চারঘাট বাসুদেবপুর স্কুলে ৫০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৩; সময়: ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ |
চারঘাট বাসুদেবপুর স্কুলে ৫০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ৪ নম্বর নিমপাড়া ইউনিয়নের ফুলতলা বাসুদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ৪ টি পদে মোট ৫০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

(২১ জুন) বৃহস্পতিবার চারঘাট ফুলতলা বাসুদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়া, পিয়ন, নৈশ প্রহরী পদে ও অফিস সহকারি পদে মোট ৪ জন প্রার্থীর কাছে থেকে বিপুল পরিমান অর্থের বিনিময় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসময় চারঘাট থানা পুলিশের উপস্থিতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ন করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানান গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ম্যনেজিং কমিটির সভাপতি আশরাফ প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমানের আপন বড় ভাই। তারা দুই ভাই যোগসাজশ করে বিদ্যালয়ের ৪ টি পদে নিয়োগ বানিজ্যের প্রক্রিয়া চালাচ্ছিলেন র্দীঘদিন যাবত। তাদের দীঘদিন যাবত এমন কান্ডে চড়ম ক্ষুব্ধ ছিলো স্থানীয়রা। এর আগে বিদ্যালয়ের আয়া, পিয়ন, নিরাপ্তা প্রহরী ও অফিস সহকারি পদে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন পত্রীকায়। তবে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির পছন্দের প্রার্থীরা শুধু ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেছেন। গত বৃহস্পতিবার ৪টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যক্রমের সময় এলাকাবাসী বাধা প্রদান করতে না পারে এবং কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সিষ্টি করতে না পারে এ জন্য থানা পুলিশের উপস্থিতিতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা প্রার্থীদের কাছে থেকে হাতিয়ে নিয়ে ৪ টি পদে নিয়োগ বানিজ্যে সম্পূর্ন করেন।

স্থানিয় সূত্রে জানা গেছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় বৃহস্পতিবার স্কুলে নিয়োগ দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা প্রহরী পদে রামচন্দ্রপুর গ্রামের তারেকুল ইসলামকে, আয়া পদে নিয়োগ পেয়েছেন ফুলতলা বাগমারি গ্রামের রঞ্জিত কুমারের মেয়ে তিথী রানী, পিয়ন পদে নিয়োগ পেয়েছেন একি এলাকার নয়ন কুমার ও বাঘা হরিণা গ্রামের এক যুবক অফিস সহকারি পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্য নিরাপ্তা প্রহরী পদে ১০ লাখ, আয়া পদে ১০ লাখ, পিয়ন পদে ১০ লাখ ও অফিস সহকারি পদে ২০ লাখ টাকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি হাতিয়ে নিয়ে তাদের নিয়োগ দিয়েছেন বলে সাংশ্লিট সূত্রে জানা গেছে। অর্থের বিনিময় বিশাল এ নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনা এলাকায় জানা জানি হলে এলাকাবাসীর মধ্যে চড়ম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।

আরো জানা গেছে, বিদ্যালয়ে সম্প্রতি ৪ টি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার বিপুল টাকার বিনিময়। এসব পদে প্রধান শিক্ষক ইচ্ছেমতো কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের পরিক্ষা নিয়ে বিপুল টাকার বিনিময় নিয়োগ দিয়েছে। আয়া, পিয়ন, নৈশ প্রহরী এ তিনটি পদে প্রতিটি প্রার্থীর কাছে ১০ লাখ টাকা করে নেয়া হয়। এবং অফিস সহকারী পদে যে নিয়োগ পেয়েছে তার কাছে থেকে বিভিন্ন সময় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকার একাধিক মানুষ। এর আগে প্রধান শিক্ষক এমনভাবে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন যেন চারঘাট উপজেলার কেউ জানতে না পারে। ৪ ‍টি পদে গোপনে তার পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে থেকে বিপুল পরিমানের টাকা নিয়ে তাদের শুধু আবেদন করার সুযোগ করে দিয়ে প্রধান শিক্ষক বৃহস্পতিবার তাদের নিয়োগ সম্পূর্ন করেছে।

জানা গেছে, রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ৪ নম্বর নিমপাড়া  ইউনিয়নের ফুলতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল আলম। তিনি বাসুদেবপুর গ্রামের মৃত আজিমুদ্দিনের ছেলে। ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সময় থেকে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার কাছের মানুষ দিয়ে ম্যনেজিং কমিটি গঠন করে ইচ্ছেমতো স্কুল পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ম্যনেজিং কমিটির সভাপতি আশরাফ আলী প্রধান শিক্ষকের আপন বড় ভাই। তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ, সম্পদ আত্মসাতসহ নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইচ্ছেমতো বিদ্যালয় পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে ।

সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে ১ টি, আয়া পদে ১টি, ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে ১টি ও অফিস সহকারি পদ ১ টি শূণ্য ছিলো। এসব পদে গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম দীর্ঘদিন যাবত করছিলেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। গত ২১ জুন বৃহস্পতিবার স্কুলে আয়া পদে, নিরাপত্তা প্রহরী পদে, পিয়ন পদে ও অফিস সহকারি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যক্রম গোপনে অনুষ্ঠিত হয়। চারঘাট থানা পুলিশের উপস্থিতিতে (২২ জুন) বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটি থাকলেও  দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৪টি পদে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পূর্ন করেন প্রধান শিক্ষক ও ম্যনেজিং কমিটির সভাপতি যোগসাজশে।

এ বিষয় চারঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল মামুন তুষার তার ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, চল্লিশ লক্ষ টাকা বাণিজ্যর মাধ্যমে নিমপাড়া ইউনিয়নের বাসুদেব পুর স্কুলের চারটি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে গোপনে আজকে। গোপনে সার্কুলার দেওয়ার কারণে যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করার সুযোগ টুকুও পাইনি। যারা টাকার ভাগ নিয়েছেন তাঁরাই সামনে নির্বাচন টা করে দিয়েন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল আলমের মুঠো ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

বিদ্যালয়ের ম্যনেজিং কমিটির সভাপতি আশরাফ আলীর মুঠোফোন যোগাযোগ করে নিয়োগ বানিজ্যের বিষয় জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন , নিয়োগের সময় চারঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয় কোন কথা বলতে চাই না আপনাকে।  এ বিষয় কোন কিছু জানার থাকলে স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে পারেন বলে ফোন কেটে দেন।

এ বিষয় চারঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, নিয়োগের বিষয় পুলিশের কোন দেখার বিষয় না। বৃহস্পতিবার নিয়োগ কার্যক্রমের সময় পুলিশের কোন উপস্থিতি ছিলো না বলে অস্বীকার করেন তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে