ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহারে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৩; সময়: ৭:১৮ অপরাহ্ণ |
ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহারে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছীতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুর ।

গতবারের চেয়ে এবার ঈদুল ফিতরে ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনে দর্শনার্থী বেড়েছে। ঈদের দিন গত শনিবার ও রোববার দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল চোঁখে পড়ার মতো। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে ছুটে এসেছেন। নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো থাকায় দর্শনার্থীরা ঘুরতেও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।

বিভিন্ন স্থানের লোকজন রেলপথে জয়পুরহাট এসে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে যাচ্ছেন। এবার পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাাফিক পুলিশ থাকায় যানজটও নেই বললেই চলে। এতেকরে দর্শনার্থীরা যাতায়াত করে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। ঈদের ছুটিতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার রেকর্ড পরিমাণ দর্শনার্থী আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরের কাস্টডিয়ান।

সরেজমিনে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে গিয়ে দেখাযায়, দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকেই পরিবার–পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে পাহাড়পুর ঘুরতে এসেছেন। এ সময় অনেককে সেলফি তুলতেও দেখা যায়। নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মতো। দর্শনার্থীরা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের চতুর্দিক ঘুরে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন।

ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে রয়েছে সৌন্দর্য বর্ধনশীল ও আকর্ষনীয় মূল প্রবেশদ্বার। প্রবেশ দ্বারের দক্ষিন পার্শ্বের কক্ষে রয়েছে প্রত্ন সামগ্রী ও বই। উত্তর পার্শ্বে কক্ষে রয়েছে টিকিট কাউন্টার। তাঁর পার্শ্বে রয়েছে মহিলা টয়লেট ও পুরুষ টয়লেট। আরো আছে ১টি মসজিদ। রয়েছে অফিসারদের জন্য কোয়ার্টার, ব্যাটিলিয়ানদের জন্য আনসার কোয়ার্টার, স্টাফ কোয়ার্টার। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য রয়েছে ১০টি ছাউনী সেই ছাউনি গুলো সেজেছে বিভিন্ন সাজে। আর এই ছাউনী গুলিতে ক্লান্ত দর্শনার্থীরা বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আর দর্শনার্থীর ছাউনিগুলোর পার্শ্বেই রয়েছে পুরাতন আদলে নির্মিত ১টি পুকুর।

এছাড়া পাথওয়ের মাঝে রয়েছে বসার স্থান। আর এ পাথওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মনোরোম পরিবেশে । রয়েছে গাড়ী পার্কিং এর জায়গা। এর মধ্যে পিকনিক কর্নার থেকে সরাসরি বৌদ্ধ মন্দির প্রব্রেশ পথে রয়েছে ১টি ব্রিজ। বৌদ্ধ মন্দিরের প্রধান ফটক সহ ভিতরে রয়েছে মোট ৩টি ব্রিজ। আর বৌদ্ধ মন্দিরের চুড়ায় উঠার জন্য আছে কাঠের সিঁড়ি। আর এসব দৃশ্য দেখে যেন মন ভরেযাবে যেকোন কারো।

জানা যায়, এবছর ঈদুল ফিতরের ছুটির দিনে বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও রাজধানী ঢাকা থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী আনন্দ করতে এই ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহার পাহাড়পুরে ছুটে এসেছেন।

গত শনিবার, রোববার গিয়ে দেখে ও শুনে জানাযায়, ঈদের দিন দুপুর থেকে এই পাহাড়পুরে দর্শনার্থীদের আগমন বাড়তে থাকে। আর দর্শনার্থীদের আগমন উপলক্ষে বৌদ্ধবিহার পাহাড়পুর সংলগ্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ কসমেটিস ও ঝিনুকের দোকানগুলো দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন বর্ণিল সাজে সাজিয়েছেন দোকানিরা।

দোকানীরা জানান, এই রোজার ঈদের পাঁচ থেকে সাত দিন ব্যপক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এই বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুরে। আর প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার দর্শনার্থী এই পাহাড়পুর পরিদর্শন করতে আসে।

বিভিন্ন জায়গার ভ্রমণ প্রিয়াসি দর্শনার্থীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুরের নাম আমরা অনেক শুনেছি ও জেনেছি কিন্তু সময়ের অভাবে এটি বাস্তবে দেখার সময় হয়নি। আর এ বছর ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে এসে বাস্তবে এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে খুব ভাল লাগছে।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা ছয়জন বন্ধু ট্রেনযোগে জয়পুরহাট রেলস্টেশনে এসে নেমেছি। সেখান থেকে ইজিবাইকে চড়ে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে এসেছি। জয়পুরহাট থেকে পাহাড়পুরের দূরত্ব খুবই কম। আবার যোগাযোগব্যবস্থাও ভালো। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে এসে আমরা সবাই খুবই আনন্দ পেয়েছি।

দর্শনার্থী আতিক, সপ্না, খুশি, রাফি, রুমু ও সেতু সহ অনেকেই বলেন, আমরা এখানে এর আগে বহুবার এসেছি । কিন্তু এবার এখানে এসে মনে হচ্ছে নতুন এক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুরকে দেখছি ও পুরো পাহাড়পুরটি পরিদর্শন করে আমরা খুবই আনন্দ পেয়েছি ।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর ঈদুল ফিতরের দিনে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছিল। এবারের ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন ২১ হাজারের বেশি দর্শনার্থী হয়েছিল। ঈদের দ্বিতীয় দিন রোববার ২৪ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। ঈদে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে যানবাহনের চাপ থাকত। এ কারণে আগে থেকে পাহাড়পুর এলাকা যানজটমুক্ত রাখার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছিল। তাঁরা ঈদে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এরিই ধারাবাহিকতায় ঈদের দিন থেকেই পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে ট্রাফিক পুলিশ দেওয়া হয়। এতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এলাকায় আগের ঈদের মতো আর যানজট নেই। দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যেবোধ করে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার দর্শন করছেন।

পাহাড়পুর জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম আরজু বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ঈদে দর্শনার্থী বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা এসেছেন। রাস্তায় রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা থাকায় এবার যানজট নেই। ঈদের ছুটিতে রেকর্ড পরিমাণ দর্শনার্থী আসবে বলে আশা করছি। তিনি আরো বলেন, দর্শনার্থীদের কথা বিবেচনা করে পাহাড়পুরের ২ নং প্রবেশ দ্বারও খুলে দেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছাউনি ও বেঞ্চ। এতে করে এই গরমে দর্শনার্থীরা খুব বেশি ক্লান্ত হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে