ইতিহাস ঐতিহ্যের অনন্য ধারক কুসুম্বা মসজিদ

প্রকাশিত: ১৯-০৬-২০২৩, সময়: ১৫:২৭ |
Share This

আদিবা বাসারাত তিমা : সুলতানি আমলের পুরাকীর্তি নওগাঁর ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ। কুসুম্বা মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যকলার এক অনুপম নিদর্শন। এটি ধরে রেখেছে প্রায় সাড়ে চারশ বছরের পুরোনো মুসলিম ঐতিহ্য। বাংলাদেশের পাঁচ টাকার নোটে স্থান পেয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদের ছবি।

রাজশাহী বিভাগের উত্তরেই নওগাঁ জেলার অবস্থান। এটি বিভাগের বরেন্দ্রীয় অংশ। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের মান্দা ব্রিজের পশ্চিম দিকে চার’শ মিটার উত্তরে ঐতিহাসিক এই মসজিদের অবস্থান। কুসুম্বা মসজিদ আত্রাই নদীর পশ্চিমতীরস্থ নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার অন্তর্গত কুসুম্বা গ্রামের নাম অনুসারে পরিচিত।

নওগাঁ জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। স্থানীয়দের কাছে এর আরেক নাম কালাপাহাড়। কুসুম্বা মসজিদকে তাই নওগাঁ জেলার ইতিহাস ও মুসলিম ঐতিহ্যের উজ্জ্বল নিদর্শন বলা হয়।

কুসুম্বা মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৫৮ ফুট লম্বা ৪২ ফুট চওড়া। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ দিকে রয়েছে ৭৭ বিঘা বিশিষ্ট একটি বিশাল দিঘি। গ্রামবাসী ও মুসল্লিদের খাবার পানি, গোসল ও অজুর প্রয়োজন মেটানোর জন্য এ দিঘিটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

মসজিদের সামনে থাকা তিনটি দরজার মধ্যে দুটি বড়, একটি অপেক্ষাকৃত ছোট। দরজাগুলো মসজিদের চার কোণায় রয়েছে চারটি মিনার। ছাদের ওপর রয়েছে মোট ছয়টি গম্বুজ। যা দুটি সারিতে তৈরি।

বাংলায় আফগানদের শাসন আমলে শূর বংশের শেষদিকের রাজত্বকালে জনৈক সবর খান বা সোলায়মান নামে ধর্মান্তরিত এক মুসলিম ব্যক্তি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন।

মসজিদটির মূল প্রবেশপথে শিলালিপি থেকে প্রমাণিত হয় এ মসজিদটি ৯৬৬ হিজরি (১৫৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দ) শের শাহ’র বংশধর আফগান সুলতান প্রথম গিয়াস উদ্দিন বাহাদুরের শাসনামলে (১৫৫৪-১৫৬০) নির্মিত। সে হিসাবে মসজিদটির বর্তমান বয়স ৪৬৫ বছর। কেন্দ্রীয় মেহরাবের উপরাংশ শেরশাহের শাসনামলে নির্মিত।

বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে রাজশাহী জেলা পরিষদের ওভারশিয়ার সুরেন্দ্র মোহন চৌধুরী কুসুম্বা গ্রামের প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি শিলালিপি আবিষ্কার করেন। শিলালিপিটিতে মসজিদটি সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। শিলালিপিটি বর্তমানে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী বরেন্দ্র জাদুঘরে রয়েছে।

১৮৯৭ সালের এক ভূমিকম্পে কুসুম্বা মসজিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষিত। বছরের যে কোনো মৌসুমে দর্শনার্থীরা ঐতিহাসিক এই কুসুম্বা মসজিদ দেখার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

তবে মসজিদটি ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও প্রয়োজনীয় নজরদারির অভাবে ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে ওঠেনি।

কুসুম্বা মসজিদকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে নওগাঁ জেলা প্রশাসন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
উপরে