ক্ষেতেই মরে যাচ্ছে কৃষকের কালো সোনা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২২; সময়: ১০:১৭ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
ক্ষেতেই মরে যাচ্ছে কৃষকের কালো সোনা

আসাদুজ্জামান মিঠু : রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের মুন্ডুমালা পৌরসভার গৌরাঙ্গাপুর গ্রামের কৃষক লৎফর রহমান। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছিলেন। দুই বিঘা বীজ চাষ করতে তার প্রাথমিক খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা হয়েছে। শুরুতেই কদম ভালই হয়েছিল।

সাদা ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল ক্ষেত। ফুলের সুবাস ও মৌমাছির গুনগুণ শব্দে মনে আকাশ ছোয়া স্বপ্ন বুনছিলেন তিনি। কিছু দিন পরেই সাদা ফুল থেকে কালো সোনাবই রুপ নিবে।

এর মধ্যে হঠাৎ করে তার ক্ষেতে কালো সোনাই মরক ধরে মরতে থাকে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে তার পুরো ক্ষেতের পেঁয়াজ বীজ(কদম)মরে কালো হয়ে যাই। অনেক কীটনাশক ব্যবহার করেও কোন লাভ হয়নি তার। এতো টাকা খরচাপাতি করে এখন তিনি পথে বসার উপক্রম।

এছাড়া একই গ্রামে আতাউর ,আলাউদ্দিন শফিক, মতিউর, বাহাদুর,তালেব, তরিকুল এবং মাতিন সবাই পেঁয়াজ বীজ(কদম) চাষ করেছিলেন। সবারই একই মরক ধরে ক্ষেত শেষ হয়েগেছে। এরাও সবাই কৃষক লুৎফর মতই খরচপাতি করে পথে বসতে বসেছে।

চলতি মৌসুমে শুধু মুন্ডুমালা পৌরসভার গৌরাঙ্গাপুরের গ্রামে কৃষকেরাই একাই নয়,জেলার তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ চাষীর পেঁয়াজ বীজ (কদম) চাষ করে মরকের কবলে পড়েছেন।

তবে এসব পেঁয়াজ বীজ(কদম)মরককে অতিরিক্ত তাপমাত্রাকেই দায়ী করছেন মাঠ পর্যায়ের কাজ করা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। তারা বলছেন বরেন্দ্র অঞ্চলে হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় দিগুণ সেসাথে রাতে পড়ছে কোঁশা।

গত কয়েক বছর থেকে দেশের মানুষের মাঝে একটু বাড়তি আগ্রহ দেখা দিয়েছে পেঁয়াজ নিয়ে। তাই কয়েক মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ করেনি এমন কৃষকের সংখ্যা একেবারে কম। আর সে কারণে পেঁয়াজের বীজ যেন কৃষকের কাছে সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।

তাই তো খাওয়ার পেঁয়াজের পাশাপাশি রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা এখন ঝুঁকেছে পেঁয়াজের বীজ চাষে।
জেলার অনেক মাঠ সাদা ফুলের মাঝে এ কালো সোনাতেই অনেক কৃষক আগামীর স্বপ্ন বুনছিলেন। লাভ বেশি হওয়ার কারণে দিনে দিনে পেঁয়াজের বীজ চাষ বাড়ছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে, গত বছর জেলায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে চাষ হয়েছিল ২৭৫ হেক্টর। চলতি বছর ৩০ হেক্টর বেড়ে উৎপাদন হচ্ছে ৩০৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলাতেই চলতি মৌসুমে প্রায় ১৩০ হেক্টর জমিতে পেয়াজের বীজ চাষ হয়েছে। পানি খরচ কম ও উৎপাদিত বীজের বাজার মূল্য আকাশছোঁয়া থাকায় অনেক কৃষক অন্যসব ফসলের চেয়ে পেঁয়াজের বীজ চাষেই ঝুঁকছেন।

চাষীরা জানান,পেঁয়াজ বীজের আকাশ ছোয়া দাম। চাষ বোপন হতে বীজ উঠা পর্যন্ত বিঘাপ্রতি খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ১ বিঘা জমি হতে বীজ পাওয়া যায় দুই হতে আড়াই মণ। সময়ের ব্যবধানে বাজারে এক মন বীজ বিক্রি হয় ৬০ হাজার হতে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাই পেঁয়াজ বীজ কৃষকেরা কাছে সোনার চেয়েও দামি হয়ে উঠেছে।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক মনসুর রহমান জানান, তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছিলেন। তার ভাল ফলনের সম্ভাবনাও ছিল। বেশি দাম পেলে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হবেন এমন আশা ছিল তার মনে। কিন্তু শেষ মূহুর্তে তার ক্ষেতে পচন ও মরক ধরে পুরো ক্ষেতের পেঁয়াজ বীজ নষ্ট হয়েগেছে। ফলে তিনি দিশে হারা হয়ে পড়েছে।

তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মদ বলেন, পেঁযাজ বীজ মরকের বিষয়টি দুই ভাবে হতে পারে। পোকার আক্রমণ নয়তো বা অতিরিক্ত তাপমাত্রা। পেঁয়াজে অনেক রোগ বালাই হয়। তবে বীজের বিষয়টি অতিরিক্ত তাপমাত্রা হতে পারে। বীজ ৪ থেকে ১৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা নিতে পারে। সেখানে বরেন্দ্র অঞ্চলে ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রিতে গিয়ে তাপমাত্রা উঠা নামা করছেন। অতিরিক্ত তাপমাত্রাই মরকের কারণ হতে পারে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে