গুরুদাসপুরে জুয়েলের প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব ৬ পরিবার

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২২; সময়: ৫:৩৬ অপরাহ্ণ |
গুরুদাসপুরে জুয়েলের প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব ৬ পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, গুরুদাসপুুর : দারিদ্রতাকে জয় করে পরিবারে স্বচ্ছলতা আনবেন। মায়ের নামে বানাবেন সুন্দর একটি বাড়ি। পাঠাবেন রেমিট্যান্স। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে দেশের অর্থনীতিতে রাখবেন ভূমিকা। কান্না জরিতকন্ঠে সন্তানের এমনই অনেক আশার কথা জানালেন হত দরিদ্র মা ছবেদা বেগম (৬০)।

কারণ, ভাগ্য বদলের আশায় জমিজমা বন্ধক, স্বর্ণালংকার বিক্রি ছাড়াও ঋণের টাকায় সৌদি আরব গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তার ছেলে শরিফুল ইসলাম (২০)। শরিফুল নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ইমাদারপাড়া গ্রামের রমজান মোল্লার ছেলে।

ছবেদা বেগম বলেন, ভালো চাকুরি দেয়ার কথা বলে নাজিরপুরের রানীনগর গ্রামের রাজ্জাক মোল্লার ছেলে জুয়েল মোল্লা (৩০) সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়ে সাত মাস আগে তার ছেলে শরিফুলকে কাজের কথা বলে ৯০দিনের টুরিস্ট ভিসায় সৌদি আরব পাঠায় জুয়েল মোল্লা।

কথা ছিলো ভালো বেতনের চাকরি দেওয়া হবে শরিফুলকে। সেখানে গিয়ে কোনো চাকুরি দেওয়া হয়নি তার ছেলেকে। তাই ছেলের জন্য ধার-দেনা করে দেশ থেকে টাকা পাঠাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে গত চার মাস আগে শেষ হয়েছে ভিসার মেয়াদ।

তাই থাকতে হচ্ছে লুকিয়ে। সেখানে ভয় আর কষ্ট নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন তার ছেলে। ছবেদা বেগম আরও বলেন, এবিষয়ে জুয়েল ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বললে তারা খারাপ আচরণ করে এবং হত্যার হুমকি দেয়।

এ ঘটনায় শরিফুলের চাচা আবু তালেব বাদী হয়ে জুয়েলসহ চার জনকে আসামী করে গুরুদাসপুর থানায় একটি জিডি করেন।

একইভাবে জুয়েলের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, নাজিরপুর ইউনিয়নের নতুনপাড়া গ্রামের রহিম আলী (৩২), রশিদপুর গ্রামের ইয়াছিন আরাফাত (২৬) ও ইমাদারপাড়া গ্রামের রইছ উদ্দিন (২৫)। চাপিলা ইউনিয়নের বৃ-পাথুরিয়া গ্রামের কামরুল ইসলাম (২২) এবং তাড়াশ উপজেলার ধামাইচ গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৩২)।

ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের অভিযোগ, চাকুরি না পেলে দেশে ফিরিয়ে দেবার আনুরোধ জানান। বেতন না পেলে জুয়েল দেশ থেকেই বেতনের টাকা দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদেশ পাঠিয়েছেন তিনি। তাদের কাছ থেকেও নেওয়া হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ করে টাকা।

তবে কারো কপালেই জোটেনি চাকুরি। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় পালিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। ঠিকমতো খাবার ওথাকার জায়গা পাচ্ছেনা সবাই। খাবারের অভাবে একটি রুটি ছয় জন মিলে ভাগাভাগি করেও খাচ্ছেন তারা।

কিন্ত জুয়েল এখন কোনো কথাই শুনছেননা। উল্টো বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। এব্যাপারে সঠিক তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবী করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকাবাসী।

অভিযুক্ত জুয়েল বলেন, আমার কাজ শুধু তাদেরকে বিদেশে পাঠানো। চাকুরি না পাওয়ার জন্য আমি দায়ী নই। এটা তাদের ভাগ্যের দোষ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, জুয়েলের বিরুদ্ধে এসব বিষয় নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ও একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ভুক্তভোগীর পক্ষে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

গুরুদাসপুর থানার ওসি আব্দুল মতিন বলেন, এ বিষয়ে একটি এনজিআর মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদনটি বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে