মহাদেবপুরে দেড় যুগ ধরে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করছেন ইউনুছার

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২; সময়: ১:২৯ অপরাহ্ণ |
মহাদেবপুরে দেড় যুগ ধরে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করছেন ইউনুছার

আইনুল হোসেন, মহাদেবপুর : নওগাঁর মহাদেবপুরে দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ও পাখিদের নিয়ে কাজ করছেন মোঃ ইউনুছার রহমান হেবজুল। বন্যপ্রাণী বিষয়ক শিক্ষা, গবেষণা, সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা সৃষ্টির স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর হাতে তুলে দেন বঙ্গবন্ধু এওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ২০১৬ সনদপত্র। সনদপত্রের সাথে দেয়া হয় দুই ভরি ওজনের স্বর্ণের মেডেল ও ৫০ হাজার টাকার চেক। ইউনুছার রহমান হেবজুল নিজ উদ্যোগে ২০০৬ সালে প্রত্যন্ত গ্রাম হাসানপুরে গড়ে তোলেন জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণী ও নদী সংরক্ষণ কমিটি (জীবন)। এই সংগঠনের তিনি সভাপতি। এই সংগঠনের মাধ্যমেই তার বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন পাখিদের অভয়াশ্রম।

তিনি সব সময় পাখি নিয়েই ভাবতে থাকেন, একসময় পাখিই হয়ে ওঠে তার ধ্যান-জ্ঞান। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাসানপুর হয়ে ওঠে পাখি শিকার মুক্ত একটি গ্রাম। পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল ও প্রজনন নিশ্চিত করায় সেখানে প্রতিদিন (প্রজনন মৌসুমে) বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার (শামুকখোল, সাদা বক, নিশি বক, কানি বক, পানকৌড়ি, রাতচরা, ডাহুক, ঘুঘু, মাছরাঙ্গা, শালিক, ফিঙ্গে ইত্যাদি) নিরাপদে দিন যাপন করে থাকে।

তারই প্রচেষ্টায় হাসানপুর পাখিগ্রাম নামে পরিচিতি পায় সারা দেশে। তার এ পাখিগ্রাম দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তৎকালীন সিসিএফ ইউনুস আলী, নওগাঁর জেলা প্রশাসক এনামুল হক, জলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান, তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোল্লা রেজাউল করিম, আবুল কালাম, জিল্লুর রহমান, মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম মাকসুদা খাতুন, আখতারুজ্জামান, আমিনুর রহমানসহ দেশী বিদেশী অনেকেই। তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান এখনও জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণী ও নদী সংরক্ষণে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার তৈরি ও বিতরণ করে চলেছেন।

এছাড়াও এলাকায় মাইকিং, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে চিত্রাংকন ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন, সেমিনার, বন্যপ্রাণী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, বন্যপ্রাণী শিকারে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি উদ্ধার অব্যাহত রেখেছেন। বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, অভিযোগ দায়ের ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা প্রদান করে আসছেন। তার ভালো কাজের মূল্যায়ণ স্বরূপ এলাকার মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা পাওয়ার পাশাপাশি পেয়েছেন বিভিন্ন সংগঠন থেকে ১০টি সম্মাননা ক্রেস্ট। ২০১১ সালে ইউপি নির্বাচনে তার গ্রাম মহাদেবপুর সদর ইউপির ৪নং ওয়ার্ড থেকে তাকে সদস্য নির্বাচিত করেছিলেন।

এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও নওগাঁ জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর জীবনের একটি স্বরণীয় ঘটনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের মিটিংয়ে বগুড়ায় যাওয়ার পথে দেখতে পান সান্তাহার বাইপাসে সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শেয়াল মরে পড়ে আছে। সেখানে শেয়ালটির ছোট ছোট বাচ্চাগুলো মাকে ঘিরে বসে রয়েছে। বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক, কিন্তু আমাদের কিছু না করতে পারার ব্যর্থতা আমাকে কাঁদায়। সবশেষ তিনি জানান, আমৃত্যু তিনি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পাখিদের নিয়ে কাজ করে যেতে চান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে