কৃষি অফিসারের সহায়তায় কৃষি বৈচিত্র্যে ভরপুর বাঘা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাঘা : কৃষি বৈচিত্র্যে ভরপুর রাজশাহীর বাঘা উপজেলা। খাদ্যশস্য উৎপাদনে অন্যতম একটি উপজেলা। আর উপজেলাকে কৃষিক্ষেত্রে সমৃদ্ধ করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শফিউল্লাহ সুলতান। তিনি বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারের ৩১ ব্যাচের একজন চৌকশ অফিসার।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই কৃষি বিভাগের কার্যক্রমকে কৃষকদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়াসহ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণে দৃশ্যমান কাজের তাগিদে, কখনো অফিসে,কখনো ফসলের মাঠে আবার কখনো ছোটাছুটি করছেন বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনে ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকদের কাছে উচ্চমূল্যের ফসল চাষ ও এর সম্প্রসারণে দলগতভাবে কাজ করছেন ওই কৃষি অফিসার। কৃষিক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের অর্জনসমূহ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চলমান কার্যক্রম সমূহ বাস্তবায়নে সম্পূর্ণভাবে সচেষ্ট রয়েছেন।

শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি, সাথী ও আন্তঃমিশ্র ফসল চাষ, কন্দাল ফসলের চাষ, ফুল চাষ, মসলা জাতীয় ফসলের চাষ, মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভার্মি কম্পোস্ট, ট্রাাইকো কম্পোস্ট এর ব্যবহার, তিল চাষ, ডাল জাতীয় শস্যের সম্প্রসারণ, তেল জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, মৌচাষ, নতুন ফসল পেরিলা, একানী, কিনোয়া এর সম্প্রসারণ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে কৃষকদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ নানা ধরনের জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

দায়িত্ব নেয়ার পর বিগত দুইটি ফলদ বৃক্ষমেলা করেছেন যা উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধিসহ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রশংসিত হয়। ২০২১ তে উপজেলা পরিষদ চত্তরে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন মেলায় তার নেতৃত্বে কৃষি বিভাগ কৃষি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা তথ্যসহ সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ১ম স্থান অর্জন করে।

ওই কর্মকর্তার নেতৃত্ব, গুন ও বিচক্ষণতায় উপজেলার ব্লক পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে বাঘার কৃষি পরিবারকে সকলের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রায়শই দেখা যায়,ওই কর্মকর্তার নেতৃত্বে কৃষি বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ কৃষকদের স্বার্থে, কৃষির উন্নয়নের স্বার্থে ফসলের মাঠে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন ও বাঘার ভাবমূর্তিকে উজ্জল করে রাখার কাজ করে যাচ্ছেন।

ওই অফিসার সম্পর্কে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও মেরাজ সরকার বলেন, মেলায় আগত দর্শনার্থী ও কৃষকগণ যাতে কৃষি বিভাগের চলমান কার্যক্রম ও কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে সেজন্য তিনি ফলদ বৃক্ষ মেলাকে একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তির সুন্দর উপস্থাপন করেছিলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল বলেন, ওই কর্মকর্তা একজন জনবান্ধব কর্মকর্তা।

রাজশাহীর অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বাঘা উপজেলায় সার, প্রণোদনা, পুনর্বাসন তুলনামূলক কম বরাদ্দ প্রদান করা হতো। কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিসার এই উপজেলায় যোগদান করার পর পূর্বের তুলনায় এই বরাদ্দের পরিমাণ অন্যান্য উপজেলার তুলনায় আনুপাতিক হারে বৃদ্ধির জন্য সবসময় সচেষ্ট ছিলেন এবং এই প্রণোদনা ও পুনর্বাসন যেন প্রকৃত কৃষকেরা পাই সেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়াও বাঘাতে নতুন নতুন ফসল অন্তর্ভুক্ত করা এবং এই উপজেলার ফসলের রপ্তানি বৃদ্ধি ও দেশের বিভিন্ন সুপারশপে উপজেলার আমসহ অন্যান্য ফল এর মার্কেটিং তৈরিতে সাহায্য করেছেন। বাঘা উপজেলার উৎপাদিত আম গুণে-মানে সেরা সেই বিষয়টি তুলে ধরতে ম্যাংগো ব্রান্ডিং কম্পিটিশন আয়োজন করে, কম্পিটিশনের বিজয়ীদের আকর্ষণীয় গিফট তুলে দিয়েছেন। উক্ত ব্রান্ডিং কম্পিটিশন সুধীসমাজে সমাদৃত হয়েছে।

খামার যান্ত্রিকীকরণে কৃষকদের মাঝে ভর্তুকিতে কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ, মিনি গার্ডেন টিলার, ফুট পাম্প স্প্রেয়ার বিতরণ করেছেন। চরের কৃষিতে এনেছেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এক সময়ের অনাবাদি চর এখন শস্য ভান্ডারে পরিণত হয়েছে। সকল ধরনের ফসল চাষ হচ্ছে বাঘার চরে। সারি সারি কুল বাগান, আম বাগান, পেয়ারা বাগান, বিভিন্ন আন্তঃফসল চাষ চরের কৃষিকে দিয়েছে বহুরূপিতা।

এই কৃষি অফিসার বলেন, যদি এই উপজেলায় আরো কিছুদিন থাকা স্বম্ভব হয় তাহলে উপজেলার কৃষি শুধু রাজশাহী নয় পুরো বাংলাদেশের কৃষির জন্য অনুকরণীয় হবে, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। তিনি আরো বলেন, এই উপজেলার কৃষকরা অনেক অগ্রগামী এবং নতুন ফসল চাষে যথেষ্ট আগ্রহী তাই এই উপজেলার কৃষি খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।

এছাড়াও আমার অফিসের সবাই একটা টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করি। যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা দ্রুত বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারসহ মাঠ পর্যায়ে সকল ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ নিরলসভাবে কৃষকের পাশে থেকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।