গ্যারেজেই পড়ে থাকছে দেড় কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্সটি

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২২; সময়: ৪:৩৩ অপরাহ্ণ |
গ্যারেজেই পড়ে থাকছে দেড় কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্সটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউ সুবিধাসম্পন্ন দেড় কোটি টাকা দামের অ্যাম্বুলেন্সটির লোকবল সংকট রয়েই গেছে। এ কারণে গত সাত মাসে অ্যাম্বুলেন্সটিতে মাত্র আটজন রোগী বহন করা হয়েছে। প্রয়োজন থাকার পরও কেবল লোকবলের অভাবে চাইলেও সব সময় এটিতে রোগী পরিবহন করা যাচ্ছে না। বেশির ভাগ সময় গ্যারেজেই পড়ে থাকছে অ্যাম্বুলেন্সটি।

অ্যাম্বুলেন্সটি পাওয়ার পর থেকে দুই বছর এটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যারেজে পড়ে ছিল। এ নিয়ে গত বছরের ৩০ আগস্ট প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘দুই বছর ধরে পড়ে আছে দেড় কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্স’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হাসপাতালকে চিঠি পাঠিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি চালুর বিষয়ে নির্দেশনা দেয়।

গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর অ্যাম্বুলেন্সটিতে প্রথম রোগী বহন করা হয়। এরপর গত সাত মাসে এটিতে পরিবহন করা হয়েছে মাত্র আটজন রোগী। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন করা হয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ইতালি থেকে পাঁচটি কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স আনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর একটি পায় এই হাসপাতাল। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) অ্যাম্বুলেন্সটির ভেতরে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির পালস অক্সিমিটার, ইসিজি মেশিন, সিরিঞ্জ পাম্প, ভেন্টিলেটর মেশিন, সাকার মেশিন, মনিটর, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।

১ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৫ টাকা দামের অ্যাম্বুলেন্সটির জন্য একজন আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চিকিৎসক ও নার্স প্রয়োজন। লোকবল না থাকায় এটি চালানো যাচ্ছিল না বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর আগে জানিয়েছিল।

গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো অ্যাম্বুলেন্সটিতে করে রাজশাহী থেকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রোগী নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত সাত মাসে অ্যাম্বুলেন্সটিতে আটজন রোগী বহন করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে ঢাকায় এবং দুজনকে সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সৃষ্ট চালকের পদ আছে আটটি। এ ছাড়া হাসপাতালের ১১ নম্বর মডেল ওয়ার্ডের জন্য একটি। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ছয়জন চালক। তাঁদের মধ্যে একজন মাদকাসক্ত হওয়ায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত আছেন।

ফলে কর্মরত আছেন পাঁচজন। বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিক হিসেবে নেওয়া হয়েছে দুজনকে। দিনে তিন শিফটে ছয়জন, পরিচালক ও উপপরিচালকের গাড়ির জন্য দুজন এবং হাসপাতালের একটি গাড়ির জন্য একজন-হাসপাতালে এভাবে দিনে মোট নয়জন চালকের দরকার। এমন ঘাটতির মধ্যেই আবার কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সের জন্য দুজন চালকের প্রয়োজন।

এ ছাড়া এটি নিয়ে ঢাকায় যাওয়া যায় না। যখন এই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের একান্ত প্রয়োজন পড়ে তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চালকদের ইনচার্জ আশরাফুল আলীকে দিয়ে পাঠান। এ জন্য বেশির ভাগ সময় এ অ্যাম্বুলেন্সের পরিবর্তে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী বলেন, ১৯৫৮ সালের জনবল দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটিতে আইসিইউ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু এ জন্য আইসিইউর দক্ষতা রয়েছে, এমন একজন চিকিৎসক ও একজন নার্স সঙ্গে দিতে হয়।

তিনি বলেন, দুজন চালক দরকার। হাসপাতালে এসব লোকবলের কোনো বরাদ্দ নেই। তারপরও কেউ অ্যাম্বুলেন্সটি নিতে চাইলে তাঁরা বিশেষ ব্যবস্থায় এটিতে করে রোগী পাঠিয়ে থাকেন। সূত্র- প্রথম আলো

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে