যেসব দেশ রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনে

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২২; সময়: ৪:৫২ অপরাহ্ণ |
যেসব দেশ রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিশ্বের সর্ববৃহৎ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অস্ত্র রপ্তানি করে রাশিয়া। বিশ্বে যত অস্ত্র বিক্রি হয়, তার প্রায় ২০ শতাংশই রাশিয়ার। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালে ৪৫টি দেশে ২ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে মস্কো।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রাশিয়ার তৈরি অস্ত্রের প্রায় ৯০ শতাংশ বিক্রি হয় ১০টি দেশে। রাশিয়ার তৈরি এসব অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলো ভারত। গত পাঁচ বছরে ভারত একাই রাশিয়ার ২৩ শতাংশ অস্ত্র কিনেছে, যার মূল্য ৬৫০ কোটি মার্কিন ডলার। শুধু তা–ই নয়, ভারতের মোট অস্ত্র আমদানির অর্ধেকই (৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ) আসে রাশিয়া থেকে।

সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) হিসাব অনুযায়ী, ভারতের পর রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে চীন। গত পাঁচ বছরে রাশিয়া থেকে চীন ৫১০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে। এরপর আলজেরিয়া ৪২০ কোটি, মিসর ৩৩০ কোটি এবং ভিয়েতনাম কিনেছে ১৭০ কোটি ডলারের অস্ত্র।

যেসব অস্ত্র বিক্রি করে রাশিয়া

যুদ্ধবিমান, ইঞ্জিন, ক্ষেপণাস্ত্র, সাঁজোয়া যান, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাসহ অনেক ধরনের অস্ত্র বিক্রি করে রাশিয়া। রাশিয়া যেসব অস্ত্র রপ্তানি করে, তার প্রায় অর্ধেকই (৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ) যুদ্ধবিমান। ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ১৩টি দেশে ৪০০ যুদ্ধবিমান বিক্রি করে রাশিয়া। এর মধ্যে সুখোই ও মিগ মডেলের যুদ্ধবিমান আছে, যার অর্ধেকই কিনেছে ভারত। বিশ্বে যে ছয়টি দেশের পরমাণুশক্তিচালিত সাবমেরিন আছে, তার একটি ভারত। ভারতকে সাবমেরিন ভাড়া দিয়েছে রাশিয়া।

অস্ত্রাগারে থাকা সোভিয়েত আমলের অস্ত্রের আধুনিকায়ন করেছে রাশিয়া। এ ছাড়া আরও উন্নত অস্ত্র তৈরি ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও বাড়িয়েছে মস্কো। এর মধ্যে রয়েছে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ভূমি থেকে আকাশে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায়। এখন পর্যন্ত চীন, ভারত, সিরিয়া ও তুরস্কের কাছে এস-৪০০ বিক্রি করেছে রাশিয়া। প্রতি ইউনিট ৪০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের এস-৪০০ কিনতে চায় আরও অনেক দেশ।

বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত অস্ত্র

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত অস্ত্র হচ্ছে একে-৪৭। এর নকশা করেছিলেন রুশ জেনারেল মিখাইল কালাশনিকভ। গত শতকের চল্লিশের দশকে এই অস্ত্র তৈরি করেন তিনি। এ জন্য একে-৪৭–কে কালাশনিকভ নামেও ডাকা হয়। এটা একই সঙ্গে দামে সস্তা, মজবুত ও সহজে ব্যবহার করা যায়। শতাধিক দেশের পদাতিক সেনারা এই অস্ত্র ব্যবহার করেন। একে–এর অর্থ হচ্ছে অভটোমাট কালাশনিকভা বা স্বয়ংক্রিয় কালাশনিকভ। এর সঙ্গে ‘৪৭’ জুড়ে দেওয়ার কারণ, এটা তৈরি করা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে।

একে-৪৭-এর চেয়ে বেশি কোনো অস্ত্র বিশ্বে নেই। আনুমানিক এক হিসাব অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে শতাধিক দেশে ১০ কোটি একে-৪৭ বা একই ধরনের অস্ত্র রয়েছে।

সামরিক খাতে ব্যয়ে শীর্ষে যারা

এসআইপিআরআইয়ের হিসাবে বিশ্বে সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে ৭৭ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে থাকা ১০টি দেশের সম্মিলিত সামরিক ব্যয়ের চেয়েও বেশি ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে চীন। এরপর যথাক্রমে ভারত ৭ হাজার ৩০০ কোটি, রাশিয়া ৬ হাজার ২০০ কোটি এবং যুক্তরাজ্য ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে।

রাশিয়ার সামরিক ব্যয়

বিগত তিন দশকে রাশিয়ার সামরিক খাতে ব্যয় বেড়েছে উল্লেখ করার মতো। ২০২০ সালে মস্কো সামরিক খাতে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার (দেশটির জিডিপির ৪ শতাংশ) ব্যয় করে। রাশিয়ায় অস্ত্র তৈরি করে—এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ কাজ করেন। রাশিয়ার অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ হলো রোসটেক নামের একটি কোম্পানি। ২০০৭ সালে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

যেসব সংঘাতে জড়িয়েছে রাশিয়া

১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গঠিত হয় রাশিয়া ফেডারেশন। এরপর একাধিক সংঘাতে জড়িয়েছে মস্কো। ১৯৯৪ সালে জর্জিয়া সীমান্তবর্তী চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে ক্রেমলিন। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদী নিধন অভিযানে ২০ মাসের লড়াইয়ে ক্রেমলিন দৃশ্যত পরাজিত হয়।

তবে ব্যর্থ হয়েও পিছপা হয়নি ক্রেমলিন। তিন বছর পর চেচনিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে স্বঘোষিত চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া। রাশিয়ার ব্যাপক অভিযানের মুখে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনির পতন ঘটে। গ্রোজনিতে রুশ ধ্বংসযজ্ঞকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহর হিসেবে অভিহিত করে জাতিসংঘ।

২০১৪ সালে ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। এর এক মাস পর রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পূর্ব ইউক্রেনে লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল দখলে নিতে শুরু করে। এর পর থেকে সেখানে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াই চলছে। সম্প্রতি এই দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ১১তম বছরে পড়েছে। ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষ নিয়ে সিরিয়া যুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নেয় রাশিয়া। এরপর মস্কো ভারী ও আধুনিক অস্ত্রের সাহায্যে সিরিয়ায় আসাদের অবস্থান সংহত করেছে। সিরিয়া যুদ্ধে লাখো মানুষ বাড়িঘর ছেড়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

২০১৮ সালে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহীদের যুদ্ধ শুরু হয়। দেশটির সরকার তাদের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য রাশিয়ার সামরিক ঠিকাদারদের পাঠানোর আহ্বান জানায়। দেশটিতে ভাড়াটে সৈন্যদের দ্বারা ‘মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন’ হয়েছে বলে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করলেও মস্কো তা অস্বীকার করে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে