাড়ী,হামরা,কৃষ্টপুর, চুয়ার পাড়া, চড়ই গোলাসহ প্রায় ৪০গ্রামের কৃষকদের প্রায় ৩০০বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাই খালটি পুন:খনন করে নলামারা ব্রীজ পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করলে বৃষ্টির পানি অনায়াসে নেমে যাবে। তাহলে একমাত্র ফসল নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না কৃষকদের।

স্থানীয় হাঁসাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, কৃষকদের সুবিধার জন্য ২০১৭সালের শেষের দিকে খালটি খনন করা হয়। খালটি খনন এর সময় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ১০কিলোমিটার খাল খননে অর্ধেকই সঠিকভাবে খনন করা হয়নি।

এছাড়া দীর্ঘদিন খাল সংস্কার না করার কারনে কুচরি পানায় জমে গেছে পুরো খাল। যার ফলে সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। বর্তমানে খাল দিয়ে পানি ওভারপ্লো হয়ে প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপকে একাকিবার জানিয়ে কোন লাভ হয় নাই। তাই আমরা এর একটি প্রতিকার চাই। যাতে পরবর্তীতে কৃষকরা যেন আবারও এমন ক্ষতির মুখে না পড়ে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কৃর্তপক্ষ নওগাঁ রিজিন- ১ এর নিবার্হী প্রকৌশলী শমসের আলী বলেন, মোট ৩৭কিলোমিটার ব্যাপি খাল খনন করা হয়েছিল ২০১৭সালের শেষের দিকে। এর মধ্যে দুবলহাটির প্রতাপদহ মাঠ থেকে হাঁসাইগাড়ীর নলামারা খাল পর্যন্ত ১০কিলোমিটার খালের কিছু সমস্যার অভিযোগ পেয়েছি। তবে ৫ কিলোমিটার খাল খননে অনিয়ম এর কথা সঠিক নয়।

কারন একটি খননের ৫-৭ বছর পর এমনিতেই ভরাট হয়ে যায়। খাল নিয়ম অনুযায়ী খনন করা হয়েছিল। আর খালে স্থানীয়দের মাছ চাষ করলে সেখানে বেড়া,খড়ি দেয়ার কারনেও কুচরিপানা জমাট বাঁধতে পারে। তবে সার্বিক বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি কিভাবে পানি নিষ্কাশন এর ব্যবস্থা করা যায়।

তিনি আরও বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে পুণরায় খাল খননের প্রয়োজন হলে প্রজেক্ট নিয়ে আবারও খাল খনন এর উদ্যোগ নেয়া হবে। অতি তারাতারি খালটি পুনঃখনন করে বিলে জমে থাকা পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা করে কৃষকের ধান রক্ষায় এগিয়ে আসার দাবী জনান কৃষকরা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে