অচলাবস্থা রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২০২১ সালের জুনে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন সারাফাত হোসাইন। পরের বছরই তিনি পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। কিন্তু নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় তাঁর পদোন্নতি আটকে আছে।
সারাফাত হোসাইনের মতো অন্তত ৮০ জন শিক্ষক নিয়মিত উপাচার্যের অভাবে পদোন্নতির অপেক্ষায় বসে আছেন। আবার উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণের জন্য অনেক শিক্ষক বিদেশে যেতে পারছেন না।
রুয়েটের শিক্ষকেরা বলছেন, শুধু শিক্ষকদের পদোন্নতি নয়, নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক-উভয় ক্ষেত্রেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গত ১০ মাসে একটিও সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ অবস্থায় অবিলম্বে নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগের জন্য দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপাচার্য না থাকায় নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম, পরীক্ষা বা ফলাফল প্রকাশ এখনও স্বাভাবিকভাবেই চলছে। তবে বিভিন্ন বিভাগের ল্যাবে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জাম (ইকুইপমেন্ট) কেনার প্রয়োজন পড়লেও গত ১০ মাস ধরে তা কেনা যাচ্ছে না।
এ ছাড়া প্রত্যেক বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বনভোজন, খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করে। নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় সেগুলো বন্ধ হয়ে আছে।
রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাইয়ের শেষে নিয়মিত উপাচার্য রফিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হয়। পরে ৩ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রুয়েটের জ্যেষ্ঠতম অধ্যাপক ও অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের ডিন মো. সাজ্জাদ হোসেনকে উপাচার্যের দৈনন্দিন কার্যসম্পাদনের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রুয়েটের অন্তত ৮০ জন শিক্ষক পদোন্নতিসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে মাসব্যাপী আন্দোলন করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত রোববার রাতে আন্দোলনের মুখে ‘চলতি দায়িত্ব’ পালনকারী উপাচার্য সাজ্জাদ হোসেন পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগের পর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শিক্ষকদের পদোন্নতির ব্যাপারে তাঁর কিছুই করার ছিল না। তিনি এটা করতে পারেন না। তিনি এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন।
তবে রুয়েটের অন্তত চারজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলছেন, চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য কিছু রুটিন দায়িত্ব পালন করা ছাড়া আর কিছু পালন করতে পারছিলেন না। এ কারণে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে না। অনেক সময় তাঁকে ক্ষমতা দেওয়া হলেও তিনি দায়িত্বপালনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
এ ছাড়া চলতি দায়িত্বের উপাচার্যের নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের পদোন্নতি হচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্যের পদত্যাগ ও নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
তিনটি বিভাগের সভাপতি বলেন, রুয়েট পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে এর আগে কখনোই এত দিন নিয়মিত উপাচার্যের পদ শূন্য ছিল না।
শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কেনাকাটা করার জন্য উপাচার্যের অনুমতি লাগে। তবে নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় একাডেমিক অনেক কাজ থমকে আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের একজন সদস্য বলেন, সামনে ভর্তি পরীক্ষা আছে। ওই সময়ে উপাচার্য না থাকলে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে। একাডেমিক কাউন্সিল সভায় পরীক্ষা কমিটি, ফলাফলসহ সমস্ত একাডেমিক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এগুলোর কোনোটাই চলছে না। কারণ, এগুলোর ক্ষমতা রুটিন উপাচার্যের ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, নিয়মিত উপাচার্য না থাকাতে কোনো অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল পুরোপুরি হয়নি। অতি জরুরি বিষয়ে কিছু সভা হয়েছে। তবে গত ১০ মাসে একটিও সিন্ডিকেট সভা হয়নি। বলতে গেলে রুয়েট অচল হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে তাঁর বিভাগে একটি প্রিন্টারের কার্টিজের দরকার পড়েছিল। সেটাও অন্তত ১০ বার বলে সেটি পাশ করিয়ে নিতে হয়েছে। রুটিন দায়িত্বে উপাচার্য জানেন না যে, কোনটা তাঁর কাজ। এভাবে বিভিন্ন বিভাগে নানা সমস্যা হচ্ছে।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক নজরুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, অনেক সময় চলতি বা রুটিন উপাচার্য অনেক দায়িত্ব চাইলেও পালন করতে পারেন না। উপাচার্য হচ্ছেন একটি প্রতিষ্ঠানের মাথা। তিনি না থাকলে স্বাভাবিকভাবে নানা রকম স্থবিরতা চলে আসে। ১৭ জুন থেকে রুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। তিনি আশা করছেন, এই সময়ের মধ্যেই সরকার উপাচার্য নিয়োগ দেবে।
এদিকে চলতি দায়িত্বে থাকা উপাচার্য সাজ্জাদ হোসেনের পদত্যাগপত্র মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবু ইউসুফ মিয়া মুঠোফোনে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বলেন, চলতি উপাচার্যের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি তাঁরা (মন্ত্রণালয়) পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছেন। এখনো অফিসিয়ালি তাঁদের কাছে যায়নি। পদত্যাগপত্র হাতে পেলে তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
রুটিন উপাচার্য দিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলে কি না, জানতে চাইলে আবু ইউসুফ মিয়া বলেন, রুটিন উপাচার্য সবকিছু পারেন না। একজন নিয়মিত উপাচার্য দরকার। তাঁরা সেই চেষ্টা করছেন। উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে দ্রুত রুয়েটের পরিস্থিতি ঠিক হবে বলে আশা করছেন তিনি। সূত্র- প্রথম আলো