তেল নিয়ে ব্যবসায়ীরা কথা রাখেননি: বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: মে ৯, ২০২২; সময়: ১:৩২ অপরাহ্ণ |
তেল নিয়ে ব্যবসায়ীরা কথা রাখেননি: বাণিজ্যমন্ত্রী

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :  রমজানের পরপরই সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তেল মজুদের পাশাপাশি নিত্যপণ্যটির দাম বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ীরা কথা রাখেননি বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

সোমবার ভোজ্যতেলের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে উৎপানকারী প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

টিপু মুনশি বলেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি দাম ঠিক করা হয়েছিল। পরে সরকারের কাছে অনুরোধ করার পর ভোজ্যতেলে ওপর ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়। মাঝে ব্যবসায়ীদের রমজানে মানুষের কথা ভেবে দাম না বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়। বলা হয়েছিল মিল মালিকরা দাম না বাড়ালে যাতে কোনো পর্যায়ে দাম না বাড়ে। এটাও বলা হয়েছিল রমজানের পরে দ্রুত তাদের সঙ্গে বসা হবে। এটা পরিষ্কার করেই বলা হয়েছিল। কিন্তু সেইখানে তারা কথা রাখেননি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দামটা চেপে রাখা হয়েছিল রমজান মাসের কথা বলে। যে কারণে বড় থেকে সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা জানত ঈদের পরে দাম বাড়বে। এটা তো অংক। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমাদেরও দাম বাড়বে। তাই ঈদের দশদিন আগে থেকে তারা তেল কমিয়ে দিয়েছেন। যে কারণেই একজনের গুদামে এক হাজার লিটার তেল পাওয়া গেছে। এমন কি একজন গৃহস্থ পাঁচ লিটারের দশ বোতল তেল কিনে রেখেছেন। টিসিবির লাইন থেকে যে তেল কেনেন তিনিও একাধিকবার তেল নিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে মিল মালিকরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে মন্ত্রণালয়ে গেলেও সরকার তাতে সায় দেয়নি।

সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল ১৪৩ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

গত মার্চের মাঝামাঝিতে তেলের আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের পর ঈদের আগে লিটারে ৭ টাকা করে দাম কমানো হয়েছিল।

এরপর এপ্রিল ও মে মাসে ধীরে ধীরে বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিতে থাকেন মিল মালিকরা। দাম বৃদ্ধির আশায় ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারাও তেলের মজুদ শুরু করেন। এরপর থেকে খুচরা বাজার থেকে হঠাৎ সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যায়। এরপর বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

এমন পরিস্থিতিতে ভোজ্যতেলের বাজার পর্যালোচনা করতে উৎপানকারী প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

বৈঠকে তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে টিপু মুনশি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। কেউ বলছে না গ্লোবাল মার্কেটে তেলের দাম কতটা বেড়েছে। দাম বেড়েছে সেটা সত্য, সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে সেটাও সত্য। কিন্তু কারণটা জানালে মানুষ বুঝতে পারে। তেলের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ বাইরের প্রতি ডিপেনডেন্ট থাকতে হয়।

মন্ত্রী বলেন, ঈদের কয়দিন আগে থেকে অনেকে তেল ধরে রাখল। কারচুপিটা এখানে হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে যেন এগুলো না হয় সেটি দেখতে হবে। আমার মনে হচ্ছে তাদের অনুরোধ করা ঠিক হয়নি যে রমজানে তেলের দাম না বাড়ানোর কথাটি বলা। কারণ তাদের যদি একটি দাম বৃদ্ধি করে দিতাম তাহলে এটি হতো না। ভারতে তেলের দাম কতো? তাদের দামও ১০-১২ টাকা বেশি আছে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা মনিটর করব। ব্যবসায়ীদের চাপ দিতে চাই না। মানুষের ক্রাইসিস হলে ইন্টারফেয়ার করতে হবে। তবে মাঝে অনেকে সুযোগ নিয়েছে, কারণ তারা জানে ঈদের পর দাম বাড়বে। সেজন্য তারা মজুদ করে রেখেছিল।

টিপু মুনশি বলেন, আমরা যদি মাঝে আরেকবার দাম বাড়াতাম এবং এখন বাড়ালে ৩৮ টাকাই তেলের দাম বাড়ত। তিন মাসের ব্যবধানে বাড়িয়ে এটি হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণে বাজারে সরবরাহের সংকটে কারসাজি করেছেন মিলার থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ীরা। যারা ইচ্ছাকৃত দাম বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রিটেইলার অপরাধ করলে সংগঠনেরও ব্যবস্থা নিতে হবে।

তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা ঠিক। বলেছিলাম রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়াবেন না। কিন্তু তারা ঈদের সাতদিন সেই কথা রাখেনি। আমাদের সব অর্গানাইজেশনকে বলেছি যে দাম নির্ধারিত আছে সেটি যাতে ঠিক রাখা হয়।’

কোটি পরিবারকে টিসিবির পণ্য দেওয়ার কথা উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, আগামী জুন মাস থেকে ১ কোটি পরিবারকে টিসিবির পণ্য দেবো। তেলের সিন্ডিকেটের কোনো নমুনা পাইনি। রিটেইলার, ডিলাররা সুযোগটা নিয়েছে। আমরা চেষ্টা করব রিটেইলার থেকে ডিলার পর্যায়ে কেউ যাতে সুযোগ নিতে না পারে। লাখ লাখ ডিলারের সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই।

তেল নিয়ে এমন অবস্থা দেখে শিক্ষা পেয়েছেন বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে