পাবিপ্রবি উপাচার্যের শেষ কর্মদিবসে ঝাড়ু মিছিল

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২২; সময়: ৫:০৭ অপরাহ্ণ |
পাবিপ্রবি উপাচার্যের শেষ কর্মদিবসে ঝাড়ু মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর শেষ কর্মদিবস ছিল রোববার (৬ মার্চ)। কর্মদিবসের শেষ দিনে ক্যাম্পাসে তার বিরুদ্ধে ঝাঁড়ু মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

অবৈধ নিয়োগ বাতিল, নানা অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত সহ সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে এই ঝাড়ু মিছিল করে। রবিবার (০৬ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ঝাঁড়ু মিছিল বের করে ক্যাম্পাস চত্বরে প্রদক্ষিণ করে পথ সমাবেশে মিলিত হয়।

অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী ২০১৮ সালের ০৭ মার্চ চার বছরের জন্য পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। যোগদানের পর সাংবাদিকদের ডেকে মতবিনিময় করে বলেছিলেন, ‘দুর্নীতি করবো না, কাউকে করতে দেবো না।’

কার্যক্ষেত্রে তিনি তার কথা রাখতে পারেননি বলে অভিযোগ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী সহ শিক্ষার্থীদের। শুরু থেকেই আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। যোগদানের পরপরই আগের উপাচার্যের সময় সম্পন্ন হওয়া ভর্তিপরীক্ষা থেকে অনৈতিকভাবে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সমালোচনার মুখে তা ফেরত দেন।

পাঁচ-শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি টাকা অনিয়মের দায়ে চাকরিচ্যুত চিফ ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রহিমকে। পরে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের তোপের মুখে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় কেনা কোটি টাকার গাড়ি নিজের পুত্রকে ব্যবহার করতে দেন এবং ইউজিসির তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় সে গাড়ি ফেরত দেন। ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক পদে এক নিয়োগপ্রার্থী উপাচার্য রোস্তম আলীর কাছে প্রকাশ্যে ঘুষের টাকা ফেরত চান। এতে প্রচণ্ড ছাত্র আন্দোলনের মুখে পড়েন তিনি।

এছাড়া বাড়িভাড়া ফাঁকি দেওয়া, অনিয়ম করে পছন্দের ব্যক্তিদের ‘সিনিয়র অধ্যাপক’ পদে নিয়োগ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ প্রমাণিত হয় ইউজিসির তদন্তে। তদন্তের সুপারিশে ফাঁকি দেওয়া টাকা ফেরত দেন এবং ‘সিনিয়র অধ্যাপক পদ বাতিল করেন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে ডিন-চেয়ারম্যান নিয়োগসহ নানা একাডেমিক ও প্রশাসনিক নানা অনিয়মও প্রমাণিত হয় তাঁর বিরুদ্ধে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের হয়রানি, পদোন্নতি আটকে রাখা, বিনাকারণে এডহকভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকুরি থেকে বাদ দেওয়াসহ নানা অভিাযোগে তিনি বিভিন্ন সময় বিতর্কিত হন।

তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক মান একেবারে নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। ইউজিসির র‌্যাংকিংয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বর্তমানে সবচেয়ে শেষে।

সর্বশেষ মেয়াদ পূর্তির এক মাস আগে আয়োজন করেন ১০২ জনের গণনিয়োগ। এ নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন পাবিপ্রবি গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হারুন-অর-রশিদ এবং একাধিক চাকুরিপ্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠে নিজের ভাতিজি কানিজ ফাতিমা কাকন, ভাগিনা হাসিবুর রহমানসহ ডজনখানেক আত্মীয়কে অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ।

ছাত্র-ছাত্রীরা উপাচার্যের নিয়োগ বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন খাওয়া, ভূয়া ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ, ১০ কোটি টাকার বইক্রয়ে হরিলুটের তদন্ত চেয়ে মানব-বন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। তার কুশপুত্তলিকা পর্যন্ত দাহ করেন।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ভাতিজিসহ অনিয়ম করে দেওয়া নিয়োগ নিয়ে রিজেন্টবোর্ডের সদস্যদের তোপের মুখে সভা বাতিল করেন। এরপর শিক্ষক-কর্মকর্তরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। কয়েকদিন পড়ে ক্যাম্পাসে এলেও ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে কাউকে না জানিয়ে চুপিসারে ক্যাম্পাস ছাড়েন। গত এক সপ্তাহের বেশি নানা দাবিতে রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে কর্মকর্তারা। বর্তমানে পাবিপ্রবিতে সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি হারুনর রশিদ বলেন, ‘নানাভাবে আশ্বাস দিলেও নিজের স্বার্থ হাসিল করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সঙ্কটে ফেলে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে গেছে। এটা একজন উপাচার্যের কাছে কাম্য নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. এম আব্দুল আলীম বলেন, শতাধিক নিয়োগ, আপগ্রেডেশন ও শিক্ষকদের এমফিল পিএইচডি অনুমোদনের কথা ছিল। ভিসি স্যার নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি। তিনি তার ভাতিজিসহ ১০২টি পদে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বিশ^বিদ্যালয়কে না ভেবে, শিক্ষাথীর্দের কথা চিন্তা না করে নিজের আখের গুছিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আত্মীয় করন করে ফেলেছে।

সরেজমিনে একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি সুযোগসন্ধানী চক্র গড়ে উঠেছে, যে ভিসিই আসুক না কেন, তারা খোলস বদলে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেন।

রেজিস্ট্রার বিজন ব্রহ্ম বলেন, ‘মেয়াদ পূর্তির এক সপ্তাহ পূর্বে কাউকে না জানিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ায় নানামুখি সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। এমন অবস্থায় আজ তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে।’ উপাচার্য রোস্তম আলীর সঙ্গে ফোনে যোগাযেগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে