মহাদেবপুরে ভুল কীটনাশক প্রয়োগে কৃষকের ক্ষতি প্রায় ৫ লক্ষ টাকা

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২২; সময়: ৪:১৬ অপরাহ্ণ |
মহাদেবপুরে ভুল কীটনাশক প্রয়োগে কৃষকের ক্ষতি প্রায় ৫ লক্ষ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, মহাদেবপুর : নওগাঁর মহাদেবপুরে ভূল কীটনাশক প্রয়োগে পেঁয়াজ বীজ পুড়ে যাওয়ায় এক কৃষকের প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পেঁয়াজ বীজের সাথে পুড়ে গেছে ওই কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। স্ত্রীর মাধ্যমে দুটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১০ মণ পেঁয়াজ লাগিয়েছিলেন তিনি। এখন তাদের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে ঋণের কিস্তির চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক দম্পতি।

কীটনাশকের ডিলার বলছেন, ভালো কোম্পানীর ভালো ওষুধ দিয়েছেন। আর কৃষি বিভাগ বলছে ওই কীটনাশক পেঁয়াজের জন্য নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সফাপুর মাদ্রাসাপাড়া গ্রামের মিরাজ উদ্দিনের ছেলে সহায় সম্বলহীন, ভূমিহীন দিনমজুর চাষী দুলাল হোসেন। নিজের জমি না থাকায় অন্যের জমিতে কাজ করে দিন আনে দিন খায়। অন্যের জমিতে কামলা দেয়ার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখতেন নিজেই কিছু জমি চাষ করবেন। সেই স্বপ্ন থেকেই ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল আলম বাচ্চুর ১৭ কাঠা জমিতে লাগিয়েছেন পেঁয়াজ বীজ।

গতবছর ৫ সের পেঁয়াজ লাগিয়ে সফলতা পেয়েছিলেন। তাই এবার স্ত্রীর মাধ্যমে দুটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ওই জমিতে ১০ মণ পেঁয়াজ লাগিয়েছেন। খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার পুরোটাই। তার উপর নিজেদের শ্রম তো রয়েছেই।

তিনি জানান, আর মাত্র দুসপ্তাহ পরেই ঘরে উঠতো পেঁয়াজের বীজ। বাজারে পেঁয়াজের বীজের দাম অনেক। গতবছর বিক্রি হয়েছে তিন হাজার দুশ’ টাকা কেজি দরে। এবার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার আটশ’ টাকায়। ১৭ কাঠা জমি থেকে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার পেঁয়াজ বীজ উঠতো।

রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে গ্রামীণ সড়কের পাশেই এই পুড়ে যাওয়া পেঁয়াজ বীজের খেত দেখে খোঁজ নিতে গেলে কৃষক দুলাল কীটনাশক দোকানের কয়েকটি রশিদ দেখিয়ে জানালেন, প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের সার আর কীটনাশক কিনতেন পাহাড়পুর বাজারের কীটনাশকের ডিলার নাহিদের দোকান থেকে। তারই পরামর্শে এই খেতে যাতে কোন পোকা না লাগে, আর পঁচামিনা রোগে যেন আক্রান্ত না হয় সেজন্য গত ১৬ মার্চ তার দোকান থেকে পেঁয়াজের বীজের খেতে প্রয়োগের জন্য কিনে আনেন বায়ার কোম্পানীর নাটিভো-১০ গ্রাম ১২০ টাকায় ও সলোমন-১০০ মিলিগ্রাম ২৪০ টাকায়। কয়েকদিন আগে সেগুলো ডিলারের পরামর্শ মত পানির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করেছেন পেঁয়াজের বীজের জমিতে।

কিন্তু তিন দিন পরেই সব শেষ। সাদা সাদা বীজগুলো পুড়ে কালো বর্ণ ধারণ করেছে। দুএকটি গাছে সাদা সাদা বীজ এখনও থাকলেও পুড়ে ছাঁই হয়েছে কৃষক দুলাল-আসমা দম্পতির সব স্বপ্ন। কৃষক দুলালের কিষাণী স্ত্রী আসমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানালেন, খেতের ফসল হারিয়ে তার স্বামী একেবারে ভেঙ্গে পড়েছেন। দুই সমিতির কিস্তির টাকা কোত্থেকে দিবেন তা নিয়েও দিশেহারা। নিরুপায় হয়ে প্রায়ই দুলাল আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছেন। তার জমির পাশেই চোখে পড়লো গ্রামের একটি ঢোকের দোকান।

দোকানী মহির উদ্দিনের ছেলে দবির উদ্দিন জানালেন, এই বিষ ছাড়া পেঁয়াজের বীজ পুড়ে যাবার আর কোনই কারণ নাই। অন্য গ্রামবাসীরও একই মত। তারা দরিদ্র কৃষক দুলালের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। পাহাড়পুর বাজারে কীটনাশকের ডিলার রায়হান কবির নাহিদের ‘মাস্টার কৃষি ক্লিনিক’।

তার দোকান বন্ধ থাকায় মোবাইলফোনে নাহিদ ওই কৃষক দুলালকে ওই কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কেন পুড়ে গেলো সেটার জন্য কোম্পানীকে বলেন।’ পরামর্শ দেয়ার জন্য তিনি কোন ট্রেনিং নিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

এ ব্যপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, নাহিদ একজন লাইসেন্সধারী কীটনাশক বিক্রেতা। কিন্তু ওই দুটি কীটনাশক পেঁয়াজ বীজের জন্য প্রযোজ্য নয়। সেগুলো শুধুমাত্র ধানের খেতে প্রয়োগ করা হয়। তাছাড়া পেঁয়াজ বীজ এখন ওঠার সময়। এসময় কোন কীটনাশকের প্রয়োজনই হয় না। ওই বিক্রেতা বিক্রি বাড়াতে না জেনেই ওই কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, একজন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে ওই এলাকায় পাঠাচ্ছেন। ভূল পরামর্শ দিয়ে কৃষকের ক্ষতি হওয়ায় ওই কীটনাশক বিক্রেতার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে