অক্টোবরে আসছে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি

প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৩; সময়: ১২:১৫ অপরাহ্ণ |
অক্টোবরে আসছে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঈশ্বরদী : চলতি বছর অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) পারমাণবিক জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে আনা শুরু হবে।

এরই মধ্যে রাশিয়াতে এই জ্বালানি উৎপাদন সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ চলছে।

আর এ প্রস্তুতি কাজ দেখতে আরএনপিপির প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া গেছেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

চলতি বছর অক্টোবরে এই প্রকল্পের পারমাণবিক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম আসার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী ইউরেনিয়ামের প্রথম ব্যাচটি আনার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২০ অক্টোবর।

এ ব্যাপারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, এটা একেবারে নির্দিষ্ট করে তো কিছু বলা যায় না। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব নিউক্লিয়ার জ্বালানি আনা শুরু হবে। তবে আমরা অক্টোবরে আশা করছি।

এদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ করবে রাশিয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টিভিইএল। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও টিভিইএল’র মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে।

এই প্রতিষ্ঠানটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইফ টাইম জ্বালানি সরবরাহ করবে। রূপপুর প্রকল্পের জন্য এই বিশেষায়িত জ্বালানি ইউরেনিয়াম রড রাশিয়াতে উৎপাদন করা হবে। এর পর সে জ্বালানি বাংলাদেশে আনা হবে।

এই জ্বালানি উৎপাদন সংক্রান্ত কার্যক্রম দেখতে গেল ১ মে রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী ও প্রকল্পের পরিচালক শৌকত আকবরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া গেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার এই জ্বালানি উৎপাদন সনদ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়া থেকে দেশে আনা ও প্রকল্পে নেওয়ার সময় কঠোর নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ে আন্তর্জাতিক পারমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) বিস্তারিত গাইড লাইনও রয়েছে।

সেটা অনুসরণ করে জ্বালানি বিমান বন্দরে এসে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে কঠোর নিরাপত্তায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর প্রকল্পে নেওয়া হবে।

এই নিরাপত্তার দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর যে যে বিভাগের সদস্যরা থাকবেন তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ও রয়েছে। সে সব বিষয়েও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান আরও বলেন, রাশিয়াতে পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনের প্রস্তুতির কাজ দেখতে রূপপুরের প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গেছেন।

জ্বালানি প্লেনে করে দেশে আনার পর কীভাবে তা প্রকল্পে নেওয়া হবে এবং সে সময় কঠোর নিরাপত্তায় করণীয় বিষয়ে আমাদের এখানেও প্রস্তুতি চলছে।

এছাড়া নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর্মি, পুলিশসহ যারা সম্পৃক্ত থাকবেন তাঁরা কীভাবে নিরাপত্তা দেবেন সে সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের বিষয় রয়েছে। এসব প্রস্তুতির কাজও চলছে।

এদিকে, রাশিয়ার প্রযুক্তি ও সার্বিক সহযোগিতায় দেশটির রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অধিকাংশ টাকাই ঋণ সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া। ইতোমধ্যে ঋণ দেওয়াও শুরু হয়েছে।

কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞায় মার্কিন ডলারে এই ঋণ পরিশোধে জটিলতা তৈরি হয়।

তবে রোসাটম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, ঋণ পরিশোধের বিকল্প হিসেবে ডলারের পরিবর্তে চীনা মুদ্রা ইউয়ানকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনার পর উভয়পক্ষের সংশ্লিষ্টরা একমত হয়েছে।

দুই ইউনিট বিশিষ্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৫ সালে উৎপাদনে যাওযার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে