রাজশাহীতে আছেন একজন লিটন
মামুন রশিদ : উত্তর বঙ্গের প্রাচীন শহর রাজশাহী। এই শহরের মাটি ও আলো-বাতাসে বেড়ে উঠেছেন তিনি। জন্ম নিয়েছেন রাজনৈতিক পরিবারে। বাবা ছিলেন জাতীয় নেতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এএইচএম কামারুজ্জামান। তাঁরই ছেলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। রাজশাহীর মাটি-মানুষের সঙ্গে লিটন পরিচয়ে মিশে আছেন তিনি। বাবার মত তিনিও জাতীয় রাজনীতিতে পৌছেছেন আজ সগৌরবে।
ইচ্ছে করলে রাজশাহী ছেড়ে রাজধানীতে রাজনীতির প্রসার ঘটাতে পারতেন অনায়াসে। এখনো সে সুযোগ রয়েছে তাঁর। তবে মাটির টান বলে একটি কথা আছে। সেই টানেই থেকে গেছেন রাজশাহীতে। স্বপ্ন তার রাজশাহী গড়ার। মনের মত শহরকে ফুটিয়ে তোলা। সাজানো-গোছানো শহরে পরিনত করার। তাতেই ব্রত খায়রুজ্জামান লিটন। তার প্রমাণ দিয়েছেন বিগত ৫ বছরে। এক এক করে পরিপাটি করে তুলেছেন প্রিয় শহর রাজশাহীকে। একদিকে উন্নয়ন অন্যদিকে রাজনীতি দুটোই দক্ষভাবে সামলেছেন তিনি। শহর উন্নয়নে পাশাপাশি পুরো উত্তরাঞ্চলের রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে এ অঞ্চলে আওয়ামী রাজনীতিতে গতি বাড়িয়েছেন তিনি। তাঁকে ঘিরেই এখন উজ্জীবীত উত্তরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি।
রাজনীতির পাশাপাশি প্রিয় শহর রাজশাহীকে নিয়ে ভাবেন খায়রুজ্জামান লিটন। তাই রাজশাহীকে আরো উত্তম করে সাজানোর পরিকল্পনায় মত্ত তিনি। যে পরিবার থেকে উঠে এসেছেন এই খায়রুজ্জামান লিটন, সেখান থেকে তিনি বিলাশী জীবন-যাবন করতে পারতেন। সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে পড়াশোনা করাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। সাধারণত হালের রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানরা যখন বিদেশে পড়তে যান তখন খায়রুজ্জামান লিটন তার দুই কন্যাকে রাজশাহী থেকেই সুযোগ্য করে গড়ে তুলছেন। তার চিন্তা আসলে রাজশাহীর মানুষকে নিয়ে। রাজশাহী শহরকে নিয়ে। তাই রাজশাহীর মায়া তাকে ঘিরে রেখেছে। রাজশাহী থেকেই বিকশিত করছেন স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতি।
তাঁর রূপরেখায় রাজশাহী মহানগরী এখন বদলে যাওয়া এক শহর। উন্নয়ন-সৌন্দর্যে গেল ৫ বছরে বদলে গেছে শহরের রূপ। প্রশস্ত সড়ক, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নির্মল বায়ু, সবুজ আর ফুলে ফুলে সাজানো সড়ক বিভাজক, কারুকাজ, উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, দৃষ্টিনন্দন রাতের আলোকায়ন-এই নগরীকে করে তুলেছে আকর্ষণীয়। এ সবের নিপুণ কারিগর এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি রাজশাহীকে দিয়েছেন অনেক কিছু। রাজশাহীবাসী যা ভাবেন নি কোনো দিন তার আগেই রাজশাহীবাসীর মনেরমত করে এই শহরকে সাজিয়েছেন লিটন।
ইতিমধ্যে খায়রুজ্জামান লিটনের পরিকল্পনায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে দেশসেরা শহরে পরিণত হয়েছে রাজশাহী মহানগরী। এই নগরীকে সাজানোর সুনিপুণ কারিগর, আধুনিক রাজশাহীর রূপকার, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ২০০৮ সালে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হয়েই রাজশাহীতে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেন তিনি। ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার রাজশাহী সিটি করপোরেশরন মেয়র হওয়ার পর থেকে নিরলস পরিশ্রম, দূরদর্শী ও সুযোগ্য নেতৃত্বে রাজশাহীর আজকের এই খ্যাতি ও অর্জন।
হজরত শাহ মখদুম রূপোশ (রহ.) পূণ্যভূমি ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের স্মৃতি বিজরিত পদ্মা বিধৌত ৯৬.৭২ বর্গ-কিলোমিটার আয়তনের রাজশাহীতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হন শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য সন্তান এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ‘চল বদলে দেই’ এই অনন্য স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৮ এর নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেয়রকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শপথের একমাস পর ৫ অক্টোবর শতকোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
দায়িত্ব নিয়েই নগরপিতা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও রাজশাহীকে একটি পরিচ্ছন্ন, উন্নত ও বাসযোগ্য মডেল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন। শুরুতেই সিটি কর্পোরেশনে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন মাসের শুরুতে প্রদান করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন লিটন। এরপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন নগরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নের দিকে। তার গৃহীত পদক্ষেপে ধীরে ধীরে রাজশাহী পরিণত হয়ে উঠে সবুজ আর ফুলেল নগরীতে। ২০১৬ সালে বাতাসে ক্ষতিকর ধূলিকণা কমানোয় বিশ্বের সেরা শহরে নির্বাচিত হয় রাজশাহী। পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ততীয়বারের মতো অর্জন করেছে জাতীয় পরিবেশ পদক-২০২১। দেশের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে ‘এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি সিটি অব দ্য ইয়ার সম্মাননা’-২০২০ অর্জনের খ্যাতিও রয়েছে এই নগরীর।
মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নিরলস প্রচেষ্টায় রাজশাহীর যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে এসেছে আমূল পরিবর্তন। প্রধান সড়কগুলোকে চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। নগরীর বুধপাড়া এলাকায় রেলক্রসিং এ নির্মিত হয়েছে রাজশাহীর প্রথম ফ্লাইওভার। সেখানে অবশিষ্ট দুই লেনের আরেকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নগরবাসীর চলাচল নির্বিঘ্ন করতে আরো ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে ৫টি প্রস্তাবিত ফ্লাইওভারের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে সর্বপ্রথম টানেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
নগরীর আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় থেকে বিহাস পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটারের ফোরলেন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত বাইসাইকেল লেনসহ আধুনিক চারলেন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে বহুল প্রতিক্ষিত আলুপট্টি হতে তালাইমারী পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক। নগর ভবন থেকে রাণীবাজার, মণিচত্বর থেকে সদর হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত অনেক রাস্তা নাগরিকদের সুবিধার্থে প্রশস্ত করা হয়েছে। প্রতিটি সড়কের পাশে প্রশস্ত ড্রেন, ফুটপাত এবং সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড তৈরি করা হয়েছে। এখনো নগরীর বিভিন্ন ড্রেন, ফুটপাত ও সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।
উপশহর থেকে নগরভবন ও রাণীবাজার থেকে সাগরপাড়া সড়ক প্রশস্তকরণ, রেলস্টশন থেকে ভদ্রা হয়ে তালাইমারিসহ মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ৩০টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন সড়কের কার্পেটিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ডপর্যায়ে রাস্তা, ড্রেনসহ অবকাঠামো উন্নয়ন চলমান রয়েছে। নগরীর তালাইমারি থেকে কাটাখালি সড়ক ছয়লেনে উন্নীতকরণ, বন্ধগেট থেকে সিটি হাট ও ভদ্রা রেলক্রসিং থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়ক অযান্ত্রিক লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। নগরীর ১৯নং ওয়ার্ডে নির্মাণ করা হচ্ছে শেখ রাসেল শিশুপার্ক।
এখানেই শেষ নয়, থেমে থাকা বহুতল বাণিজ্যিক ভবনগুলোর কাজ দ্রুত গতিতে শেষ করতেও তিনি গ্রহণ করেন যথাযথ উদ্যোগ। সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালীকরণ, শিল্পায়ন ও বাণিজ্যের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি, মহানগরীর আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর আওতায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উদ্যোগী সংস্থার অর্থায়নে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কার্যক্রম অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সোনাদিঘী ১৬ তলা ‘সিটি সেন্টার’ চালু হয়েছে। আটতলা ‘স্বপ্নচূড়া প্লাজা’ অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে ও আটতলা ‘দারুচিনি প্লাজা’ নির্মাণ কাজ চলছে। মুড়িপট্টিতে ১০তলা বৈশাখী মার্কেটের অবকাঠামোর কাজও সম্পন্ন হয়েছে। পাঁচতলার বিলসিমলা সুপার মার্কেটের অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। রেশমপল্লী মার্কেটের কাজ সম্পন্ন শেষে দোকান বরাদ্দ করা হয়েছে।
নগরীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন করা হয়েছে। পদ্মাপাড়ের বিনোদন কেন্দ্রকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে বিচ বাইক ও বিচ চেয়ার চালু করা হয়েছে। অচিরেই নগরবাসী বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের সুফল ভোগ করবে।
নাগরিক সেবা জনগণের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। নগর ভবনে স্থাপন করা হয়েছে কন্ট্রোল এন্ড কমান্ড সেন্টার থেকে নগরীকে মনিটরিং করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের হট লাইনে কল করে নাগরিকরা নিতে পারবেন বিভিন্ন সেবা, জানাতে পারেন বিভিন্ন সমস্যার কথাও। এছাড়া ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সহজেই নাগরিকদের সঙ্গে যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
নাগরিক সেবা জনগণের দাঁড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে নগরীকে চারটি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আয়তন প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন, আরো নতুন প্রকল্প গ্রহণসহ নানাবিধ উন্নয়নের মাধ্যমে আগামীতে রাজশাহী আরো আধুনিক, নিরাপদ, বাসযোগ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সেরা শহরে পরিণত হবে। এ জন্য চায় নগরবাসীর সহযোগীতা।
অগামীকাল রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এবারো তিনি প্রার্থী হয়েছেন। চলমান উন্নয়নের ধারা তরান্বিত করার পাশাপাশি এবার তিনি জোর দিয়েছেন কর্মসংস্থানে। তাই তাকে নিয়েই ভাবনা বেড়েছে ভোটারদের। আগেই বলা হয়েছে, লিটন রাজশাহীবাসীকে অনেক দিয়েছেন। এবার তাকে ভোটরদের দেওয়ার পালা। তাই আসুন আগামীকাল বুধবার রাজশাহীর অগ্রযাত্রা গতিশীল করতে সম্মিলিতভাবে নৌকাকেই বেছে নিই। নৌকাকেই ভোট দিই। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করি। তার নেতৃত্বেই গড়ে তুলি কর্মমূখর চঞ্চল ও চির সবুজ মহানগরী আমাদের রাজশাহী।
লেখক- সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন